somewhere in... blog

একটি সোনার পানদানি ও গফুর খাঁ-র কয়েকদিন

২০ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১.
সেটা ছিল অমাবস্যার তিথি।
গাঢ় অন্ধকারের পিঠে গোরস্থানের পাহারাঘরে দূরবর্তী নক্ষত্রের মত মিটমিটিয়ে জ্বলছিল একটা বেওয়ারিশ লন্ঠণ। ঘুটঘুটে আঁধার চারপাশটায় জমাট বেঁধে লেপ্টে ছিল এমনভাবে যেন রাতের গায়ে ঘন এক পোচ আলকাতরা মাখিয়ে দিয়েছে কেউ। দু চারটা রাতখেকো শেয়াল আর ঝিঁঝিঁপোকাদের ক্লান্তিহীন ডাকাডাকি নিস্তব্ধতার জাল ছিঁড়ে দিলেও রাতের আঁধারের গাঢ়ত্ব আর রহস্যময়তা বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণে। গফুর খাঁর অবশ্য সেই রহস্য নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না কোনো। সে আয়েশ করে এক ছিলিম গাঁজায় টান দিয়ে নিপুণ অভ্যস্ততায় সবটুকু ধোঁয়া ফুসফুসের ভেতর টেনে নিতে নিতে দরাজ গলায় গান ধরেছিল-
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়
তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায়ে

রোজকার নিয়মানুযায়ী এই সঙ্গীতচর্চা হয়ত অগ্রসর হত আরো কিছুদূর কিন্তু সেই মুহূর্তে এমন কিছু একটা ঘটল যা ঠিক প্রাত্যহিক ঘটনাবলীর তালিকায় পড়ে না। একঘেয়ে রাতের আঁধারের গায়ে সহসা কোনো অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণায় গফুর খাঁ আচমকা গান থামিয়ে ফ্যালফ্যাল করে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। দেখতে পেল এক শুভ্র নারীমূর্তি অন্ধকারের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে পা ফেলে এগিয়ে আসছে তার দিকে। গাঁজার ধোঁয়ায় বিভ্রম হচ্ছে ভেবে সে তড়িঘড়ি ছিলিম একপাশে সরিয়ে রেখে চোখ কচলে নিল দুহাত দিয়ে। কিন্তু না। এখনও তো সেই একই দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে। সতের বছর হলো এই গোরস্থানে গোরখোদকের কাজ করছে সে। কত রাত এমনিভাবে কেটে গেছে কিন্তু এমন তো আগে কখনো হয়নি - ভাবে সে। ভাবতে ভাবতেই দেখে সাদা শাড়ী পরা নারীমূর্তিটি তার ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিকে একদৃষ্টে চেয়ে গফুর যখন ঘটনার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টায় মগ্ন তখন নারীমূর্তিটি হঠাৎ কথা বলে ওঠে- "ও গফুর! তোর পোয়াতী বৌটাক দেইখে রাকিস। উর বিপদ আইসছে যে।"
গফুর সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে তার ভয় পাওয়া উচিত কিনা। নারীমূর্তিটির চেহারা ভীষণ চেনা চেনা লাগলেও তাকে আগে কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারে না সে। ঢুলুঢুলু চোখ আরেকবার কচলে নিয়ে মৃদুস্বরে প্রশ্ন করে,"তুমি কিডা?"
নারীমূর্তি বিষন্ন হেসে জবাব দেয়,"আমাক চিনলিনে? আমি তালুকদারদের মেজ বউ যে।"
বলেই মূর্তিটি পেছন ফিরে যেই পথে এসেছিল পুনরায় সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় গাঢ় অন্ধকারের ভেতর হারিয়ে যায়। হতভম্ব গফুর তার চলে যাওয়ার পথের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে গোটা সময়টা ধরে। মাঘের কনকনে শীতের রাতেও একটা পাশবিক আতঙ্কে তার সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে ওঠে।
তালুকদারদের মেজ বউ? তাকে সে ভোলে কেমন করে!

০২.
ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগের। সাবেক জমিদার তালুকদার পরিবারের মেজ বৌয়ের অকস্মাৎ মৃত্যু সাড়া ফেলেছিল গোটা গ্রামে। ততদিনে অবশ্য পরিবারের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি দুটোতেই ফাটল ধরেছিল বহুলাংশে। তবু লোকমুখে শোনা যেত, পরিবারের মেজ বৌয়ের মালিকানায় রয়েছে একটি অতি মূল্যবান বিলাসসামগ্রী যা সে কখনই নিজের কাছ ছাড়া করত না। কেউ বলে সেটা ছিল একটা অষ্টধাতুর কলমদানি,কেউ বলে সোনার কলকে আবার কেউ বলে ওটা ছিল একটা মনিমুক্তোখচিত বাতিদান। শোনা যায় এও যে মেজ বৌয়ের মৃত্যুর পরপরই নাকি তার ওই মূল্যবান সামগ্রীটিও ভেল্কিবাজীর মত উধাও হয়ে গিয়েছিল ঘর থেকে। বহু তল্লাশি করেও সেটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গফুর খাঁর অবশ্য সেসব গুজবে কান দেবার অবকাশ ছিল না। বাকি সব বারের মতই মতই মেজ বৌয়ের জন্য অন্তিম শয্যাঘর প্রস্তুত করে নিজের নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক পেয়েই সন্তুষ্ট ছিল সে।
গোলটা বাঁধলো মাস ছয়েক আগে এক রাতে যখন সে নতুন কারো জায়গা তৈরীর উদ্দেশ্যে সেই বারো বছরের পুরনো কবর খুঁড়তে গেল তখন।
সাড়ে তিন হাত মাটির নীচে কফিনের ভেতর থেকে এক নারীকঙ্কালের সাথে বেরিয়ে এলো মণিমুক্তাখচিত একটি সোনার পানবাটা।
হতভম্ব গফুর কয়েক মুহূর্ত ভেবে পেল না পানবাটাটি নিয়ে সে এখন কি করবে। কিছুক্ষণ ভেবে অবশেষে সে গোপনে বস্তুটি নিজের কাছে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। বিবেকের দংশন হলো যদিও একটু তার তবু সে নিজেকে প্রবোধ দিল এই বলে যে,জিনিসটির প্রকৃত মালিকদের কেউই যখন আর বেঁচে নেই তখন এটা নিজের কাছে রেখে দিতে কি এমন অসুবিধে? এরকম সময়ে নিজের সপক্ষে খাড়া করবার মত যুক্তির অভাব হয়না সাধারণত।
তার মনে হল,তার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটাতেই বিধাতার তরফ থেকে এ আশীর্বাদ। ভেবে মনে মনে আনন্দিত হলো সে।
সেই রাতেই সবার অলক্ষ্যে চুপিচুপি পানদানিটি নিজের ঘরে এনে গভীর সতর্কতার সাথে সে লুকিয়ে রাখল স্ত্রী সফুরা বানুর জিম্মায়।

০৩.
সফুরা বানু দাওয়ায় বসে অল্প অল্প হাঁপাচ্ছিল। চুলোয় ভাত চড়িয়ে কুটনো কোটা সেরেছে কেবল তাতেই শ্বাস উঠছে তার। ইদানিং অল্পতেই হাঁপিয়ে যায়।
গাঁয়ের অন্য সব বাড়ির গিন্নীদের মতন অত চটপটে নয় বৌটা - দূর থেকে তাকে দেখতে দেখতে মনে মনে ভাবছিল গফুর। তবু গায়ে গতরে দুর্বল এই বৌয়ের প্রতি মমতা আর ভালবাসার অন্ত নেই তার। উপরন্তু প্রথম ছাওয়াল হবে বলে বৌয়ের যত্নআত্তি-র ঘটাও বেড়েছে আজকাল বাড়িতে। শুধু গফুরই না গফুরের বুড়ো মা বাপও বৌকে চোখে হারায় ক্ষণে ক্ষণে।
কিন্তু গত দুই তিন রাতের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে তাকে। চারদিন আগে গোরস্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাকে নেহায়েত গাঁজার নেশায় বিভ্রম ভেবেই উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল সে। বাড়িতে এ কথা কাউকে জানায়ওনি। কিন্তু সেদিনের পর থেকেই সফুরাকে কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে।
গত দুই দিনে দুইবার গভীর রাতে সফুরার আর্ত চিত্কার শুনে ধড়মড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠেছে গফুর। বিছানায় দেখতে না পেয়ে ছুটে গিয়ে তাকে আবিষ্কার করেছে উঠোনে পা ছড়িয়ে এলোমেলো বিস্রস্ত অবস্থায় বসা। চোখে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। আতঙ্কিত গফুর প্রশ্ন করেছে, "ও বউ! কি হইয়েছে? এত রাত্তিরে তুমি এখেনে কি কচ্ছো?" সফুরা অনেকক্ষণ তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে জবাব দিয়েছিল, "তিয়াস লাইগলো বইলে উইঠে এইয়েছিলাম। উঠোনেত বিলাই দেইখে ভাবিছি ভূত।" সে যাত্রায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও গফুরের শঙ্কাটা গাঢ় হয় যখন পরেরদিন রাত্রেও আবার ঠিক একই ঘটনা ঘটে।
দ্বিধান্বিত গফুর বাপ মায়ের সাথে পরামর্শে বসে। গোরস্থানের ঘটনাটা আগাগোড়া খুলে বলে তাঁদের। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দুজনেরই স্থির বিশ্বাস ওই সোনার পানদানি ফিরে পেতেই মেজ বউয়ের আত্মা তাদের পুত্রবধূর ঘাড়ে এসে ভর করেছে। গফুরেরও ধীরে ধীরে তাই বিশ্বাস হতে শুরু করেছে। মন বলছিল,অভিশপ্ত জিনিসটা যেখানে পেয়েছিল সেখানেই আবার ফিরিয়ে দিয়ে আসতে। কিন্তু এত মূল্যবান জিনিসটা এভাবে হাতে পেয়ে আবার ফিরিয়ে দেয়াটা বেশ কঠিন কাজ বইকি। গফুরের বুড়ো বাপ পরামর্শ দিলেন, "উটি বউয়ের ঘর থিকে সইরে ফ্যাল,বাপ! তোর মার কাছে রাখতি পারিস। বুড়ো-বুড়িরে উ পেত্নি বেটী আর কি কইরবে?" এ প্রস্তাবটা খানিক মনঃপূত হয়েছিল গফুরের। কিন্তু সফুরাকে সে কথা বলতেই সে চোখমুখ শক্ত করে জবাব দিয়েছিল,"ও হবিনানে। ও জিনিস ঘরে রেইখে কাজ নেই। তার চেইয়ে যার জিনিস তারে ফিরত দিয়ে এইসো। বিপদ বাড়িয়ে লাভ কি?" গফুর ইতঃস্তত করে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল তাকে কিন্তু সফুরা নিজের কথায় অনড়। ও জিনিস সে কিছুতেই ঘরে রাখতে দেবে না।
দুপুরের গনগনে রোদের নিচে বসে এসব ভাবতে ভাবতে গফুরের মাথাও তপ্ত হয়ে উঠছিল। শেষমেষ জিনিসটা ফিরিয়ে দিয়েই আসতে হবে বোধহয় - ভাবতে ভাবতে সে উঠে দাঁড়ালো।
"ও মা! আমি ইট্টু রমিজগো বাইত হই আতিছি।" বলে একটা হাঁক পেড়ে সে আস্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। পেছন থেকে তার চলে যাবার পথকে অনুসরণ করলো সফুরার আতঙ্কিত দৃষ্টি তা সে দেখতে পেল না।

০৪.
আধা কাটা রুই মাছটা মেঝেতে উল্টে পড়ে ছিল বটির পাশে। আর তার পাশে প্রায় একই ভঙ্গিতে স্থির হয়ে পড়ে ছিল সফুরার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা শরীর। অদ্ভুত কোনো একটা মিল ছিল মৃতদেহ দুটোর মাঝে- দুজনের চোখই ছিল অভিব্যক্তিহীন। শূণ্য দৃষ্টিতে তারা নিষ্পলক চেয়ে ছিল রান্নাঘরের কড়িকাঠের দিকে, আর দরজায় দাঁড়িয়ে একই দৃষ্টিতে গফুর সফুরার দিকে। সফুরার মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া ফেনা শুকোয়নি তখনও।
উঠোনে পা ছড়িয়ে বসে উচ্চস্বরে বিলাপরত সফুরার বৃদ্ধা শাশুড়িকে থামানো যাচ্ছিল না কিছুতেই। মাথায় হাত দিয়ে নিশ্চুপ দাওয়ায় বসেছিলেন গফুরের বুড়ো বাপ। তাকে ঘিরে ধরেছিল বয়স্ক লোকেরা। ঘটনার বিশদ বিবরণ জানতে উদগ্রীব ছিল সবাই। রুদ্ধ কন্ঠে বৃদ্ধ বিড়বিড় করে যেটুকু বললেন তাতে জানা গেল,দুপুর বেলায় গফুর চলে যাবার কিছুক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে বৌয়ের আর্ত চিত্কার শুনতে পেয়ে বুড়োবুড়ি দুজনেই ছুটে যান সেখানে। গিয়ে দেখতে পান সেই রক্ত জল করা দৃশ্য। মেঝেতে উল্টে পড়ে আছে সফুরার স্পন্দনহীন দেহ আর সাদা শাড়ী পরিহিতা এক নারীমূর্তি তড়িত্গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে সেখান থেকে। অদৃশ্য হয়ে যাবার যাবার আগে সে জ্বলন্ত ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে ফিরে তাকিয়েছিল একবার গফুরের বাপ মায়ের দিকে - তাতেই তাকে চিনতে পারেন বৃদ্ধ। তালুকদার বাড়ির মৃত মেজ বউ!
সেসময় ভীড়ের মধ্য থেকে কেউ বলে ওঠে, সে ও দেখেছিল বটে। দুপুরবেলায় নদীতে নাইতে যাবার সময় গফুরদের বাড়ির পাশ দিয়ে সাদা শাড়ী পরা এক মহিলাকে হেঁটে যেতে। সবাই চেপে ধরে, "ব্যাটা আগে বলিসনি ক্যানে?" জবাব আসে," বা রে! মুই ক্যামনে বুইঝব উ ভূত আসিল যে? মুই তো ভেইবেছি কুনো নতুন কুটুম বুঝি।"
সন্ধ্যার মধ্যে খবরটা দাবানলের মত সারা মাধবপুর এমনকি আশেপাশের গাঁয়েও ছড়িয়ে পড়ে। এমন রোমহর্ষক আলোচনার খোরাক বহুদিন অবধি পায়নি মাধবপুর গ্রামের লোকজন।
এত শোরগোলের মধ্যে কেউ খেয়াল করেনি যেই সোনার পানবাটা নিয়ে এতকিছু তা তখনও তালাবন্ধ ছিল সফুরার গোপন সিন্দুকেই। মেজ বৌয়ের মৃত আত্মা তা খুঁজে না পেয়ে সফুরার ওপর প্রতিশোধ নিয়ে চলে গেছে.......

০৫.
গল্পটা শেষ হতে পারত এখানেই। কিন্তু গফুরের কেন যেন মনে হলো,ওই মৃত আত্মার সাথে কিছু হিসেব মেটানো বাকি আছে তার। একদিন গভীর রাত্রে তাই সবার অগোচরে পানবাটাটি হাতে নিয়ে গোরস্থানে হাজির হলো সে। তারপর মেজ বৌয়ের কবরের জায়গাটার পাশে গিয়ে বসলো। কিছু একটার অপেক্ষা.......অনন্ত অপেক্ষা......কেন তার মনে হয় কেউ ডাকছে এখানে তাকে! কিন্তু অপেক্ষা শেষ হয়না আর......আসেনা কেউ! দুই তিন ছিলিম তামাক টানা শেষ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। রাত্রির শেষ প্রহরে গফুরের চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে আসে। ঠিক সেই সময়ে ঘন আঁধারের ভেতর থেকে এক অস্পষ্ট নারীমূর্তিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। গফুর ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু নারীমূর্তিটি কাছাকাছি আসতেই সে প্রবল বিস্ময়ে আবিষ্কার করে এ তো তালুকদারদের মেজ বউ নয়। তার আদরের বউ সফুরা!
সফুরা বিষন্ন দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে,"কিরাম আছ গো?"
কান্নাজড়িত কন্ঠে গফুর ধীরে ধীরে বলে,"ও বউ তুই আমাক মাফ কইরতে পাইরবি কোনদিন? আমার পাপের সাজা মিলিছে।"
- তোমার দোষ কিসে যে মাফ চাতিছো?
-আমি লোভ কৈরেছি। তুই আমাক আগে বৈল্লি না ক্যানে উ পেত্নী মাগী তোক মাইরতে এইয়েছিল?
- উ আমাক মাইরতে আসেনি গো। বাঁচাতি এইয়েছিল।
শব্দ কটা অকস্মাৎ বজ্রপাতের মত আছড়ে পড়ে স্তব্ধ করে দেয় চারপাশ। হতভম্ব গফুর ভেবে পায় না কি বলবে। সম্বিত ফিরে পাবার পর সে ধীরে প্রশ্ন করে,
- তবে তোক মাইরতে চেইয়েছে কে?
- তোমার মা বাপে।
- কি কচ্ছিস তুই?
- মরা মানিষ মিছে কত কয় না!
- তারা তোক মাইরবে ক্যানে?
- ওই পানবাটারই জন্যি! আমি বাঁইচে থাকলি তোমার ছাওয়াল ওর দাবিদার
হত না?
- আমাক আগে বলিসনি ক্যান?
- বৈলে কি হত? মাইনতে আমার কথা?
গফুর নিশ্চুপ হয়ে যায়। ক্লান্তস্বরে সফুরা ধীরে ধীরে বলে,"একটা শেষ কথা শোনো! উ যার জিনিস তারে ফিইরে দাও। যার তার হাতে না পড়ে......."
কথাটা শেষ হতেই সফুরার ছায়ামূর্তি দূরে সরে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। তারপর একসময় গহীন রাতের অন্ধকারের ভিতর চুপিসারে মিলিয়ে যায়।
পেছনে পড়ে থাকা গফুর অন্ধকারের তল হাতড়াতে থাকে উদ্ভ্রান্ত অন্ধ নাবিকের মত........তারপর সর্বশক্তি দিয়ে সেই সোনার পানবাটা প্রবল আক্রোশে ছুঁড়ে মারে অনির্দিষ্ট অন্ধকারের উদ্দেশ্যে............
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:৩৭
৮৯টি মন্তব্য ৮৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

* ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’
* ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
* ‘নাটক কম করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসসালামু আলাইকুম। ইদ মোবারক।

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৯



ঈদ এখন এক নিরানন্দময় উপলক্ষ্য।
কিতাবে আছে ধনী-গরীব অবিভাজনের কথা বরং এদিন আরো প্রকটতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় বিভেদরেখা কেননা আমরা আমাদের রাষ্ট্র- সমাজব্যবস্থা ও জনগণকে সেভাবে দিয়েছি ঘিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের শুভেচ্ছা: দূর থেকে হৃদয়ের কাছ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

আসসালামু আলাইকুম,
আজ ঈদের দিন। চারদিকে উৎসবের আমেজ, হাসি-খুশি, নতুন জামা আর মিষ্টি মুখের আদান-প্রদান। আমি ইউরোপে আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা কোণে একটা ফাঁকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই যে আমার নানা রঙের ঈদগুলি ......

লিখেছেন অপ্‌সরা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪২


পেছনে ফিরে তাকালে আমি সবার প্রথমে যে ঈদটার কথা স্মরন করতে পারি সেই ঈদটায় আমি পরেছিলাম আমব্রেলা কাট নীলচে বলবল রং একটা জামা এবং জামাটা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×