somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নবিষয়ক দুঃখবিলাস

২৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একেকটা দিন শেষ হয়ে গেলে আলস্যজড়ানো মস্তিষ্কে একটুখানি নাড়া দিয়ে যাপিত দিনের হিসেব মেলানোর চেষ্টা করি আজকাল। আলস্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছুতে পৌঁছুতে চিন্তার রেখাগুলিতেও আলস্য ছড়িয়ে গেছে ভাইরাসের মত। কিছু ভাবতে গেলেই অলস মস্তিষ্ক কোষগুলি আয়েশী আর আহ্লাদী বেড়ালের মত চিন্তার রাশ টেনে ধরে বলতে শুরু করে - কি হবে অত ভেবে? সময়টা আসলেই দেখা যাবে! কিন্তু সেই সময়টা শেষ পর্যন্ত চুপিসারে সিঁধকাটা চোরের মত কোথা দিয়ে আসে আর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে কোথায় পালিয়ে যায় ভেবে ওঠার আগেই দেখি সময়ের ধাক্কা খেয়ে জীবনের একটা ধাপ পেরিয়ে আরেকটা ধাপে দাঁড়িয়ে আছি। শুধু হিসেবগুলো মিলিয়ে নেয়া হয়না তার কাছ থেকে। কঠোর বাস্তবতার আপাত অভেদ্য শক্ত কংক্রিটের ওপর দাঁড়িয়ে আমি নিস্পৃহ চোখে দেখতে পাই - কিছু প্রতিশ্রুতিশীল সময় আমার শিথীল হাতের মুঠো থেকে অবলীলায় বেরিয়ে যাচ্ছে বালুকণার মত অথচ তাদের তাড়া করার শক্তি বা প্রয়াস দুটোতেই আমি জড়; সাংঘাতিকভাবে নিশ্চল।

স্পৃহার অভাবকেই যদি নাম দেয়া হয় নিস্পৃহতা তবে যে কেউ চাইলেই সেখানে রাজা উজিরের আসনে বসিয়ে দিতে পারে আমাকে। সকল আপাত জীবন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিস্পৃহতা বা উদাসীনতার অনুযোগে জীবনে কতবার কাঠগড়ার মুখোমুখী হতে হয়েছে কিংবা করতে হয়েছে ইতস্ততঃ জবাবদিহির চেষ্টা তার হিসেব কষাটা এখন বাতুলতাই মনে হয়। কেননা সেই হিসেব তো জীবনভর চলতেই থাকবে যদি না অলৌকিক কোনো জাদুর কাঠির সংস্পর্শে সহসাই ভিন্ন মানুষে রুপান্তরিত হই। তবে নিস্পৃহতার অতি সামান্য কিছু সুবিধাজনক দিককে পাশ কাটিয়ে তার ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোই নগ্নভাবে চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বারবার। আর কেমন অদ্ভুতভাবে নেচে নেচে আমায় ভেংচি কেটেছে। যেন আমি কোনো ভীনদেশী সার্কাসের ক্লাউন অথবা নাম না জানা কোনো ভিনগ্রহী প্রাণী।

সেটা নিয়ে সত্যিকার অর্থে খেদ ছিল না কোনকালেই। তবু অবচেতনে আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি না কেননা তার জন্যেই হয়তবা স্বপ্ন দেখাই শেখা হয়ে উঠলনা আমার এখন অবধি। শুধু সময়ের পাল্লায় জীবনের সব হিসেব নিকেশকে মুঠো মুঠো করে ছেড়ে দিয়ে দিব্যি আশ্বস্ত ভঙ্গিতে বসে আছি আগাগোড়া নির্ভাবনার বর্মে মোড়ানো রোবটমানবের মত; স্থির,শীতল,অনুভূতিজড় ও স্বপ্নহীন।

এতদিন পর এসে এখন মাঝে মাঝে ভাবতে গেলে অবাক লাগে কেন কখনোই জীবনকে নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখা হয়নি আমার। আমরা সময়কে কঠিন বাক্যচ্ছটার শ্লেষে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই,নগরের যান্ত্রিকতায় মোড়ানো বিষাক্ত কৃত্রিম বায়ুকে তীব্র অভিশাপে দংশন করে তার রিক্ত দেয়ালে আঁচড় কাটি সহস্রবার। তবু এই মৃত শহরের মানুষগুলোর মনের কোনো এক কোণে স্বপ্ন বেঁচে আছে আজও- অস্বীকার করতে পারবে না কেউ। বারো তের হাত নিয়ন বাতির নিচে নির্দয় এই যন্ত্র-শহরের কুয়াশা ভেজা রাজপথে যেই টোকাই শিশুটি ছালা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে - তার চোখেও স্বপ্ন আছে - কোনো একদিন রাজপথ ছেড়ে আপন আবাস খুঁজে নেবার। শুধু আমার চোখ কেন এমন স্বপ্নহীন জানতে গেলে ভাবনাগুলো সুতোর মত কুন্ডুলী পাকিয়ে জড়িয়ে আসে আর ঢং ঢং করে মাথার ভেতর ঘন্টা নেড়ে বলে - স্বপ্ন দেখার যোগ্যতা তোমার কই? আমি তাকে বোঝাতেই পারি না, হায়রে! স্বপ্ন দেখতেও যোগ্যতার প্রয়োজন বুঝি? শুধু ক্ষমতা থাকা চাই!
সেই ক্ষমতাটাই বা কই?

সেই ছেলেবেলা থেকে না জানি কতবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে - বড় হয়ে কি হতে চাও? প্রতিবারই কেমন বোকার মত মুখ করে দ্বিধান্বিত ভঙ্গিতে শেষমেষ ইতস্ততঃ জবাব দিতে হয়েছে, "দেখা যাক কি হই। এখনো তো সেটা ভাবিনি।" প্রশ্নকর্তা ঈষৎ সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার ভদ্রতাজ্ঞান নিয়েই সংশয়াবিষ্ট হয়ে উঠেছে শেষ অবধি। আর আমি যেকোনো অজুহাতে সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচেছি। কি হতে চাই সেই প্রশ্নের উত্তর আজ অবধি জানা হয়নি।
কিশোর বয়সে অতি আবেগের বশে একটা স্বপ্নই দেখা হয়েছিল শুধু- খুব নিবিড়ভাবে। কিন্তু কৈশোরের গন্ধ গা থেকে মুছে যাবার আগেই চার দেয়ালের কংক্রিটে স্বপ্নটা আছাড় খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল অসহায়ভাবে আর অলীক কোনো এক অতিকল্পনার মত দূরে সরে যেতে যেতে অবশেষে উধাও হয়ে গেছে আমার চিন্তাজগতের পরিধি থেকে। ওটার কথা মনে হলেই মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অপরাধী লাগে। কেমন করে আমরা এই নির্ঝন্ঝাট স্বার্থপর ভেজিটেবল আর সুবিধাবাদী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলাম? কেন আমাদের স্বপ্নগুলিও শেষ পর্যন্ত গ্ল্যামারাস কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ততোধিক গ্ল্যামারাস কোনো বিষয়ে ডিগ্রী লাভের মাধ্যমে অভিজাত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরিজীবনে প্রবেশ অথবা আরো বেশি উচ্চশিক্ষার স্পৃহায় উচ্চ ডিগ্রী অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?

ওরকম করে স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি কখনো। ভাবতে ইচ্ছে হয়নি নামের শেষে কতগুলো ডিগ্রী লাগালে পরে সমাজের মানদন্ডে সম্মানের পাল্লাটা বেশ ভারী হয়ে উঠবে আমার। অথবা কোন অভিজাত প্রতিষ্ঠানে কত টাকা বেতনের চাকুরী মিললে সকলের কাছ থেকে পিতামাতার সুযোগ্য সন্তানের স্বীকৃতি লাভ হয়ে উঠবে। বারবার কেবলই মনে হয়েছে, এটাও কি কোনো স্বপ্ন দেখার মতন বিষয়? স্বপ্ন হবে উদ্দাম, যেখানে আমি আমার মত করে মাথা তুলে দাঁড়াব- সবার থেকে অনন্য হয়ে।

হয়তবা এটাই অক্ষমতা। এই অক্ষমতাই আজ অবধি জানতে দিল না - শেষমেষ জীবনে কি হতে চাই। ঠেলাগাড়ির মত সময়ের পিঠে চড়ে চড়ে সম্পূর্ণ উদাসীনভাবে জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটিয়ে ফেলার পর আজ এসে ভাবছি, বাকি জীবনটাও ঠিক এভাবেই চলে যাবে হয়ত। সময় আমাকে বরাবরের মত ফাঁকি দিয়ে খুব আলতোভাবে জীবনের একটা ধাপ শেষে তুলে নিয়ে ফেলে দেবে আরেক ধাপে। আমি দৃষ্টিহীন জড়ের মত অনুসরণ করে যাব তাকে, কোনো প্রশ্ন করব না। স্বপ্ন দেখাও কোনদিন হয়ে উঠবে না আর। সুতরাং প্রশ্নও আসবে না তাকে বাস্তবে রূপদান করার।
আমাদের ঘটনাবিহীন,নিস্তরঙ্গ,নিরাপদ শামুকজীবন এইভাবে কেটে যাবে স্বপ্নহীনতার খেদে........স্বপ্নকে ধারণ করতে না পারার অক্ষমতায় অথবা অযোগ্যতায়.............
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৪১
৬১টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সফলতার গফ শোনান ব্যর্থতার দায় নেবেন না?

লিখেছেন সোমহেপি, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৪৩

মুক্তিযুদ্ধের ক্রেডিট নিতে চান ভাল কথা, লুটপাট ও পাকিস্তানের বিপরীতে ভারতের স্ত্রী হয়া ঠাপ খাওনের দায়টাও নেন। অপ্রকাশিত সবগুলো চুক্তিপ্রকাশ করেন। ইন্ডিয়ার হাসফাস দেখে মনে হচ্ছে হাসিনা তাগো অক্সিজেন ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীলপরী আর বাঁশিওয়ালা

লিখেছেন নিথর শ্রাবণ শিহাব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৮

আষাঢ়ের গল্পের আসর

সন্ধার পর থেকেই ঝুম বৃষ্টি। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে দিনের মত আলো করে। কান ফাটিয়ে দেয়া আওয়াজ। কারেন্ট নেই প্রায় তিন ঘণ্টার ওপর। চার্জারের আলো থাকতে থাকতে রাতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে ক্ষমার অফারের সাথে শর্তগুলো প্রচার হয়না কেন?

লিখেছেন আফনান আব্দুল্লাহ্, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫১

ইসলামে পাহাড়সম পাপও ক্ষমা পাওয়ার যে সব শর্টকাট অফার আছে, সেগুলোতে ব্ল্যাক হোলের মতো কিছু গভীর, বিশাল এবং ভয়ঙ্কর নোকতা যুক্ত আছে। কোনো এক অজানা, অদ্ভুত কারণে হাজার বছরের ইবাদত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:০১


২২ বছর ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, বিরোধীদের দমন—এরদোয়ানের শাসনযন্ত্র এতদিন অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। কিন্তু এবার রাজপথের তরুণরা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তুরস্ক এখন বিদ্রোহের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চেংগিস খান: ব্লগের এক আত্মম্ভরী, অহংকারী জঞ্জাল

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৪

ব্লগ জগতে অনেক ধরনের মানুষের দেখা মেলে—কেউ লেখে আনন্দের জন্য, কেউ লেখে ভাবনা শেয়ার করতে, আর কেউ লেখে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। কিন্তু তারপর আছে চেংগিস খানের মতো একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×