ক্লাস টু এ পড়ার সময় আব্বুর কাঁধে করে গ্রামের পথে পড়তে যেতাম,কখনো একটা বাঁশের উপর দিয়ে ছোট নদী পার হতে হত,কখনো থাকত কর্দমাক্ত রাস্তা।আব্বুর ইচ্ছা আমাকে zilla school এ ভর্তি করাবে।তাই দূরে মাস্টারের কাছে পড়াতে নিয়ে যেত।আব্বু জিজ্ঞাসা করত,বড় হয়ে কি হবা আব্বু?আমি অত কিছু বুঝতাম না।বলতাম,লাল টুকটুকে একটা কার কিনব,আম্মুকে লাল একটা শাড়ি পড়িয়ে বৌ সাজিয়ে আপনার পাশে বসিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়াবো।বাসায় ফিরে আব্বু আম্মুকে বলত এসব,আর দুজনেই খুব হাসত আর আমাকে জড়িয়ে আদর করতো।
দ্বিতীয় স্বপ্ন
ক্লাস ত্রি তে পড়া ছোট বাচ্চা বাবা মা ছাড়া একা থাকতে হত,শহরে আব্বুর বন্ধুর বাসায় এক রুমে।সপ্তাহে দুই দিন হইত আব্বু আমার সাথে,মাসে দুই দিন আমি গ্রামের বাড়ি যেতাম।শহরে ছোট সেই রুমে দম বন্ধ হয়ে আসত মাঝে মাঝেই।বিমানের প্রতি প্রবল আকর্ষণ তখন থেকেই।বিমান যাওয়ার শব্দ শুনলেই দৌড়ে বেরিয়ে পরতাম।মনে হত বিমানে চড়ে তাড়াতাড়ি আম্মুর কাছে যাব।বিমান চালক রা যে পাইলট এটা জানার পর বহুদিন পাইলট হউয়ার প্রবল ইচ্ছা মাথায় থেকেছে।ক্লাসে স্যার যখন ই জিজ্ঞাসা করত ভবিষ্যতে কি হতে চাও?দ্রুত দাঁড়িয়ে বলতাম,পাইলট।
তৃতীয় স্বপ্ন
ক্লাস নাইনে উঠার সময় উচ্চতর গণিত আর বায়োলজি মধ্যে কোনটা মেইন বিষয় করবো!!!একটা করলে ইঞ্জিনিয়ার আর একটাতে ডাক্তার হওয়া যাবে।এমন ভাব যেন দুনিয়াতে আর কোন পেশা নেই।বাবা মা এর ইচ্ছা আর বায়োলজি প্রতি ভীতি ইঞ্জিনিয়ার হউয়ার ইচ্ছা আমার উপর যেন জর করে চাপিয়ে দেয়া হল।স্কুল আর কলেজ লাইফে কেউ জিজ্ঞাসা করলেই জোর গলাই বলতাম,ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।
চতুর্থ স্বপ্ন
কলেজ লাইফ থেকেই মাথাই সঙ্গীর কথা একটু একটু করে ঘুরত।ভাবতাম,সুন্দর একটা বৌ থাকবে।বাবা মা বোনের সাথে বৌ নিয়ে থাকবো।সুন্দর সুখের সংসার।অর্থের প্রতি লোভ ছিল না।মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল।অন্তত সুখে জীবন যাপন করা যায়।সংসারে শান্তি থাকে।মধ্যবিত্তের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়ার পিছনে আমার বাবা,মা,বোন নিয়ে সুখই সংসারের ভূমিকা ছিল।অর্থকষ্ট থাকলেও পরিবারে সুখ শান্তির কমতি ছিল না।আমার এই স্বপ্ন টা অনেকদিন ই বেড়ে উঠেছে মনের ভিতরে।
পঞ্চম স্বপ্ন
ভার্সিটি লাইফে এসে অর্থের টানাপোড়ন কাকে বলে টের পেলাম।ছোট বোনের পড়ার খরচ বেড়ে জাওয়ার কারণে কি পরিমাণ কষ্ট হত আব্বুর তা বুঝতাম।আমি ও কম টাকা খরচ করে চলতাম।হাজার সমস্যাতেও বাসায় টাকার চাপ দিতাম না।অর্থকষ্ট টের পেয়েছি ভালমত।
শেষ পর্যন্ত একজন সঙ্গী পেলাম।কলেজ লাইফ থেকে পরিচয় থাকলেও পরিণয় হল অনেক দেরিতে।প্রেমিক প্রেমিকার দিন ভালই যাচ্ছিলো।বাবা মা এর ইচ্ছা,ছেলে ইঙ্গিনিয়ার হবে সে ইচ্ছা টা ও পূরণ হওয়ার পথে।আমার প্রেমিকা আর আমি সমবয়সী কিন্তু মাঝখানে আমার পড়াশোনা এক বছর গ্যাপ পরাতে আমি পিসিয়ে যাই কিন্তু তা সম্পর্কে প্রভাব ফেলে নি।মধ্যবিত্তের মানসিক দন্দের কচলা যে কতটা মারাত্মক হতে পারে তা হারে হারে টের পেলাম।তারপর ও স্বপ্ন তা রয়েই গেছে।ইঞ্জিনিয়ার হয়ে চাকরি করবো।বাবা মা বোন সাথে বৌ নিয়ে সুখের সংসার।
সময় গড়াই,আমিও বুঝতে পারি এখনকার যুগের মেয়েদের নিয়ে যৌথ পরিবার চিন্তা করা কতটা অবাস্তব।স্বপ্ন ও পরিবর্তন হয়।দুটো পরিবার নিয়েই থাকতে হবে তাতেই শান্তি।যা কখনো মনে শান্তি দিতে পারে নি।বুকে খচখচ করত।এখন ত প্রেমিকা ই নাই।সম্পূর্ণ একা।স্বাধীন।
বর্তমানের স্বপ্ন
মধ্যবিত্তের উপর চরম ঘৃণা জমে গেছে(ঘৃণা জমার পুরো কারণ পোস্টে উল্লেখ নাই)।মধ্যবিত্তের চিন্তা ভাবনার উপর ঘৃণা জমে গেছে।যদিও আমি এখন ও মধ্যবিত্তের মাঝেই।আর থাকতে চাই না।আর কিছুদিন পর ছাত্রজীবন শেষ।উঁচুতে উঠতে হবে অনেক উঁচুতে।সে পথে খুব বেশি সময় নিতে চাই না।মাত্র কয়েকবছর সময়।বাবা মা আমার জন্য যত বেশি কষ্ট করেছেন তার চেয়েও বেশি সুখে রাখতে চাই তাদের।অর্থকষ্ট কি জিনিস তা আমি তাদের আর বুঝতে দিতে চাই না।
আর আমার জন্য আলাদা কিছু চাই।নিজস্ব ফ্লাট।একা আমার জন্য।সে জীবনটা হবে শুধু আমার।স্বাধীনতা থাকবে শুধু আমার।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ নতুন কিছু ঘটলেই হইত আবার বর্তমানের স্বপ্নের পরিবর্তন হবে।যদিও সম্ভবনা খুব কম।(ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)