সিরাজদিখানের মাহফুজুর রহমান সাহেবের কান্ড দেখে মনে হলো, তিনি ব্রিটিশ আমলের একটা গল্প খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছেন। গল্পটা পুরনো, কিন্তু ঘুষখোরদের মধ্যে এখনো জনপ্রিয়। এক ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বাংলায় দুর্বল, একদিন শুনলেন—“হুজুর, নাজির ঘুষ খাচ্ছেন!” গিয়ে দেখেন, টেবিলের ওপর এক কাঁদি পাকা কলা। নাজির একেকটা করে খাচ্ছেন। ম্যাজিস্ট্রেট ভাবলেন—ঘুষ মানেই কলা! মজা করে বলেও ফেললেন, “ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ।” এই গল্প শুনে হয়তো মাহফুজুর ভাই ভাবলেন, ‘আরে, ঘুষ তো খাবার! খাওয়াই ভালো!’ তবে কলা নয়, তিনি খান বেনসন। হ্যাঁ, একেবারে সিগারেট!
ঘটনা ৫ এপ্রিলের। সালমান কবীর নামের এক যুবক থানায় গিয়েছেন পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়ার জিডি করতে। কিন্তু থানা তো থানা—ঘুষ ছাড়া কাজ হয়? এবার অবশ্য কৌশল বদলেছে। টাকা নয়, তিন প্যাকেট বেনসন! সালমান সাহেব গিয়ে ১২০০ টাকা দিয়ে সিগারেট কিনে দিলেন, তাহলেই মিলল জিডি। পত্রিকায় এই খবর ছাপা হয় ৮ এপ্রিল, শেষ পাতায়। ঘুষ এখন এত সাধারণ, এত প্রাত্যহিক, এত “ঘরোয়া” হয়ে গেছে যে, প্রথম পাতায় জায়গা হয় না। এমনকি খবরে বলা হয়নি—ঘুষের সঙ্গে কোন ফ্লেভারের লাইটার দেওয়া হয়েছিল!
মাহফুজুর রহমান অবশ্য বলছেন, তিনি ঘুষ খাননি। কে জানে, হয়তো বলবেন, “আমি তো শুধু বলেছিলাম ধোঁয়া উঠলে পাসপোর্টের ঠিকানা বের হয়।” এখানে একটা পুরোনো রুশ কৌতুক মনে পড়ে: আমলার মা উপদেশ দিচ্ছেন—“বাবা, খাওয়ার আগে আর ঘুষ খাওয়ার পরে হাত ধুতে হয়।”
কিন্তু আসল বিষয় হলো—এ দেশে ঘুষ এখন শুধু দুনিয়াবি লেনদেন না, এটা একপ্রকার সিস্টেমেটিক সাপ্লিমেন্ট। সরকারি অফিসে কাজ করতে গেলে ঘুষ লাগে, জানি। কিন্তু কেউ জানে না—অনেক কাজ আসলে ফ্রি। যেমন: সাধারণ ডায়েরি করতে কোনো টাকা লাগে না।জন্মসনদ, মৃত্যু নিবন্ধন—সবই ফ্রিতে পাওয়ার কথা। কিন্তু ‘চা-পানি’ না দিলে এসব সেবার স্বাদ পান না জনগণ। সরকার বদলায়, মন্ত্রী আসে-যায়, কিন্তু এই ‘ঘুষতন্ত্র’ অটুট। এ যেন লোডশেডিংয়ের মতো—শুধু ক্ষমতার পালাবদলে সময়টা বদলায়, প্রকৃতিটা নয়।
তাই প্রশ্ন করি—ঘুষ দিয়ে কি ঘুষ বন্ধ করা যায়? যদি যায়, তাহলে বলুন তো—সিস্টেম বদলাতে ঠিক কত প্যাকেট বেনসন লাগবে ?

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:২৭