আমার মাঝারি সাইজের জীবনটাতে ঘটা এতো এতো অঘটন থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু অঘটনের কাহিনী শোনাবো আমার অঘটননামায়.....
কাহিনীটা আম্মুর কাছ থেকে শোনা। তখনো আমার বয়স এক বছর হয়নি। নতুন করে দাঁত উঠেছে।

তাই আরসব ছোট বাচ্চাদের মতো আমিও হাতের কাছে যা পেতাম তাই মনের সুখে চিবুতে থাকতাম। তাই আম্মু কখনো ছোটখাট কোন জিনিস আমার হাতে দিতো না পাছে গিলে ফেলি। তো একদিন আম্মু আমার হাতে একটা হ্যাঙ্গার দিয়ে রান্না সামলাতে গেল। আমিও যথারীতি হ্যাঙ্গার গলাধঃকরনে মনোযোগ দিলাম।

আর হ্যাঙ্গার বাবাজীর আংটাখানাও দিব্যি আমার গলায় গিয়ে ঝুলে পড়লো। আমি যতই হ্যাঙ্গারখানা বের করার চেষ্টা করি সেটা ততি আমার গলায় গেড়ে বসে পড়ে।

আমি তো ব্যথায় আর্তচিতকার করা শুরু করলাম।

আম্মু এসে এই ঘটনা দেখে কি করবে বুঝে পাচ্ছিলনা। পরে পাশের বাসার এক আঙ্কেল এসে অনেক গলদঘর্ম ঘটিয়ে সেই হ্যাঙ্গারখানা আমার গলা থেকে বের করতে সমর্থ হয়। যদিও ঘটনাটা ছোট্ট মেমরিতে এখন আর নেই তবুও ঘটনা আম্মুর কাছ থেকে যতবার শুনি ততবারই মজা লাগে।
এই কাহিনীটাও আম্মুর কাছ থেকে শোনা। আমার তিন বছর বয়সের ঘটনা। তখন বিটিভিতে সুপারম্যান দেখাতো। সুপারম্যান দেখে আমার মনেও সুপারওম্যান হওয়ার সাধ জাগলো।

তাই সুপারওম্যানের মতো উড়াল দিতে গিয়ে খাট থেকে পড়ে হাত ভেঙ্গে ফেললাম। অতঃপর একুশ দিন সেই ভাঙ্গা হাতখানা গলায় ঝুলিয়ে কাটাতে হয়েছিল। কিন্তু সুপারওম্যান হওয়ার শখ মিটেছিল কিনা সেটা জানতে পারিনি।
সেবার ঈদে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। আমি এখনো পর্যন্ত সাঁতার জিনিসটা শিখে উঠতে পারিনি আর পাঁচ বছর বয়সে তো সেটার প্রশ্নই উঠেনা। তো কাজিনদের সাথে খেলা শেষে আমি আর আমার এক ভাই গেলাম পুকুরঘাটে হাত-মুখ ধুতে। আমি যখন হাত-মুখ ধুচ্ছিলাম সে তখন আমাকে ভয় দেখাতে গিয়ে দিল এক ধাক্কা। আর অমনি আমি পানিতে ধপাস করে পড়ে গেলাম। ডুবেই গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস সেদিন আমার এক চাচা দেখেছিল। সে ঘটনা দেখে দৌড়ে পুকুরে নামলো। পানি খেয়ে আমি তো তখন আধমরা। অতঃপর অনেক কষ্টে আমাকে খুঁজে পেয়ে ডাঙ্গায় তুলে আনলো।

এরপরেও আরো দুবার পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার রেকর্ড আছে আমার।
তখন আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ি। আমাদের একটা খেলা ছিল মানুষের পানির বোতল কম্পাস দিয়ে ফুটা করে দেয়া।

তো একদিন আমার এক ফ্রেন্ড ক্লাসের সবার বোতল ফুটা করা শেষে আসলো আমার পানির বোতল ফুটা করতে। আমি তো কিছুতেই দিবোনা। তাই বোতল নিয়ে দৌড়ানো শুরু করলাম। পিছে পিছে আমার ফ্রেন্ডও দৌড়ানো শুরু করলো। আমি বোতল বাঁচাতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম সেই মেয়ে যে কখন পিছে থেকে আমার সামনে চলে এসেছিল সেটা আমি আর খেয়াল করি নাই।

ফলাফলস্বরূপ তার হাতের কম্পাসখানা আমার চোখে ঢুকে গেলো।
অতঃপর এই ঘটনা নিয়ে স্কুলে হুলস্থুল বেঁধে গেল। ম্যাম এসে আমাকে প্রিন্সিপ্যালের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, “ম্যাডাম, এই মেয়েটার চোখে কম্পাস ঢুকে গেছে। এরকম একটা ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট যদি অন্ধ হয়ে যায়, ভাবতে পারেন”। ম্যামের কথা শুনে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, ম্যাম আমাকে ব্রিলিয়ান্ট বলছে এজন্য আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি চোখের ব্যথায় কাঁদা উচিত।
কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে ছিলাম তখন। আমাদের ল্যাব আর ক্লাস ছিল আলাদা বিল্ডিং এ। তো একদিন কেমিস্ট্রি ল্যাবে যাওয়ার সময় লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। পিছন থেকে এক মেয়ে এসে দিল ধাক্কা আর আমি পড়ে গেলাম। দাঁড়ানোর পর দেখি পায়ে ব্যথা করছে।

কিন্তু যেই পিছনে তাকিয়ে দেখলাম শকুনি (আমাদের পিটি ম্যাডাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?”। আমি অমনি “কিছুনা ম্যাডাম” বলে আমাদের বিল্ডিং থেকে নেমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আরেক বিল্ডিং এর পাঁচ তলায় উঠে গেলাম যেখানে ল্যাব হওয়ার কথা। ল্যাবে গিয়ে আর তো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি না।

জুতা খুলে দেখলাম পা ফুলে আলু হয়ে গেছে।

আর আমি সেই আলু দেখে মুর্ছা যাওয়ার অবস্থা। বাসায় ফোন করা হল। আব্বু আসলো আমাকে নিতে কিন্তু আমি তো পাঁচতলায়। হাঁটতেই পারছিনা যেখানে সেখানে সিঁড়ি দিয়ে পাঁচতলা ভাঙ্গা তো অসম্ভব।

অতঃপর আমার ফ্রেন্ডরা মিলে আধকোলা করে নামালো। আর আমি ভয়ে চিতকার করতে লাগলাম পাছে পড়ে যাই। একমাস পর যখন ভাঙ্গা পা জোড়া লাগিয়ে ক্লাসে গেলাম তখন দেখি কলেজের সবাই আমাকে এক নামে চেনে।
এটা গত বছরের ঘটনা। ক্লাস ব্রেকে ফ্রেন্ডরা বললো চা খেতে যাবে। সবাই মিলে নামলাম তিনতলা থেকে। কিন্তু ডিপার্টমেন্টে সামনের দুটো সিঁড়ি কাল হয়ে দাঁড়ালো আমার। কি থেকে কি হইলো কিছুই বুঝলাম না। একটা ইটের সাথে উষ্ঠা খেয়ে সিঁড়িতে বসে পড়লাম। এরপর পা ভেঙ্গে গেছে এই ভয়ে আমি প্রায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম দেখে ফ্রেন্ডরা ধরে ফেললো। তারপর গার্লস কমন রুমে নিয়ে গিয়ে বসালো। সেখানে গিয়ে দেখি আমার পা আবার আলু হয়ে গেছে।

বুঝলাম ঘটনা যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। যেই একখানা অক্ষত ঠ্যাং ছিল তাও ভেঙ্গেছি।

যথারীতি বাসায় ফোন করলাম। আর রাজ্যের ঝাড়ি গেলাম যেন আমি ইচ্ছে করে পা ভাঙ্গছি। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছিল ঝাড়ি খেয়ে। এদিকে ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে দেখে ফ্রেন্ডদের বললাম তোরা যা আমি একা থাকতে পারবো। যেই না ওরা গেল আমি দেয়ালে মাথা গুঁজে কান্না শুরু করলাম।

কমন রুমের দরজা খোলার শব্দে বুঝতে পারলাম কেউ এসেছে। কিন্তু আমি তো আর কোনভাবেই কান্না থামাতে পারিনা। তাই নিরুপায় হয়ে কাঁদতেই লাগলাম।

আমাকে কাঁদতে দেখে মেয়েটা এগিয়ে আসলো। এরপরে আমাকে সান্ত্বনা দেয়া শুরু করলো, “কেঁদে কি হবে? যা হওয়ার তা হয়েছে, কাঁদলে তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে”। এই কথা শুনার সাথে সাথে আমি ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো লাফিয়ে উঠলাম।

এই মেয়ে বলে কি?

আমি বলি, “ভালোর জন্য করে মানে? আমার পা ভেঙ্গে গেছে এখানে ভালোর কি আছে?”

এই কথা শুনে মেয়েটা যেন আকাশ থেকে পড়লো। তারপর বলে, “ওহ পা ভাঙ্গছে। আমি তো ভাবছিলাম......”।
আল্লাহই জানে ঐ মেয়ে সেদিন কি ভাবছিল।

:#>
এই বছর এখনো পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। মানে কোন অঘটন ঘটাই নাই।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৬