হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার ১৮৯৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার গচিহাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন বাঙালি চিত্রশিল্পী। তিনি হেমেন মজুমদার বা এইচ. মজুমদার নামেও পরিচিত ছিলেন। পাশ্চাত্য রীতির ছবি এঁকে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। সিক্তবসনা সুন্দরী নারীর ছবি আঁকায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
ছেলেবেলা থেকেই তাঁর ছবি আকাঁর ঝোঁক ছিল। তাই ময়মনসিংহের সিটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় গিয়ে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার "গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্টে" ভর্তি হন। ১৯১১ সালে সরকারি আর্টস্কুল ছেড়ে কলকাতার "জুবিলী আর্ট স্কুলে" ভর্তি হন। সেখানে প্রায় চার বছর চিত্র অংকনে শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ভারতের বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে ভূয়সী প্রসংশা অর্জন করেন এবং পুরস্কৃত হন।
১৯১৯ সালে তিনি "ইন্ডিয়ান একাডেমী অব আর্ট" নামে একটি চারুকলা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন কলকাতার ২৪নং বিডন স্ট্রীটের বাসভবনে। শিল্পি ভবানীচরণ লাহা, যোগেশচন্দ্রশীল, যামিনী রায়, অতুল বসু প্রমুখ কতিপয় তরুণ শিল্পি এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হন। এখান থেকেই ১৯২০ সালের জানুয়ারিতে ত্রৈমাসিক মুখপত্র The Indian Academy of Art প্রকাশিত হয়।
১৯২১ সালে বোম্বে আর্ট একজিবিশনে "স্মৃতি" চিত্রটি প্রথম পুরস্কারস্বরূপ স্বর্ণপদক অর্জন করে।
১৯২১ সালে কলকাতার সোসাইটি অব ফাইন আর্টসে "পল্লীপ্রাণ" চিত্রটি প্রদর্শনীতে পুরস্কৃত হয়।
১৯২২ সালে মাদ্রাজ প্রদর্শনীতে "ঝঙ্কার" চিত্রটি পুরস্কৃত হয়।
১৯২৩ সালে বোম্বাই (মুম্বাই) প্রদর্শনীতে "কর্দমে" চিত্রটি পুরস্কৃত হয়।
কয়েক বছরের মধ্যই নানার পুরুস্কার প্রাপ্তির কল্যানে শিল্পি হিসেবে হেমেন্দ্রনাথের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাংলার বিভিন্ন মাসিক পত্রিকা ও সাময়িকীতে তাঁর চিত্র প্রকাশিত হতে থাকে।
সে সময়ে ভারতের রাজা মহারাজারা তাঁদের দরবারে ছবি আঁকার জন্য হেমেন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানাতেন। ১৯৩১ সালে কাশ্মীরের মহারাজা তাঁর দরবারে আমন্ত্রণ জানান। এরপর পাতিয়ালার মহারাজার সভায় হেমেন্দ্রনাথ মাসিক দুহাজার টাকা বেতনে শিল্পি হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য নিয়োজিত হন। পাতিয়ালার মহারাজার জন্য তিনটি চিত্রের সমাহারে একটি নয়নাভিরাম ‘পার্টিসন স্ক্রীন’ (Partition Screen) তৈরি করেন যা তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ শিল্পকৃতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বর্তমানে এই স্ক্রীনটি পাতিয়ালার মহারাজার চিত্রালয়ে সংরক্ষিত আছে। তাছাড়া পাতিয়ালায় অবস্থানের সময় তিনি জয়পুর, যোধপুর ও বিকানীরের রাজাদের বহু ফরমায়েসী চিত্র অংকন করেন।
১৯৪৮ সালের ২২ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।
তার আঁকা বিখ্যাত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য : স্মৃতি, মানসকমল, পরিণাম, অনন্তের সুর, সাকী, কমল না কন্টক ইত্যাদি।
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া ও বাংলাপিডিয়া
ছবি : গুগলের সাহায্যে বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৫