বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে আওয়ামী লীগ দলটি এখন ফুটবলের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ না পুনর্বাসন ইস্যুতে বড়ো ছোটো সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যু কে টারগেট করে সামনের দিনে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে। বিএনপিকে তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ ইস্যুতে চাপে ফেলতে চাইবে। সেনাপ্রধান সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইনক্লুসিভ নির্বাচনের ব্যাপারে জোর দিলেও বলির পাঁঠা কেবল সেনাপ্রধান কে বানানোর চক্রান্ত চলছে । সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কে পুনর্বাসন করতে চায় এই দাবী তুলে জনগণকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চাইছে একটি চক্র। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া বা না হওয়ায় আসলে সেনাপ্রধানের দায় কতটুকু ?
ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন সংশোধন করেছে। আওয়ামী লীগ সেকেন্ড টাইম ক্ষমতায় এসে একবার ৭২ সালের আইসিটি আইন সংশোধন করেছিলো। তাদের এই আইন সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মানবতা বিরোধী দল হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কে নিষিদ্ধ করা। ইন্টেরিম সরকার সংশোধনের মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধে দলের বিচারের যে বিধান বিগত সরকার যুক্ত করেছিলো তা বাতিল করে দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইন সংশোধনের সময় প্রাথমিক ভাবে সুপারিশ করা হয়েছিলো কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করে অন্তত দশবছরের জন্য মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হএল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রহিত করার। কিন্তু চূড়ান্ত সংশোধনের সময় সেই সুপারিশ গ্রহণ করা হয় নি। অর্থাৎ মানবতা বিরোধী অপরাধে রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য কোনো আইন নেই। নির্বাহী আদেশে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের মাধ্যমে সুযোগ থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা দূরুহ ব্যাপার ! জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির কে জুলাই অভ্যুত্থানের দুইদিন আগে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বিচারিক প্রক্রিয়া ব্যতীত নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হলে তুমুল সমালোচনার জন্ম নিবে। সরকার ও কিংস পার্টি নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। হাসনাত আবদুল্লাহর আজকের বক্তব্য থেকে এই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে তাহলে কে বাধা দিচ্ছে ? সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান কি সরকার কে আইন সংশোধনের জন্য চাপ দিয়েছিলো ? এই এখতিয়ার উনার আছে ? সরকার প্রধান এই মুহুর্তে আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করে দিক তখন যদি সেনাপ্রধান বাধা দিতে যায় তবে জনসম্মুখে তা প্রকাশ করা হউক। সেনাপ্রধান কে দীর্ঘদিন ধরেই টারগেট করা হচ্ছে কারণ উনার কারণে অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার যে স্বপ্ন তা ভন্ডুল হতে চলেছে। সেনাপ্রধান একেবারে শুরু থেকে বলে আসছেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করার জন্য। ইহা অনেকের হজম হচ্ছে না। ফরমালি ও ইনফরমালি ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিবর্গের সুযোগ সুবিধা কমে যাবে যদি একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আর তাদের পথের প্রধান কাঁটা হচ্ছেন জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। একটি চক্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাইছে। একদিকে প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না বলে মত দিচ্ছেন অন্যদিকে ইন্টেরিম সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আওয়ামী লীগ কে আর রাজনীতি করতে দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিচ্ছেন । অর্থাৎ খোদ উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে। জনগণ তাহলে কার কথা বিশ্বাস করবে ?
আওয়ামী লীগ ইস্যুতে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হউক, নির্বাচন পিছিয়ে যাক এমনটাই চাইছে একটি গ্রুপ। সেই গ্রুপে রয়েছেন কিছু সোশ্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জা, পাতি রাজনৈতিক নেতা ও আমলারা। সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান কে সরাতে তারা বদ্ধপরিকর। তাদের ইচ্ছা হলো ১/১১ এর মতো সরকার বা সেনা শাসন অথবা সবচাইতে বেশি আলোচনা হচ্ছে বিপ্লবী সরকার গঠন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় স্বাদ নেওয়া।
এনসিপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলো। সেখানে তারা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। এত বড়ো ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবী না করে শুধু নিন্দা জানানো কম হয়ে গেছে। তাদের দলের আহবায়ক তো কিছুদিন আগেও সরকারের অংশ ছিলো। তখন সরকারের আইন সংশোধনের প্রতিবাদ কেন করা হয়নি! এনসিপির উচিত ছিলো প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও দেয়া। বাকি দুইজন সমন্বয়ক যারা সরকারে আছে তাদের পদত্যাগ করা। যেহেতু কোন ঘটনা দৃশ্যমান নয় তাই সন্দেহ হতে পারে ইহা কি আবার কোনো মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ ? শাহবাগে আজ গণজাগরণ মঞ্চ ২.০ এর মতো কর্মসূচী দেখা গিয়েছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবীতে। এনসিপি লাগাতার কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। সব কিছু কেমন জানি তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে !