আজকে একটু ভালো মুডেই বাজারের আসলেন মাওলা সাহেব। কারন অন্যান্য দিন ১০ টাকার ভাড়া দরদাম করে ১৫ টাকায় আসতে হয় আজকে ৮টাকায় এসে পড়েছেন। মাঝে মাঝে অবাক হন উনি, নানা কাজে ১০/২০ হাজার টাকা অপচয় হলেও ২ টাকা বাচাতে পেরে আজকে উনার মন খুশি। আজকে ছোট মেয়ের জামাই আসবে তাই ভালো কিছু খাওয়াতে হবে। প্রথমে গেলেন তরকারীর বাজারে। অবাক দৃষ্টিতে খেয়াল করলেন আজকে সব তরকারী কেমন যেন তাজা মনে হচ্ছে। শাক গুলো পরিস্কার ও শুকনো, ওজন বাড়ানোর জন্য পানি দিয়ে ভিজানো নয়। টমেটু, আলু-বেগুন, সবগুলোই তাজা মনে হচ্ছে। সন্দিহান মাওলা সাহেব সিদ্ধান্ত নেন আজকে কোন তরকারী নিবেন না।
তারপর গেলেন গরুর মাংসের দোকানে যেয়ে ৩ কেজি মাংসের অর্ডার দিলেন। মিনমিনিয়ে বল্লেন ফয়েজ আজকে হাড় একটু কম দিও। উনি প্রতিবারই এই কথাটা বলেন কিন্তু ফয়েজ সবসময় হাড় বেশি দিবে উনি জানেন। তারপরেও বলার জন্য বলা। মাংস কাটা শেষ হলে উনি অবাক দৃষ্টিতে খেয়াল করলেন এক টুকরো হাড় বা চর্বি নেই। মাওলা সাহেব আবারো কনফিউশনে পড়লেন। মনের কোনে একটি সম্ভাবনা উকি দিলো মরা গরুর মাংস নাকি?? ২য় বারের মতো তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টালেন আজকে গরুর মাংষ কিনবেন না।
সবশেষ গেলেন মাছের বাজারে। উনার ব্যক্তিগত পছন্দ ইলিশ। ১ কেজির একটা ইলিশের জন্য উনার বাজেট ১২০০ টাকা। চকচকে দেখে একটি ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করলেন। মাছওয়ালার বলা দাম শুনে আরেকটু হলে উনার হার্ট এটার্ক হতো। মাত্র ৩০০ টাকা!!! সম্ভবত ২০ বছর আগে একবার উনার এরকম অনুভূতি হয়েছিলো ইলিশের উচ্চদাম শুনে। মাছ অতিমাত্রায় পঁচা কিনা তা যাচাই করার জন্য মাছের কান উল্টালেন কিন্তু নিজের চোখকেও বিশ্বাস হচ্ছিলো না। ইলিশ মাছের কান কখনও এতো লাল দেখেননি উনি। এবার উনি একটি কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন আজকে মাছই কিনবেন না। উনার ব্দ্ধ ধারনা এটা নিশ্চয়ই ফরমালিন বা এরকম কোন নতুন টেকনোলজি মাছকে টাটকা দেখানোর। সুতরাং খালি হাতেই বাসায় ফিরলেন। যেতে যেতে বউকে কি বলবেন সেই অযুহাত ঠিক করলেন। আজকে বাজারটা অন্য কেউ করাই ভালো।
পালের বাজারের এ হাটে উনি সদাই কিনতে আসেন প্রায় ৪৫ বছর ধরে। মানে ১০ বছর বয়স থেকেই এ বাজারে উনার আনাগোনা। কখনো এরকম হয়নি। আজকে হটাৎ সব ফ্রেশ জিনিসের আগমন উনার কাছে ভালো ঠেকছে না।
অফিসে যাওয়ার জন্য সিএনজি ঠিক করতে যেয়েও উনি অবাকিত। অন্যান্য দিনের ভাড়া ১২০ টাকা আজকে ৭০ টাকায় রাজি!!! হচ্ছেটা কি আজকে??
অফিসে বসে অন্যান্য কাজের পাশে উনার রেগুলার একটা কাজ হলো সামুতে ব্লগিং করা। আজকে লগইন করেই উনি বুঝতে পারলেন কিছু একটা উল্টোপাল্টা হয়েছে। কোন ধরনের কপি-পেস্ট দেখছেন না প্রথম পাতায়। প্রথম ১০টা পোস্টই দেখলেন ইনফরমেটিভ পোস্ট, পরে আছে কবিতা ও গল্প। কয়েকটি রম্যও দেখলেন। ৫ পাতা খুজেও কোন ১৮+ পোস্ট দেখলেন না। উনার হটাত মনে পড়ে গেলো গত কয়েকদিন পূর্বে অনেকে অঙ্গিকার করেছিলো ফ্রেশ ব্লগিংয়ের। তখন উনি তেমন পাত্তা দেননি এখন দেখা যাচ্ছে আসলেই ফ্রেশ ব্লগিং শুরু হয়েছে।
বেহুদা একজনকে খোচা দিয়ে দেখলেন ১ মিনিটের মাথায় উনার মন্তব্য মুছে মডারেটর উনাকে জেনারেল করেছে। এবার উনি সত্যিই অবাক হলেন। ২০০৭ সাল থেকে উনি সামুর সাথে। সামুতে কবে সিন্ডিকেট, ক্যাচাল, গালাগালি ও ঘুমন্ত মডারেশন এগুলো ছিলোনা উনি ঠিক মনে করতে পারেন না। আজ হটাৎ এরকম কেন??
লগ-আউট করে উনার অন্য নিকে ঢুকলেন। ইচ্ছা একটি রাজনৈতিক ক্যাচাল পোস্টে দিবেন। দিলেনও একটি জ্বালাময়ী পোস্ট। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ইচ্ছামতন ধুয়ে ফ্ল্যাট করে দেওয়া পোস্টটি মডারেটররা ২ মিনিটের মাথায় মুছে উনাকে কমেন্ট ও পোস্ট ব্যান করে দেয়। টাশকিত মাওলা সাহেব খেয়াল করলেন উনি অসুস্থ বোধ করছেন। সকাল থেকেই উনি সব ফ্রেশ জিনিসের উদাহরন দেখছেন। আজীবন ভেজাল খেয়ে আজকে হাটাৎ ফ্রেশ উনার ঠিক সহ্য হলোনা।
মাওলা সাহেব ঠিক করলেন ৩ দিনের ছুটি নিবেন। কিন্তু উনি ঠিক মনে করতে পারছেন না বসকে তেল মারা ছাড়া উনি কখনো ছুটি পেয়েছিলেন কিনা?? আজকে সব ব্যতিক্রম ছুটিটাও কি ব্যতিক্রম স্বাভাবিক নিয়মেই আবেদন করবেন নাকি বসকে তেল মারবেন???