সে বেরিয়ে এসেছিল অঝোর বর্ষণের ভেতর থেকে।
সমস্ত আকাশ জুড়ে ঝুমঝুম শ্রাবণধারা নামছে তখন টানা মেঘের করতাল বাজিয়ে।
মেঘের চিঠি - গায়ে মেখে মেখে ধীরে ধীরে হাঁটছে সে।
তার আনত চোখের পাপড়িতে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিকণা জমে আছে মুক্তোসদৃশ। চোখের মণিতে মেঘের ছায়া.........আর এক রাজ্য কুয়াশার বাস। অদ্ভুত সব খন্ড খন্ড কুয়াশামেঘ তার চোখের ভেতর ত্রস্তপদে হেঁটে বেড়াচ্ছে ইতিউতি। ঝড় কবলিত প্রশান্ত মহাসমুদ্রের মত গভীর আর অশান্ত তার চোখ।
তার সাধ ছিল পাল তোলা নৌকো হবার। তাই সে চোখের ভেতর সমুদ্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল আপনমনে। তাকে কেউ বলে দেয়নি নীল নীল জলদানবদের জলদখলের ইতিবৃত্ত, শেখায়নি টিয়েপাখির বিদীর্ণ বক্ষে রাক্ষসরাজের প্রাণভোমরার বিনাশ-সাধন মন্ত্র অথবা আকাশ ক্যানভাসে দৃষ্টিপাতের কলাকৌশল। তার স্বপ্নদ্বারের চারপ্রান্তে সন্তর্পনে কেউ বৃত্তের মত ধীরে ধীরে এঁকে দিয়ে গেছে অভেদ্য লক্ষণরেখা। বৃক্ষ হয়ে মাথা তুলবার আগেই তাই সে লতাগুল্মের মত নুইয়ে পড়েছিল বাতাস দেবতার অভিশাপে। চন্দ্রবলয়ে ঘুরতে ঘুরতে এক রাতে যখন সে জ্যোত্স্নাচ্যুত হলো - তখন চিরল পাতারা গোপনে দীর্ঘশ্বাস ঝরালো না, আকাশ থেকে ঘটল না কোনো আত্মবিনাশী তারকার পতন।
পাহাড়িয়া মেঘেরা একে একে তার ছবি আঁকার খাতায় আঁকিবুকি করে ঢেকে দিয়ে গেল সব কল্পিত দৃশ্যখন্ড - যেখানে সে আকাশের ত্রিপলে লন্ঠন জ্বেলেছিল অজস্র তারাবাতি দিয়ে। শঙ্খচিলের ঠোঁটে ঢুকে পড়া বন্ধ্যা দুপুরগুলি তাকে নখদন্তহীন সিংহশাবকের জপমন্ত্র শুনিয়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল আলতো করে। বাস্তুহীন ধূলিকণার মত নিদ্রাঘোরে সে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরপাক খেতে লাগলো আকাশ বাতাস পাহাড়ের গায়ে, তার দিকভ্রান্ত চোখে বাতি জ্বাললো না কোনো আলোক অভিসারী নক্ষত্র।
তার নিদ্রাচ্ছন্ন চোখ অন্ধ হয়ে যাবার আগে শেষবারের মতন সে স্বপ্ন দেখেছিল- কোনো এক কাকভেজা ভোরে বৃষ্টির জল এসে ধুইয়ে দিয়ে যাবে তার চোখের ভেতর জমে ওঠা ঘন কুয়াশার স্তূপ। সেখানে কেউ সযত্নে এঁকে দিয়ে যাবে স্বপ্নবিলাসী ফ্লেমিঙ্গদের আকাশ বিহারের তৈলচিত্র আর তার জড়ভরত হাতের হাড়গুলো সহসা হয়ে উঠবে ঘাসফড়িঙ্গের ডানা।
তার পূর্বেই দৃশ্যখাদকের দল এসে চুরি করে নিয়ে গেল তার রংতুলি ও ক্যানভাস আর তার বদ্ধ চোখের আলোকে চিরদিনের মত বন্দী করে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল প্যাট্রিফায়েড শামুকের খোলে........