২১ জুলাই ১৯৭৬ কর্ণেল আবু তাহেরকে ফাঁসী দেওয়া হয় কিন্তু এতে তাঁর মৃত্যু হয়নি। কারণ বিপ্লবীর মৃত্যু হয় না, কখনই না। ব্যক্তি তাহেরকে আমি একজন বিপ্লবী মনে করি। নিজের জীব জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে নিজের রাজনৈতিক স্বত্ত্বার মধ্যে বসবাস করেন যিনি এবং শুধু তাইই না, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনে প্রাণ দিতে প্রস্তুত যে - সেইই বিপ্লবী। নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস, চিন্তার জন্য মরতে রাজী থাকা এটাই বিপ্লবী স্পিরিট; জীব জীবনের সীমা পেরোনো এক স্পিরিটের মানুষ। আমি বিপ্লবী তাহেরের চিন্তা কেমন ছিল সে বিচার করে তাকে বিপ্লবী বলছি না। তাঁর চিন্তা আসলেই বিপ্লব সংগঠিত করতে সক্ষম কি না, বিপ্লবী চিন্তা ছিল কি না মানে চিন্তায় মুরোদ ছিল কি না, চিন্তাটা বিপ্লবী কি না - সে বিচারে আমি যাই নাই, এটা সে মামলা নয়। ব্যক্তির স্পিরিট বিপ্লবী কিনা সেটাই মুখ্য বিচার্য। এই বিচারে কর্ণেল আবু তাহের দুনিয়ার বিপ্লবীদের মাঝে এক উচ্চ আসনের সৈনিক। এই অকুতোভয় বিপ্লবীকে আমি সালাম জানাই। বিপ্লবীর মৃত্যু নাই। যে জ্যান্তেমরা তাকে কে কী মৃত্যুভয় দেখাবে!
জীব জীবনের সীমা পেরোনো এক স্পিরিটের মানুষ তাঁকে ফাঁসীতে মারতে পারে কে? কিন্তু গতকাল ছিল এক কালো অন্ধকারের দিন। তাঁর মৃত্যু হলো, গত ২২ মার্চ ২০১১ আদালতের চত্তরে স্ত্রী, ভাই ও কিছু সহকর্মীর হাতে।
একজন রেভুলেশনারী, সামনে খাড়ানো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ওর বলপ্রয়োগের হাতিয়ার আইনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এসব কিছু তাঁর কাছে অগ্রহণযোগ্য, যার ভিতরে যে বসবাস করতে পারছে না ফলে বদলাবার জন্য লড়তে চায়, নিজে ও সকলকে মুক্তি দিতে চায়, ন্যায় ও ইনসাফ চায়। খোদ যে রাষ্ট্র ও আইন ব্যবস্থাকে সে উৎখাত করতে চায় সেই আইন দিয়ে তাঁর কাজ ও তৎপরতার ভালো মন্দ, স্পিরিট যাচাই করা যায় না, যাবে না।
তাই আজ পর্যন্ত এমন কোন বিপ্লবীর কথা দুনিয়ার জানা নাই যে বিপ্লবের জন্য স্পিরিটেড, আকাঙ্খায় পরিপুর্ণ, বিপ্লবের একশনে গিয়েছে, সফল অথবা ব্যর্থ হয়েছে - কিন্তু উপস্থিত চলতি কনষ্টিটিউশন ও এর অধীনস্ত আইন চোখে তাঁর এই কাজ ও তৎপরতা সন্দেহাতীতভাবে রাষ্ট্রদ্রোহীতা গণ্য হয় নি। এককথায়, বিপ্লব করার ইচ্ছা, চিন্তা, সংকল্প করা মানেই উপস্থিত চলতি কনষ্টিটিউশন ও এর আইনের চোখে রাষ্ট্রদ্রোহীতা, অপরাধ। তাই বিপ্লবের অপর নাম রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
ফলে কথা সোজা - হয় আমি বিপ্লবী ফলে উপস্থিত আইনের চোখে দেখা অপরাধের ধারণা আমি মানি না কেয়ার করি না কারণ বিজয়ী বিপ্লব ও বিজয়ী জনগণ আমাকে বিপ্লবোত্তর নতুন কনষ্টিটিউশন ও এর অধীনস্ত আইন দিয়ে আমাকে বরণ করে নেবে। আর নইলে আমি বিপ্লবী নই, চলতি কনষ্টিটিউশন ও এর অধীনস্ত আইন চোখে আমি এক অনুগত নাগরিক। আর, তবু মধ্যবিত্ত জোসে বিপ্লবের খায়েস যদি তাঁর থাকে তবে তা ত্যাগ করাই উত্তম। যার উপস্থিত কনষ্টিটিউশন ও এর অধীনস্ত আইন চোখে রাষ্ট্রদ্রোহী গণ্য হতে অস্বস্তি আছে, রাষ্ট্রদ্রোহী শব্দে অভিযোগ শুনলেই আঁতকে উঠেন সে কোনদিনই বিপ্লবী নয়, হতে পারবে না। যেমন, শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ অথবা কথিত স্বাধীনতা ঘোষণা পাকিস্তান কনষ্টিটিউশন ও এর অধীনস্ত আইন চোখে প্রশ্নাতীতভাবে রাষ্ট্রদ্রোহীতা। এবং তা গণ্য হতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের জনগোষ্ঠি, জনগণের চোখে, বাংলাদেশ চলতি কনষ্টিটিউশন ও এর অধীনস্ত আইন চোখে শেখ মুজিব আমাদের হিরো। সন্দেহতীতভাবে তিনি আমাদের। একের মধ্যে আমাদের সবার। বাংলাদেশে লেনিনকে পছন্দ করেন এমন অনেকে আছেন শুনা যায়। লেনিনের বিপ্লব রাশিয়ার জারের কনষ্টিটিউশন ও এর অধীনস্ত আইন চোখে - তা লেনিনের এক রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ। লেনিন রাষ্ট্রদ্রোহী। রাষ্ট্রদ্রোহী না হলে বিপ্লবী হবার উপায় নাই।
এটাকে আমাদের চিন্তার মধ্যে এক প্যারাডক্স বা ধন্ধের মত লাগে এজন্য যে কখন আমরা কোন ঘটনাকে রাজনৈতিক দিক থেকে বিচার বিবেচনা করতে বসে গেছি, আর কখন আইনের জগতে বসে ঐ ঘটনার লিগালিটি বা আইনগত ভিত্তিতে আইনী বিচার বিবেচনা করছি এটা একেবারেই খেয়াল করি নাই। শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ অথবা কথিত স্বাধীনতা ঘোষণা – এই কাজের রাজনৈতিক বিচার যদি করি তবে ফলাফলে আমরা পাব এটা সঠিক কাজ। পাকিস্তান আমলে বা এখনকার বাংলাদেশে বসে রাজনৈতিক বিচারে এটা সঠিক কাজ। কিন্তু পাকিস্তান আইনী বিচারে বিচারকের চোখে এটা অবৈধ এবং অপরাধমুলক কাজ।
যে কোন সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক ও আইনী - এই দুই দিক থেকেই কোন ঘটনা বিচার করতে পারেন। কিন্তু সর্তক হুশ থাকতে হবে যে সে রাজনৈতিক চোখ খুলে বিচারে বসেছে না আইনের চোখ খুলে। বেখেয়াল থেকে একটার সাথে আর একটা মিলানো যাবে না। ফলাফল উলটাপালটা আসবে।
সাধারণ মানুষ পারে কিন্তু ঐ মানুষ কোন আইনী ব্যবস্থায় যখন বিচারকের আসনে বসে তখন এর প্রথম শর্ত হলো, তাঁর রাজনৈতিক চোখ বন্ধ রাখতে হবে, বাসায়ও রেখে আসতে পারেন। কারণ, কোন লিগ্যাল সিষ্টেম বা আইনী ব্যবস্থা বিচারককে রাজনৈতিক চোখে বিচার বিবেচনার কর্তৃত্ত্ব দেয় না। এটা বিচার ব্যবস্থার কাজও না। কিন্তু যেমন শেখ মুজিব হত্যা ধরণের মামলা, এর আইনী বিচার করতে বসে বিচারককে প্রভাবিত করতে বিচারকের রাজনৈতিক চোখ উস্কানোর চেষ্টা করতে কোন উকিল রাজনৈতিক বিচারের পয়েন্ট আর আইনী বিচারের পয়েন্ট দুটোই মিশাল দিয়ে শুনানীতে নিজের বক্তব্য রাখতে পারেন। এছাড়া মামলার ঘটনাটা রাজনৈতিক বলে ঘটনা বর্ণনার সময় রাজনৈতিক দিক সবসময় চাইলেও এড়ানো যাবে না। এই পরিস্থিতিতে বিচারক কী করবেন? বুদ্ধিমান বিচারক (আইনের করিডোর এটাকে “উইসডম অফ এ জাজ” বলা হয়) রাজনৈতিক পয়েন্টগুলো (তা যতই যুক্তিযুক্ত হোক না কেন) মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবেন আর কেবল মনোযোগ নিবদ্ধ করবেন আইনী পয়েন্টগুলোতে। রাজনৈতিক বিচারের চোখে কোন ঘটনার সঠিক-বেঠিক বা ন্যায্য-অন্যায্যের বিচার করতে বসা ঐ চেয়ারের কাজ না। আর এটা কেবল বিচারকের নিজের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর বিষয় না, আমাদের বিচার সিষ্টেমকে একটা শক্তিশালী ধারার বিচার পদ্ধতিতে বিকশিত করার জন্য গুরুত্ত্বপুর্ণ প্রশ্ন এটা।
সমাজের রাজনৈতিক প্রশ্ন, স্বার্থ বিরোধ মীমাংসার দায়- কর্তব্য, রায় দেয়া আদালতের কাজ নয়, সেটার জায়গা আদালতের বাইরে সমাজের রাজনৈতিক জগত করিডোরে; সেখানকার লড়াই সংগ্রামের ভিতর দিয়ে কোন রাজনীতির সঠিক-বেঠিক বা ন্যায্য-অন্যায্যের বিচার, মীমাংসা, আপোষ এলায়েন্স ইত্যাদিতে তা নিরসিত হবে। বিচারক পেশার এই গুরুত্ত্বপুর্ণ দিকটা যার জানা হয় নাই অথচ বিচারক, তিনি সমাজের জন্য বিপদজনক। “উইসডম অফ এ জাজ” এই গুণের অধিকারী – এই মৌলিক গুণ তিনি অর্জন করতে পারেননি। এতে তিনি শুধু বিচার সিষ্টেমকে একটা শক্তিশালী ধারার বিচার পদ্ধতিতে বিকশিত করতে বাধা হলেন তাই নয় একই সঙ্গে ঐ সমাজের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে যেখানে রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামের ভিতর দিয়ে কোন রাজনীতির সঠিক-বেঠিক বা ন্যায্য-অন্যায্যের বিচার, মীমাংসা, আপোষ এলায়েন্স ইত্যাদিতে তা নিরসিত হওয়ার কথা - তাকেও ক্ষতিগ্রস্থ দুর্বল করলেন। বিদেশী স্বার্থের হামলার মুখে নিজেদের রাজনৈতিক সমাজকে বিভক্তির বিপদে ফেলে রাখার ব্যবস্থা করলেন।
রাজনৈতিক চোখে বিচার করতে না পারার কারণে বিচারকের চেয়ারের বাধা সীমাবদ্ধতায় যদি কোন বিচারকের দমবন্ধ লাগে, অস্থির হয়ে উঠেন তবে সেক্ষেত্রে তার উচিত হবে চেয়ার ত্যাগ করে আদালতের বাইরে সমাজের রাজনৈতিক করিডোরে তৎপর হওয়া, নাম লেখানো। সেটাই নিজেকে মুক্ত করার সঠিক ও উপযুক্ত জায়গা। রাজনীতি আর আইনের করিডোরের ফারাক বজায় রাখতে পারি না বলে আমরা দলবাজ বিচারক বলে অভিযোগ করতে শুনি।
লুৎফা তাহের রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রথম আলোকে বলছেন, ‘আজ আমি আনন্দিত, গর্বিত। স্বামীর কলঙ্কমোচন হয়েছে’। কিন্তু আসলেই কী তাঁর স্বামী কর্ণেল তাহের কলঙ্কিত ছিলেন? কলঙ্ক মানে কী? রাষ্ট্রদ্রোহীতা অপরাধের অভিযোগ ছিল তাই? কোন বিপ্লবীর উপর রাষ্ট্রদ্রোহিতার চার্জ কী বিপ্লবীর কাছে কলঙ্কের?
রাষ্ট্রদ্রোহিতা একটা লিগাল টার্ম। ওর অর্থ একটা সুনির্দিষ্ট কনষ্টিটিউশন, তার আইন ও পেনাল কোডের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাজনৈতিক বিচার বিবেচনার শব্দ এটা নয়। বাংলাদেশের পেনাল কোডের ৫০০ থেকে ৫০২ ধারার মধ্যে ওর লিগাল অর্থ পাওয়া যায়। কাঊকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা মানে ঐ আইন বা লিগাল কোড যে রাষ্ট্রের সাপেক্ষে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্রোহী সে। এর বাইরে রাষ্ট্রদ্রোহী কথার কোন মানে নেই। শেখ মুজিব সুনির্দিষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র ওর কনষ্টিটিউশন, তার আইন ও পেনাল কোডের সীমার মধ্যে - এই আইনী চোখে রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন। এখন এই রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ কী শেখ মুজিবের কলঙ্ক ছিল? নাকি আসলে এটাই তাঁর মুকুট, রাজতিলক? বিপ্লবী মাত্রই উপস্থিত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদ্রোহী তাকে হতে হবে, নইলে আর সে বিপ্লবী কেন! ১৯৭৬ সালের তথাকথিত বিশেষ সামরিক আদালতে কর্নেল আবু তাহের যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন আজকের প্রথম আলোতে যা পুনপ্রকাশিত হয়েছে ওখানে দেখা যাবে তাহের স্পষ্ট করেই বলছেন, “৭ নভেম্বর ভোররাত একটায় সিপাহিঅভ্যুত্থান শুরু” করতে তিনি গিয়েছিলেন। স্বভাবতই, একজন বিপ্লবী হিসাবে তিনি জানতেন, এটা উপস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রের কনষ্টিটিউশন, তার আইন ও পেনাল কোডের দুমড়ে মুচড়ে উৎখাত, বদল করার কাজে তিনি রত হতে যাচ্ছেন। ফলে এর চোখে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী বিবেচিত হবেন। এটাও তিনি জানতেন এটা কলঙ্ক না, বিপ্লবীর মুকুট, রাজতিলক। যে কোন বিপ্লবী মাত্রই এটা তাঁর মুকুট, গৌরবের বিষয় বলে মানবেন। কারণ এটা না মানার অর্থ তিনি আসলে বিপ্লবী নন। আজকে লুতফা তাহেরের চোখে এটা যদি কলঙ্ক হয় তবে আসলে তিনি তাহেরের “৭ নভেম্বর ভোররাত একটায় সিপাহিঅভ্যুত্থান শুরু” করতে যাওয়ার রাজনৈতিক পদক্ষেপ তৎপরতাকে নিন্দা করছেন, ডিসওন করছেন দায় নিতে চাচ্ছেন না, এর বিরোধী তিনি। অর্থাৎ সোজা কথায় তাহেরের বিপ্লবী পরিচয়, বিপ্লবী স্পিরিটের বিরোধী তিনি – এটাই নতুন করে জানা গেল।
যদি তাহেরকে লুৎফা তাহের কেবল স্বামী হিসাবে বা তাদের সন্তানেরা কেবল পিতা হিসাবে নয় একজন বিপ্লবী হিসাবে বুঝতে পেরে থাকেন ভালবাসেন, একজন বিপ্লবী মানে কী, কী তাঁর স্পিরিট তা অনুভব করে থাকেন তবে এই হীনমন্নতা থেকে তাদের বেরিয়ে আসতেই হবে, বিপ্লবীর মুকুট, রাজতিলক ধুলায় গড়াগড়ি হতে দিবেন না। তিনি যা বলেছেন তা বুঝেশুনে বলেছেন না কেবল স্বামী হিসাবে বিবেচনায় তাহেরের প্রতি আবেগবশত করছেন এটা যেন তিনি আবার ভেবে দেখেন সেই আবেদন রাখব।
তাহলে আদালতে যেটা ঘটলো সেটা কী?
আদালত বললো, যে রাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কনষ্টিটিউশন, তার আইন ও পেনাল কোডের নিয়ম রীতি ক্ষমতার মধ্যে সে আদালত, সেই আদালত আইনের বিচারে ১৯৭৬ সালের তথাকথিত বিশেষ সামরিক আদালত যা কর্নেল আবু তাহেরকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসীর রায় দিয়েছিল সে নিজেই অবৈধ, বেআইনী। ফলে ঘটনার (আইনী) বিচার বলতে কিছুই সেখানে ঘটেনি। কিন্তু একই সঙ্গে কোর্ট এটাও ফয়সালায় যায়নি যে “৭ নভেম্বর ভোররাত একটায় সিপাহিঅভ্যুত্থান শুরু” করা অপরাধ ছিল কীনা বা তাহের দোষী না নির্দোষ। আমরা কেবল এতটুকুই জানতে পারলাম ঐ সামরিক কোর্ট ফলে ওর বিচার ছিল আন-কনষ্টিটিউশনাল।
এই ঘোষণা শুনে আমরা এখন কী খুশি হবো? না একেবারেই না। বরং এটা গভীর শঙ্কিত হওয়ার বিষয়। এখন যা বলব তা আইনী পয়েন্ট বা যুক্তির দিক থেকে বলা কথা। “৭ নভেম্বর ভোররাত একটায় সিপাহিঅভ্যুত্থান শুরু” করার যে অভিযোগ তাহেরের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল এর বিচার করার তথাকথিত সামরিক আদালত নিজে অবৈধ হয়ে গেছে। কিন্তু এতে সেই একই অভিযোগে এখন প্রচলিত সিভিল আদালতে মামলা দায়েরের রাস্তাও খুলে গেছে। রাষ্ট্র বা সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধ যে কেউ এখন সেনাবাহিনীতে “সিপাহিঅভ্যুত্থান শুরু” - সেই একই অভিযোগে মামলা দায়ের করতে পারবে। স্বভাবতই তাতে চার্জ গঠন হবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারায়। যা প্রমাণ না হওয়ার কোন কারণ দেখা যাচ্ছে না। তাহেরের ষ্টেটমেন্টই যথেষ্ট। আর এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আর মামলা দায়েরের রাস্তাও খুলে গেছে বললাম এজন্য যে বাংলাদেশের কনষ্টিটিউশন আইনে একই অভিযোগে দুবার বিচার করা ও শাস্তি দেয়া যায় না। ফলে আগে তা নামকাওয়াস্তে প্রহসনের বিচার হলেও সেটাই আবার অন্য দিক থেকে এক রক্ষাকবচ ছিল। ঐ তথাকথিত বিচারের কারণে কেউ আবার নতুন করে এখনকার প্রচলিত আদালতে বিচার চাইতে যেতে পারত না। কিন্তু সে বিচার অবৈধ হয়ে যাবার কারণে এখন সে রাস্তা খুলে গেল। এটা এখন এমন হোল যেন ইনু সাহেব বলছেন, আমরা একটা “৭ নভেম্বর ভোররাত একটায় সিপাহিঅভ্যুত্থান শুরু” করেছিলাম বটে যার আইনী অভিযোগ হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার ও শাস্তি মৃত্যুদন্ডের, কিন্তু আমরা সেই আদালতকে অবৈধ বলে প্রমাণ করে ফেলেছি এখন আমাদেরকে একটা বৈধ আদালতে বিচারের ব্যাবস্থা করেন।
এক কুমারী মেয়ে লাইগেশনের ডাক্তারকে মিথ্যা করে বলেছিল যে সে কয়েক সন্তানের মা। ডাক্তার তাঁর মা হওয়া বন্ধ হওয়ার লাইগেশন অপারেশন করে দিয়েছিল ও সাথে বরাদ্ধ ১৭৫ টাকা আর একটা শাড়ি দিয়েছিল। সেই মেয়ে এরপর তার বন্ধুদের কাছে হেসে ঢলে পড়ে গল্প করছিল ‘বোকা’ ডাক্তারকে কীভাবে সে বেকুব বানিয়েছিল। এখন বেকুবী কাজটা করেছিল কে - ডাক্তার না কুমারী মেয়েটা?
গত ২২ মার্চ ২০১১ ছিল তাহের এই বিপ্লবীর বিপ্লবী স্পিরিট মৃত্যুর দিন। ২১ জুলাই ১৯৭৬ এর ফাঁসী যা করতে পারেনি। একইসাথে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বা লিগ্যাল সিষ্টেম এপর্যন্ত খুড়িয়ে হামাগুড়ি দিয়ে যতটুকু যা এগিয়েছে এর জন্য এক সেট ব্যাক, কালো দিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:০৬