সোয়াইন ফ্লুঃ বৈশ্বিক হুমকি এবং জনসচেতনতাঃ
সোয়াইন ফ্লু একটি আতংকের নাম হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩ টি দেশের তিন হাজারের অধিক লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৮ জন মারা গেছে। এ রোগে মৃত্যুর হার ৫৩ শতাংশ। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের কোথাও এ রোগের সন্ধান পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশও এ রোগের ঝুঁকির ঊর্ধ্বে নয়। তবে আতংকিত না হয়ে এখন থেকেই সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় একে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
গত ২রা মে শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের স্বাস্থ্য ও জীবাণুবিদ্যা বিভাগের গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত 'সোয়াইন ফ্লুঃ বৈশ্বিক হুমকি এবং জনসচেতনতা' শীর্ষক সেমিনারে জানানো হয়, সোয়াইন ফ্লু একটি জুনুটিক রোগ। জুনুটিক রোগ হচ্ছে, এমন ধরনের রোগ যা যে কোনোও জন্তু (শুকর, পাখি ইত্যাদি) থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে মানুষ বা অন্য প্রাণীতে ছড়ায়। এ রোগের প্রাথমিক উৎপত্তি শুকর (সোয়াইন) থেকে। শুকর হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যা একই সঙ্গে পক্ষীকুল এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর শ্বষণ অঙ্গের বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং বাহির থেকে প্রবেশকৃত ভাইরাসসহ অন্যান্য জীবাণুকে ধারণ করতে পারে। এবং পরে তা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নতুন ভাইরাস তৈরি করতে পারে। এভাবে শুকর একসঙ্গে একইসময়ে একটি চক্রে (৪ থেকে ৮ দিন) ২৫৬ প্রজাতির সম্পূর্ণ নতুন ভাইরাস তৈরি করতে পারে যার অধিকাংশই আক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে। শুকর থেকে এ জীবাণু মানুষে এবং পরবর্তীতে তা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, রোগটির ভয়াবহতার মাত্রা ৫ এ (সর্বোচ্চ লেভেল ৬) পৌঁছেছে যা মানুষের জন্য চরম ভীতিকর। দ্রুত এ ভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
অধ্যাপক ড. শামছুদ্দিন বলেন, বিশ্বের প্রায় সকল দেশে নৌ, স্থল ও বিমান বন্দরে ভেটেরিনারি ডাক্তাররা কমর্রত রয়েছেন, কিন্তু আমাদের দেশে এ সুযোগ না থাকায় সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী চিহ্নিত করতে সরকারকে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। শুধু সোয়াইন ও এভিয়ান ফ্লু ভাইরাস নয়, এ রকম আরও অনেক জটিল ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পৃথক বাজেটের মাধ্যমে অতি শিগগিরই নৌ, স্থল ও বিমান বন্দরে ভেটেরিনারি ডাক্তার নিয়োগ করা বেশ জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাসটির বিস্তৃতি রোধ করতে হলে এই মুহুর্তে সেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে, সেগুলো হলোঃ ১) আগামী ৩-৪ সপ্তাহ বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তির মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপ ভ্রমণ না করা।
২) মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপ থেকে কোনো ব্যক্তি (দেশি-বিদেশি) গত ৩-৪ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তাদের শারীরিক অবস্থার (উচ্চ তাপমাত্রা, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথা, বমি বমি ভাব ও শ্বাস কষ্ট) প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখা।
৩) যেহেতু ঐ১ঘ১ এবং ঐ৩ঘ২ সিজনাল ফ্লু হিসেবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশে বিরাজমান, সেহেতু উক্ত ভাইরাসদ্বয়ের সার্ভিলেন্স স্ট্যাডি (সার্বক্ষণিক তদারকি) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করা প্রয়োজন। (বিশেষ করে যেসকল এলাকায় শুকর পালন করা হয়, সে সকল এলাকায় শুকর ও শুকর পালনকারীদের)।
৪) সিজনাল ফ্লুতে আক্রান্ত যেকোনো ব্যক্তিকে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৫) যেহেতু অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত (ট্রান্সবাউন্ডারী) রোগের মতো সোয়াইন ফ্লু অত্যন্ত মারাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই কমপক্ষে আগামী ২ সপ্তাহ যেকোনো বিমান (লাতিন আমেরিকা, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে) বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময়ে এবং বিমান থেকে যাত্রী বাহিরে আসার আগে বিমানের বাইরে, ভিতরে ও প্রতিটি যাত্রীকে এন্টিভাইরাল স্প্রে করতে হবে।
৬) কোনো যাত্রী বিমান থেকে অবতরণ করার সময় শারীরিক পরীক্ষায় উচ্চ তাপমাত্রা, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথা, বমি বমি ভাব ও শ্বাস কষ্ট ধরা পড়লে তাকে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ বিমান বন্দরের কোয়ারেন্টাইন সেলে রাখতে হবে বা নিজ গৃহে অবস্থান করতে হবে।
অধ্যাপক ড. মোতাহার হোসেন মন্ডল বলেন, সাধারণত যুবকরাই বেশি এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তাই যুবকদের এ ব্যাপারে বেশি সচেতন থাকতে হবে।