গত পর্বে দেখেছি,কোন এক মাসল কে বিল্ড করা মানে শরীরকে সিগ্ন্যাল দেয়া।এই বলে সিগন্যাল দেয়া যে ইদানিং এই মাশলের উপর যে স্ট্রেস স্ট্রেইন আসছে তা সহ্য করা বর্তমান ফাইবার গুলোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফাইবার বা সুতো গুলো মোটা কর। উদাহরণ হিসাবে চেস্ট মাসল এর কথা বিবেচনা করি। উদাহরন হিসাবে এটা নিবার কারণ হলো এই ছাতি নিয়ে যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাই বেশ সচেতন। কলেজে আমার এক বন্ধু ছাত্রীদের সামনে দিয়ে যাবার সময় বুক ভরে দম নিয়ে আটকে রাখতো যাতে সিনা চওড়া দেখায়। মাসল বিল্ড আপ করে ফেললে আপনার এতো কসরতের আর দরকার নাই। মেডিকেল সায়েন্সে এর নাম পেক্টোরেলিস মেজর। এই মাসল বিল্ড করার সর্বোত্তম ওয়ার্ক আউটের নাম বেঞ্চ প্রেস। নীচে ছবি দেয়া হলো।
কিভাবে শুরু করবো?প্রথমে নিজের ওজন বা ওয়েট নেবার ক্ষমতাকে খুব ভাল করে বুঝতে হবে। কোন তাড়াহুড়া চলবেনা। মনের মধ্য থেকে আশে পাশের সকলকে দেখিয়ে দেয়া বা শো অফ করার যে কোন ধরনের কমপ্লেক্স ঝেড়ে মুছে পরিস্কার করে ফেলুন। ছবিতে লোকটি যেটা উত্তোলনের চেষ্টা করছে তার নাম বারবেল। শক্ত রডের দুপাশে লোহার চাক্তি জোড়া দিয়ে ওয়েট কমানো বা বাড়ানো হয়। প্রথমে রডের দুইপাশে ৮ কেজি করে ১৬ কেজি চাপান। ছবিতে দেয়া পদ্ধতিতে উত্তোলনের চেষ্টা করেন। বেশ কষ্টকর মনে হয়? থামুন। ওজন কমান। যেটাতে আপনি কমফর্ট ফিল করেন সেই পরিমান ওজন নেন। কিংবা হালকা মনে হলে ওজন কিছু বাড়িয়ে নেন। কিন্তু কমফর্টনেশের বাইরে যাওয়া যাবেনা, আবার খুব হালকা যেন না হয়,তুলতে গিয়ে পেশীতে একটা প্রেসার যেন অনুভূত হয়। এভাবে কমিয়ে বাড়িয়ে আপনার ইনিশিয়াল ওয়েট ঠিক করে নেন। প্রথম দিন ৪সেট ৪রেপ করেন। প্রতিটি সেটের মাঝে পর্যাপ্ত রেস্ট নেন, ৫ কিংবা ১০ কিংবা ১৫ মিনিট। একদিন পর পর চলুক এই ৪ সেট ৪ রেপ। সপ্তাহ তিনেক পরে দেখবেন আপনি এই ওজনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। দুইপাশে হাফকেজি করে টোটাল এক কেজি বাড়িয়ে নিন। চলুক একই ভাবে সপ্তাহ তিনেক। এভাবে সপ্তাহ তিন বা ৪ এর পর ধীরে ধীরে ওয়েট বাড়ানোর প্রক্রিয়া জারী রাখেন। সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে প্রতি পর্যায়ে নিজের সক্ষমতাকে বুঝা আর সে অনুযায়ী ওয়েট এড করা। খবরদার তাড়াহুড়া করবেননা। এতে সিস্টেমে রঙ সিগন্যাল পাবে। মাস ছয়েক পর দেখবেন আপনি এখন অনেক বেশী ওয়েট নিতে পারছেন। এখন ৫ সেট ৫ রেপ করে ফেলেন। একই ভাবে ওজন ধীরে ধীরে বাড়ান সপ্তাহ তিন চার পর পর। কোয়ার্টার, হাফ কেজি, এককেজি, সাধ্যানুসারে। মনে রাখবেন কে কত বেশী ওয়েট নিতে পারছে তা দিয়ে মাসলের স্ফিতী রেট নির্ধারিত হবেনা, বরং আপনি কত এফিসিয়েন্টলি আপনার সিস্টেমকে সিগন্যাল দিতে পারছেন তার উপর সাকশেস অনেকটাই নির্ভর করছে। তাছাড়া বিল্ড আপ রেট ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করবে। প্রত্যকের বেসিক মেটাবলিক রেট ভিন্ন।বয়সও একটা বড় ফ্যাক্টর।
কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ - এমন পরিমান ওজন নিবেননা যেটা তুলতে গিয়ে দম বন্ধ করে লাংসের উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করতে হয়। ধীরে ধীরে, পিসফুলি। জিমে গেলে প্রায়ই দেখবেন বীর পালোয়ানেরা ওজন নেবার সময় চোখ বড় বড় করে, বুক ভরে দম আটকে নিয়ে লাংসের উপর প্রবল চাপ তৈরি করে ওয়েট লিফট করছে। সাবধান। একটু অপেক্ষা করেন। ধীরে ধীরে ওয়েট বাড়ান আপনিও সেই লেভেলে যাবেন তবে খুব আরামের সঙ্গে।
কি হয় দম বন্ধ করে লাংসের (ফুসফুসের) উপর নিয়মিত প্রবল চাপ ফেললে? এতে লাংসের বায়ুপূর্ণ যে প্যাকেট গুলো থাকে দিনের পর দিন প্রবল চাপে তার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। মানে তার চুপসে যাবার ও সম্প্রসারিত হবার ক্ষমতা লোপ পায়। এক পর্যায়ে তখন শুরু হয় শ্বাস কষ্ট। একবার এই হার্ডওয়ার নষ্ট হলে সারা জীবন ভুগতে হবে। বিশ্বজয়ী গামা থেকে শুরু করে অনেক পালোয়ানের শেষ জীবনটা তাই হয় অনেক কষ্টের। তাই ওয়েট নেবার ব্যাপারে খুব সাবধান। ধীরে ধীরে আরামের সঙ্গে বাড়ান আপনার সক্ষমতা। আর সঙ্গে পারলে একজন সাহায্যকারি নিতে পারেন। ওজন তোলার ব্যপারে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন।কোন সমস্যা হবেনা।
এখন দেখাযাক এই ওয়ার্কাউটে আপনার মাসল কিভাবে স্ফীত হচ্ছে। যখন আপনি ওয়েট লিফট করছেন তখন সংস্লিষ্ট মাসল গুলোর কিছু ফাইবার আপনার অজান্তেই ছিঁড়ে যাচ্ছে। যতক্ষন আপনি ওয়ার্ক আউট করছেন ততক্ষন কিন্তু আপনার মাসল গুলো এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যদিও এটা আপনার আমার বুঝের মধ্যে আসছেনা। তো ওয়ার্ক আউটে পেশীর ফাইবার যদি এভাবে ছিঁড়তে থাকে তবে বিল্ড হয় কখন। বিল্ড হয় পরে, যখন আপনি আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন। সিস্টেম তখন হিসাব করতে বসে। সে হিসাব করে দেখে এভাবে ত আর চলেনা, এই পেশির উপর ইদানিং বেশ স্ট্রেস আসছে, ফাইবার ছিঁড়ে যাচ্ছে, ফাইবার গুলোর ক্রসসেকশান এখন বাড়ানো দরকার সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য । ব্যাস । এখন আপনার সেই পেশীর ফাইবার গুলো মোটা করে বুনা হবে, মানে আপনার পেশী স্ফীত হতে শুরু করলো, যদি আপনি উপরের প্রক্রিয়া ধরে রাখতে পারেন।
কিছু কাজ থেকে বিরত থাকলে উত্তম। সময় বাঁচবে। জিমে প্রায় দেখা যায় এক সেট দেবার পর আয়নাতে পালোয়ান নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতেই হয়রান। সে এক কঠিন নার্সিসাস কমপ্লেক্স। এক সেট দেয় আর আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। যদি জানতো যে জিমে ওয়ার্ক আউট মানে পেশীর ক্ষয়, তবে এক সেট দিয়ে দিয়ে কতটুকু উন্নতি হয়েছে মাপতে আসতোনা।
প্রতি মাসে কতটুকু পেশী বিল্ড করা যায়? এখানে পেশী মানে পেশী (মাংশ), ফ্যাট সেলে জমা ফ্যাট বুঝাচ্ছেনা। দেখা গেছে গোটা শরীরে খুব হার্ড ওয়ার্ক আউটে মাসে এভারেজ ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম পেশী তৈরী হতে পারে। এখানে পেশী মানে পেশী, নো ফ্যাট, নো বোনস। আর যদি দেখেন ওজন প্রতিমাসে এক দুই কেজি করে বাড়ছে তার মানে হচ্ছে খাওয়া বেশী হচ্ছে, ফ্যাট জমা শুরু হয়েছে। এখনি সাবধান হয়ে যান। আপনি ফ্যাটের জন্য এত কসরত করছেননা আপনার দরকার মাংশ পেশী,মানে সলিডপেশী। এর জন্য সময় দিতে হবে। এক মাস দুই মাস কোন ব্যাপারই না। মাস ছয়েক পরে কেবল বুঝতে শুরু করবেন কিছু একটা ঘটছে। এর আগে ঘন ঘন আয়না দেখা আর ছোটো হাতের শার্ট কিনা এক্কেবারে বেফায়দা। আজ আপাতত এই পর্যন্ত। পরের পর্বে আসছি বাকী গুরুত্বপূর্ন বিষয়াদি নিয়ে।
কিস্তি-৫
কিস্তি-৪ কিস্তি-২ কিস্তি-১
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:২৯