শহর কি ঘুমায়? জানা নেই আমার। কিভাবে জানবো। যতদিন নির্ঘুম শহরের বুকে দু-চোখ বন্ধ করিনি ততদিন সে জেগেই ছিল। সিরামিক আলোর সময়ে নিজেকে ধুসর দেখে চমকে উঠতাম। এলইডি যুগে এসে সে শিহরণ জাগেনা। সিরামিক আলোয় কবিতা নিয়ে ভাবতাম। আমি এবং পাশে শুয়ে থাকা কুকুরটা বিষন্ন হয়ে থাকতাম। ধূষর একটা ক্যানভাস, রাত তিনটে, সিরামিক বাতি, আমি এবং একটি কুকুর, চায়ের দোকান, একজন রিকশা চালক সিগারেট হাতে, সাই সাই করে ছুটে চলে ট্রাক, বাস, গলির মোড়ের আবছায়ায় দাড়ানো গণিকা। শহরের এই বিচিত্র চিত্রটির সঙ্গে বেশ পরিচয় আছে।
একটা বর্ষা রাতে বের হয়েছিলাম, তখনও দেখেছি শহর জেগে আছে। বর্ষায় বড় অদ্ভুত লাগে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো জোনাকির মত ঝিলমিল করে। শান্ত রাস্তা দিয়ে জলকেলি খেলতে খেলতে চলে যায় দূরপাল্লার গাড়ি। ছাতার নীচে দেখা যায় সিগারেটের ধোয়া। গলির মোড়ের গণিকাও ঘুম যায় শান্ত নীরব ঝিমঝিম বর্ষায়। শুধু সেই কুকুরটি, দোকানের নীচ থেকে মাথা বের করে চিনে নেয়, রুটির আবদার করে।
কার্তিক অথবা হেমন্তের সন্ধ্যায় রায় সাহেব বাজার মোড়ে বড় চাঁদকে দেখা যায় কোন টাওয়ারে লটকে থাকতে। জীবনানন্দের সেই কার্তিকের জোৎস্না শহরে উপভোগ করা যায় না। কৃত্রিম আলোর ঝলমলে আবরণে বিবর্ণ চাঁদ মেঘের আড়ালে চলে যায়। তখন হয়ত আমি জানালার ফাঁক গলে খুঁজে ফিরি নিঃসঙ্গ চাঁদ, শিরিষের ডালে বসে থাকা একাকী পেঁচা, কিংবা ঘুমন্ত নদীর কলকল মোহনা।
পৌষের রাতে একটা ফিনফিনে চাদরে আবৃত হয়ে বের হই, ডিসেম্বরের একটা বিকেলে চায়ের কাপ হতে সন্ধ্যা নামাই, ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে ভাষা শহিদের ব্যঞ্জনা করি। কখনো শহরটিকে ঘুমোতে দেখিনা। ভোরের দিকে কুকুরটিও ঘুমিয়ে যায়। শহরটা জেগে থাকে। একটা ব্যাস্ত রাতে ফটোগ্রাফি করি। পরাবাস্তব জীবনের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ঘুমুতে যাই। আহা জীবন, কি অনিন্দ্য, কি অদ্ভুত! ঠিক শহরের মত গতিশীল।
ছবিঃ নিজের তোলা
৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
বাংলাবাজার
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২৩ রাত ১:৪০