somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একই গল্প, ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক (পাহাড়ী গুহায় সাত ঘুমন্ত যুবক)

১৮ ই মে, ২০১৩ ভোর ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইপহেসোস- গ্রীক ভাষায় শহরটিকে এই নামেই ডাকা হয়, কিন্তু তুর্কীতে বলা হয় ইফেস। এই ইফেস ছিলো প্রাচীন গ্রীকের একটি শহর। পরে রোমান সাম্রাজ্যের বড় শহরে পরিণত হয়। বর্তমানে এই শহরটি তুরস্কের ইজমির প্রদেশে অবস্থিত। এই ইফেস শহরেই আনুমানিক ২৫০ খ্রীষ্টাব্দে এক ঘটনা ঘটেছিলো। আগে সেই ঘটনাটি বলি-

তখন ইফেস ছিলো রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে, আর সেই সময়ে রোমান সম্রাট ছিলেন গাইয়াস মেসসিয়াস কুইন্টাস ডেসিয়াস অগাস্টাস- বিশাল বড় নাম! সংক্ষেপে সম্রাট ডেসিয়াস নামেই আমরা ডাকতে পারি। তিনি ছিলেন কড়া খ্রিষ্টান বিরোধী সম্রাট এবং মূর্তিপূজক। তিনি যারা খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী ছিলেন তাদের গণহারে হত্যা করতে লাগলেন। এই কাজেই তিনি এলেন ইফেস শহরে। তৈরী করলেন মন্দির, স্থাপন করলেন বহু মূর্তি, আদেশ দিলেন শহরের সবাইকে এই মূর্তিগুলোকে পূজা করার এবং পশু উৎসর্গ করতে। যারা এই আদেশ অমান্য করতে লাগলো, নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হতে লাগলো।

ঠিক তখন ইফেস-এ সাতজন ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টান যুবক ছিলেন- ম্যাক্সিমিয়ান, মালক্যাস, মারসিয়ান, ডিওনিসিয়াস, জন, সেরাপিওন এবং কন্সট্যানটাইন। তারা ছিলেন এক ইশ্বরে বিশ্বাসী খ্রীষ্টান এবং সকলেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তারা সম্রাটের আদেশ অমান্য করে বাড়িতেই অবস্থান করতে থাকলেন এবং মূর্তিগুলোকে পূজা করতে অস্বীকৃতি জানালেন। যথাসময়ে সম্রাটের কাছে এই খবর পৌঁছে গেলো। এই সাত যুবককে সম্রাটের সামনে আনা হলো এবং তারা একেশ্বরবাদ বাদ দিয়ে পৌত্তলিকতার অনুসারী হতে আবারো অস্বীকৃতি জানালেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় সম্রাট সঙ্গে সঙ্গে এদেরকে হত্যা করার আদেশ দিলেন না। তিনি এই সাতজন যুবককে আরো একদিন ভাবার সুযোগ দিলেন।

সাতজন যুবক ভাবাভাবির দিকেই গেলেন না। তারা তাদের সব সম্পত্তি গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেন এবং ইফেস শহরের নিকটবর্তী সেলিওন পাহাড়ের এক গুহায় আত্মগোপন করলেন। মালক্যাস ছদ্মবেশে শহরের বাজারে গেলেন কিছু শুকনো খাবার আনার জন্য। বাজারে শুনলেন, সম্রাট তাদের খুঁজছেন। তিনি তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে গুহায় আসলেন। সেখানে খাওয়ার পর এক ইশ্বরের প্রার্থনা করতে করতে তারা সকলেই একসময় ঘুমিয়ে পরলেন। ততক্ষণে সম্রাট ডেসিয়াস এই সাতজনকে আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি এদের বাবা-মাকে ধরে আনলেন, তারাও কিছু বলতে পারলেন না। শুধু বললেন, এই সাতজন যুবক তাদের সমস্ত সম্পত্তি গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছেন। রাগান্বিত, বিক্ষুদ্ধ সম্রাট সন্দেহ করলেন যে, যুবকরা হয়তোবা সেলিওন পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু গুহার অভ্যন্তরভাগ বিশাল এবং অন্ধকার হওয়াতে কেউ ভিতরে ঢুকে খোঁজার সাহস করেননি। তাই সম্রাট এক বিশাল বড় বড় পাথর দিয়ে গুহামুখ বন্ধ করে দিলেন, যাতে এই সাতজন যুবক যদি গুহাতে আশ্রয় নেন, তাহলে ক্ষুধায় যেনো মৃত্যুবরণ করেন। সম্রাটের বাহিনীতে দুজন ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টান যুবক ছিলেন, থিওডোরাস এবং রুফিনাস, তারা নিজেদেরকে গোপন করে রাখতে পেরেছিলেন। তারা গোপনে বড় পাথরটিতে এই সাতজন যুবকের নাম এবং ঘটনার বিবরন লিপিবদ্ধ করে রাখলেন।

কিন্তু ইশ্বরের ইচ্ছায় সম্রাট ডেসিয়াস পরের বছরেই, অর্থাৎ ২৫১ খ্রীষ্টাব্দে নিজেই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে খুন হয়ে গেলেন। সেই সাতজন যুবক খুন হলেন না, কিন্তু তাদের কি অবস্থা হলো- সেটাও আর কেউ জানতে পারলেন না। ধীরে ধীরে একসময়ে দৃশ্যপটের আড়ালে হারিয়ে গেলেন সেলিওন পাহাড়ের এক গুহায় আত্মগোপনকারী সেই সাতজন ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টান যুবক।

সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সেই ঘটনার পর একশত চুরাশি বছর পেরিয়ে গেলো। রোমান সাম্রাজ্যে তখন খ্রীষ্টান ধর্মের শুধু প্রচারই হচ্ছে না, ততদিনে তা রাস্ট্রীয় ধর্মও বটে। রোমের ক্ষমতায় তখন সম্রাট থিওডেসিয়াস দ্বিতীয়, আর সময়কালটা তখন ৪৩৪ খ্রীষ্টাব্দ। ধার্মিক সম্রাট থিওডোসিয়াস তখন মারাত্মক এক সংকটের মুখে। মৃত্যুর পর শেষ বিচারের দিনে মানুষের পুনরুজ্জীবন হবে না- এই অধর্মীয় মতবাদ তখন প্রচার পাওয়া শুরু হয়েছে, বিশেষ করে ইফেসেই এর প্রচলনটা হচ্ছিল বেশি করে। ঠিক সেই সময়ে এক ইফেসবাসী, নাম ছিলো ডালিয়াস, তিনি ছিলেন সেলিওন পাহাড়ের মালিক, সিদ্ধান্ত নিলেন সেই পাহাড়ে একটি আস্তাবল তৈরী করবেন। তার লোকেরা আস্তাবল তৈরীর জন্য পাথর খোঁজার সময় দেখলেন এক গুহার প্রবেশপথ তৈরী করা পাথরদিয়ে বন্ধ করা। তারা সেই পাথরগুলো দিয়ে আস্তাবল তৈরী করার জন্য পাথরগুলো সরাতে লাগলেন। সেই দিনের মধ্যে একজন বের হবার মতো পাথর সরানো হলে, তারা কাজ বন্ধ রেখে চলে যান, পরের দিন এসে আবার কাজ শুরু করবেন বলে। সেদিনই সেই সাতজন যুবকের ঘুম ভাঙ্গলো। তাদের ঘুম এমনভাবে ভাঙ্গলো, যেনো তাদের কাছে মনে হলো তারা মাত্র একরাত ঘুমিয়েছেন। ঘুম থেকে উঠে তারা মালক্যাসকে জিজ্ঞেস করলেন, গতরাতে বাজারে কি শুনে এসেছেন তিনি? মালক্যাস বললেন, “ডেকিয়াস আমাদের খুঁজছে, খুঁজে পেলে আমাদের হত্যা করবে”, “না, সেটা আমরা হতে দিতে পারি না,” সঙ্গে সঙ্গে বললেন ম্যাক্সিমিয়ান। খাবারের প্রয়োজনে তারা আবার মালক্যাসকে পাঁচটি মুদ্রাসহ বাজারে পাঠালেন, আর সর্বশেষ খবর নিয়ে আসতে বললেন। মালক্যাস পাঁচটি মুদ্রা নিয়ে বাজারে এলেন। গুহা থেকে বের হবার সময় গুহামুখে বিশাল বিশাল পাথরগুলো দেখে মালক্যাস খুব অবাক হলেও, তিনি শহরের দিকে এগিয়ে গেলেন। আরো অবাক কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছিলো! যখন শহরের ফটকের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, ফটকে দেখলেন ক্রস চিহ্ন- খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতীক। তিনি অন্য ফটক দিয়ে শহরে ঢুকতে চাইলেন, সেখানেও একই চিহ্ন দেখলেন, দেখলেন শহরের সবগুলো প্রবেশ ফটকেই।

মালক্যাস ভাবলেন, তিনি স্বপ্ন দেখছেন! চোখ কচলে শহরে ঢুকলেন এবং রুটি কেনার জন্য বেকারির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। পথে তিনি প্রায় সবার মুখে যিশুর কথা শুনতে পাচ্ছিলেন। তিনি আবারো অবাক হলেন। গতকাল পর্যন্ত যিশুর নাম মুখে নেওয়া নিষিদ্ধ ছিলো, আর আজ সবার ঠোটে তাঁর নাম! তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, তিনি ইফেস-এ আছেন! একজন পথিককে জিজ্ঞেস করলেন, শহরের নাম কি? ‘ইফেস’ শুনে তিনি আবারো বিভ্রান্ত হলেন! বেকারীতে যখন রুটি কেনার জন্য মুদ্রা দিলেন, দোকানী মুদ্রাটি দেখে অদ্ভূতভাবে তাকিয়ে রইলেন, আশেপাশের দোকানীদের সাথে ফিসফাস করতে লাগলেন। মালক্যাস ভাবলেন, তিনি হয়তোবা ধরা পড়ে গেছেন, দোকানী বোধহয় তাকে সম্রাটের কাছে ধরিয়ে দিবে। এই চিন্তা করে তিনি যখনই দোকান ছেড়ে চলে আসতে যাবেন, দোকানী খোপ করে তার হাত ধরলেন, “তুমি যেই হও না কেনো, মনে হচ্ছে তুমি এক গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছ। আমাদেরকে সেই গুপ্তধন দেখাও এবং আমরা অংশীদার হবো”, মালক্যাস ভীষন ভয় পেয়ে গেলেন। কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ততক্ষনে দোকানীরা তার গলায় দড়ি লাগিয়ে শহরের মাঝখানে টেনে নিয়ে গেলো। আশেপাশের বহু মানুষও জমে গেলো। মালক্যাস নিজের নির্দোষিতা বার বার বলছিলেন এবং ভীড়ের মধ্যে পরিচিত মুখ খুঁজছিলেন। কিন্তু তাকেও কেউ চিনতে পারছিলেন না, তিনিও কাউকেই চিনতে পারছিলেন না।

এরই মধ্যে শহরের বিশপ সেইন্ট মার্টিন এবং গভর্নর এন্টিপাটেরের কাছেও এই খবর পৌঁছে গেলো। তারা মালক্যাসকে তাদের কাছে নিয়ে যেতে বললেন। সেখানে মালক্যাসের কাছে জানতে চাইলেন, কোথায় সে গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছে। “আমি কোথাও গুপ্তধন খুঁজে পাই নি, আর এই মুদ্রাটি আমার, কোনো গুপ্তধন নয়”।

- তাহলে তুমি কোথা থেকে এসেছ?
- আমি ইফেস-এরই সন্তান।
- তাহলে তোমার বাবা-মা বা কোন আত্মীয়-স্বজন নিশ্চয়ই আছেন এই শহরে?
- নিশ্চয়ই।

মালক্যাস তখন তার বাবা-মায়ের নাম বললেন, কিন্তু কোনো ব্যক্তিই তাদেরকে চিনতে পারলেন না। গভর্নর ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বললেন, “এতোবড় সাহস তোমার! যে মুদ্রার গায়ে একশত চুরাশি বছর আগের তারিখ খোদাই করা, যে মুদ্রা ডেকিয়াসের শাসনামলের শেষের দিকের মুদ্রা, সেটা তোমার মুদ্রা হয় কি করে! আর বাবা- মা বা আত্মীয় হিসেবে যাদের নাম বলছ, তারা ছিলো এই এলাকারই সম্ভ্রান্ত পরিবার, কিন্তু সে তো শ’খানেক বছর আগে মারা গিয়েছেন! তুমি কি আমাকে বোকা পেয়েছ? আমি তোমাকে কঠোর শাস্তি দিবো”।
মালক্যাস প্রমাদ গুণলেন। বিভ্রান্ত কন্ঠে তিনি বললেন, “আমি আপনাদের সব প্রশ্নেরই জবাব দিবো, তার আগে আপনারা আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিন। সম্রাট ডেকিয়াস এখন কোথায় গেছেন?

- ডেকিয়াস নামে এখন কোনো সম্রাট নেই। তিনি বহু বছর আগে মারা গেছেন (বিশপ জবাব দিলেন)।
- আমি যতই শুনছি, ততই বিভ্রান্ত হচ্ছি। আমি আপনাদেরকে আমার বন্ধুদের কাছে নিয়ে যাবো, যারা গতকালকেই নিষ্ঠুর সম্রাট ডেকিয়াসের ভয়ে সেলিওন পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছি।
তখন মালক্যাস তাদেরকে নিয়ে গুহার উদেশ্যে রওয়ানা দিলেন, তার সাথে সাথে এলাকার অধিবাসীরাও পিছু নিলেন। প্রথমে গুহার ভিতরে মালক্যাস প্রবেশ করলেন। তিনি তার বন্ধুদের সবকিছু খুলে বললেন। এদিকে গুহামুখের পাশের এক পাথরের গায়ে উৎকীর্ণ লিপি বিশপের নজরে আসে। তিনি পড়া শুরু করলেন থিওডোরাস এবং রুফিনাসের লিখে যাওয়া সেই সাত যুবকের গুহায় জীবিত আটকে রাখার কাহিনী। বিশপসহ এলাকার অধিবাসীদের কাছে তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো। তারা ইশ্বরের গুণগান করতে লাগলেন। কিছুক্ষন পর যখন বিশপ গুহার ভিতরে প্রবেশ করলেন, দেখলেন মালক্যাসসহ সাতজন সুদর্শন যুবক গুহার গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছেন। দ্যুতি ছড়াচ্ছে যেনো তাদের মুখমন্ডল থেকে।

একসময় এই খবর পৌঁছে গেলো সম্রাট থিওডোসিয়াসের কাছে। তিনিও এই যুবকদের সাথে দেখা করার জন্য ইফেস-এ শহরে এলেন। যুবকদের সাথে কথা বললেন, তাদেরকে সম্মান দেখালেন। ম্যাক্সিমিয়ান বললেন, “মানুষ মৃত্যুর পর শেষ বিচারের দিনে পুনরুজ্জীবিত হবে, এটাই ইশ্বরের ইচ্ছা। সেই স্বাক্ষী দেবার জন্যই হয়তোবা তিনি আজ আমাদের জাগিয়ে তুলেছেন”।
এরপর যুবকরা আবার ধ্যানমগ্ন হলেন, এবং এবার সত্যি সত্যি মারা গেলেন। সম্রাট থিওডোসিয়াস গুহার উপর পাথর দিয়ে এক বিশাল সৌধ নির্মান করতে চাইলেন। কিন্তু তিনি রাতে সেই যুবকদের স্বপ্ন দেখলেন। তারা স্বপ্নে সম্রাট থিওডোসিয়াসকে বললেন, সেখানে সৌধ না করে একটি ইবাদতখানা করতে। সম্রাট পরে সেটাই করেন। যুগ যুগ ধরে সেটা এক তীর্থস্থান হিসেবেই পরিগণিত হয়ে আসছিলো।

অসাধারণ ধর্মীয় ভাবধারাপুষ্ট একটি গল্প। গল্পটিতে দেওয়া সময়কাল অনুযায়ী যুবকদের ঘুম ভেঙ্গেছিলো ৪৩৪ খ্রীষ্টাব্দের দিকে। লক্ষ্যনীয় ব্যাপার এই যে, গল্পটি ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টান যুবকদের নিয়ে হলেও এটি কখনই ওল্ড টেষ্টামেন্ট বা নিউ টেষ্টামেন্টের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এখানে দেখা যাচ্ছে প্রাচীনকালে ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টানরা যিশুকে খোদার সন্তান হিসেবে গন্য করতেন না, তারা প্রকৃত একেশ্বরবাদেরই উপাসনা করতেন।

গল্পটি প্রথম বর্ণনা করেন ইফেসেরই বিশপ স্টেফান অব ইফেস, ৪৪৮ থেকে ৪৫১ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে। ঘটনাটি ঘটার প্রায় ১৪ বছর তিনি বর্ণনা করেন, সম্ভবত গ্রীক ভাষায়। আর এই ঘটনা সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ করেন এক সিরিয়ান বিশপ, জ্যাকোব অব সেরুগ (জীবনকালঃ ৪৫২-৫২১ খ্রীষ্টাব্দ), যিনি জন্মগ্রহনই করেন ঘটনাটি ঘটার কয়েক বছর পর। তিনি ৪৭৪ খ্রীষ্টাব্দের দিকে ধর্মোপদেশগুলো কবিতার আকারে লেখা শুরু করেন, সেখানেই এই সাত ঘুমন্ত যুবকের কথা তিনি লিখেন। ঠিক কতসালের দিকে এটি লিখেন, সেটা বলা কষ্টসাধ্য। জ্যাকোব অব সেরুগের লেখাটা ছিলো সিরিয়ান ভাষায়। উপরের গল্পটির উৎস হচ্ছে জ্যাকোব অব সেরুগের লেখা। এরপর গ্রেগরি অব টোরাসই বোধহয় সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি এই ঘটনাকে ৫২৫ খ্রীষ্টাব্দের কিছু পরে তার ল্যাটিন ভাষায় লিখিত Gloria Martyrum-এ লিখে ইউরোপবাসীর কাছে পরিচিত করে তুলেন।

এর বেশকিছু বছর পরেই মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানে গুহাবাসী কয়েকজন যুবকদের নিয়ে একটি সূরা নাযিল হয়। কোরান শরীফের আঠার নম্বর সূরা কাহ’ফের ৯ থেকে ২৬ আয়াত পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা এই গুহাবাসীদের সম্পর্কে বলেছেন। কিন্তু কোরানে বর্নিত গুহাবাসী এবং উপরের বর্নিত গুহাবাসী আদৌ একই কি না, সেই বিষয়ে আলোচনা সবশেষে করা যাবে, তার আগে আরো অন্যান্য বর্ণনায় আসি।

গ্রেগরি অব টোরাসের পর মধ্যযুগে এই কাহিনী সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয় দ্য গোল্ডেন লিজেন্ড অব জ্যাকোবাস ডে ভোরাগিনের মাধ্যমে। সেই সময়কাল পর্যন্ত কাহিনীর সত্যতা নিয়ে খ্রীষ্টান সমাজে কারোই কোনো সন্দেহ ছিলো না। কিন্তু ষোড়শ শতাব্দীর দিকে প্রোটেষ্ট্যান্টবাদের কারণে এবং ইউরোপে রেনেসার জন্য কাহিনীর সত্যতা নিয়ে প্রথম সন্দেহ দেখা দেয়। সিজার বারোনিয়াস, রেনেসা যুগের একজন পন্ডিতই শুধু নন, ল্যাটিন চার্চের একজন কার্ডিনাল হিসেবেই প্রথম ব্যক্তি তিনি, যিনি গুহাবাসীদের ঘটনাকে ‘অপ্রামাণিক’ বলেন। এরপর থেকে ইউরোপ আর কখনোই এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, দিয়েছে মিথ বা লিজেন্ড বলে। এই কাহিনীর মূল থিমের উপর ভিত্তি করে সাহিত্য জগতে পরবর্তীতে অনেক গল্পও লেখা হয়েছে। এদের মধ্যে খুব বিখ্যাত হচ্ছে ওয়াশিংটন আরভিং-এর ‘রিপ ভ্যান উইংক্যাল’, এবং এইচ জি ওয়েলসের ‘দ্য স্লিপার এওয়েকস’।

রিপ ভ্যান উইংক্যালঃ

কাহিনীর সূত্রপাত আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধের আগে। নিউইয়র্কের কাটস্কিল পাহাড়ের পাদদেশে সুন্দর একটি গ্রাম ছিলো তখন, সেখানে বাস করতেন এক ডাচ বংশদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান, নাম রিপ ভ্যান উইংক্যাল। রিপ খুব বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন, কিন্তু তিনি পছন্দ করতেন নির্জনে বনে-বাদাড়ে কাজ করতে। তাই বলে বাচ্চাদের সাথে যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো, তা নয়, বরঞ্চ বাচ্চারা তাকে খুব পছন্দ করতো এবং তিনি বাচ্চাদের খেলনাও উপহার দিতেন। যদিও লাভজনক কাজ এড়িয়ে যেতেন বলে তার খুঁতখুঁতে স্ত্রী সবসময় তাকে বাড়িতে থাকতে দিতেন না।

এক শরতের দিনে তার পোষা কুকুরটি নিয়ে রিপ পাহাড়ে হাটতে বেড়াচ্ছিলেন, তখন পিছন থেকে কেউ একজন তার নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকলেন। রিপ দেখলেন, ডাচ পোশাক পরা এক ব্যক্তি পিপা নিয়ে পাহাড়ে উঠছেন এবং রিপের সাহায্য চাইছেন। একে অপরের সাথে কোনো কথা না বলে তারা পাহাড়ে উঠতে লাগলেন এবং গ্যালারীর মতো এমন এক জায়গায় আসলেন, সেখানে রিপ দেখলেন, ভালো পোশাক সজ্জিত কিছু দাড়িওয়ালা লোক নিরবে নাইন-পিন নামে একটি খেলা খেলছে। যদিও ওদের কারো সাথে রিপের কথা হয় নি, রিপ জিজ্ঞাসাও করেনি – ওদেরই একজন কিভাবে তার নাম জেনেছে, তবুও রিপ তাদের জন্য রাখা মদ থেকে কিছু মদ খেয়ে ফেলেন। এবং তাড়াতাড়ি তিনি ঘুমে তলিয়ে যান।

তিনি যখন ঘুম থেকে উঠেন, তখন দেখেন এটা সকাল। তার সাথের বন্দুকটিতে জং ধরে গিয়েছে, তার দাড়ি এক ফুটের মতো লম্বা হয়ে গেছে এবং তার কুকুরটিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। রিপ তার গ্রামে ফিরে গেলেন, সেখানে কাউকে চিনতে পারলেন না। আশেপাশের মানুষজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন, তার স্ত্রী মারা গেছেন এবং তার বন্ধুরাও হয় কোনো এক যুদ্ধে মারা গেছেন বা কোথাও চলে গেছেন। তিনি বিপদে পড়ে গেলেন, যখন নিজেকে রাজা তৃতীয় জর্জের অনুগত প্রজা বলে দাবী করেন। তিনি তখনো জানতেন না আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, গ্রামের সরাইখানাতে রাজা জর্জের ছবির পরিবর্তে জর্জ ওয়াশিংটনের ছবি লাগানো হয়েছে। তিনি আরো অবাক হলেন যখন দেখলেন, আরো একজনকে ডাকা হচ্ছে রিপ ভ্যান উইংক্যাল নামে।

অবশেষে রিপ জানতে পারলেন, পাহাড়ে যেসব মানুষদের সাথে তার দেখা হয়েছিলো তারা ছিলেন বিখ্যাত অভিযাত্রী হেন্ড্রিক হাডসনের নাবিকদের ভূত বা আত্মা এবং রিপ প্রায় বিশ বছর পাহাড়ে ঘুমিয়েছিলেন। যাকে রিপ ভ্যান উইংক্যাল নামে ডাকা হচ্ছিলো, সে হচ্ছে এই রিপের ছেলে, এখন বড় হয়ে গেছে। গ্রামের এক বৃদ্ধ রিপকে চিনতে পারেন এবং রিপের মেয়ে তাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে রিপ অলস সময় কাটাতেন, আর সবাইকে তার কাহিনী বলতেন। যুদ্ধের বিভীষিকা দেখতে হয় নি বলে সবাই রিপের ভাগ্যকে হিংসে করতেন!

দ্য স্লিপার এওয়েকসঃ

একজন মধ্য বয়স্ক ইংলিশম্যান গ্রাহাম তার ইনসোমনিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ খাচ্ছিলেন, তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ১৮৯৭ সালে এক জাদুপূর্ণ পরিখাতে পতিত হোন এবং ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে দুইশত তিন বছর পর তিনি ঘুম ভেঙ্গে উঠেন এবং আবিষ্কার করেন যে, তিনি তার ভাই এবং বন্ধু হতে এক বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন। সেই সব সম্পত্তি এক ট্রাষ্টকে দেওয়া হয়েছে এবং সেই ট্রাষ্ট বর্তমানে পৃথিবী শাসন করছে। এই অবস্থাতেই এই সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসের কাহিনী সামনের দিকে এগিয়ে চলে।

এইতো গেলো বর্তমান যুগের সাহিত্য। কিন্তু মিথলজির জগতেও এই ধরনের ঘটনা অনেক দেখতে পাওয়া যায়। সপ্তম বা ষষ্ঠ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দে (এই ঘটনা কিন্তু গুহাবাসীর ঘটনার অনেক আগে!) ক্রীট দ্বীপে এপিমেনিডেস নামে একজন অর্ধ-পৌরাণিক গ্রীক গণক এবং দার্শনিক কবি ছিলেন। তিনি এক প্রচন্ড গরমের দিনে তার ভেড়াগুলোকে মাঠে চড়ানোর সময় প্রচন্ড ক্লান্তিতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান এবং একটি গুহাতে গিয়ে ঘুমিয়ে যান। সাতান্ন বছর পর তিনি ঘুম থেকে উঠেন, এবং দেখেন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার যে ভাইকে তিনি তরুণ দেখে গিয়েছিলেন, তিনি এখন ধূসরাভ প্রবীণ! তিনি ১৫৭ বা ২৯৯ বছর বয়সে মারা যান। তার ‘সকল ক্রীটান মিথ্যাবাদী, এবং এপিমেনিডেস একজন ক্রীটান’—উক্তিটি ‘প্যারাডক্স অব লায়ার’-এর উৎপত্তি করে।

গ্রীক পুরাণে এন্ডিমিয়ন নামে একজন অসম্ভব সুন্দর যুবকের কথা শোনা যায়। তার পিতা মাতা কে ছিলেন, সেটা জানা না গেলেও, এটুকু জানা যায়, তিনি ছিলেন এলিসের রাজা। এক মিথ অনুযায়ী, দেবরাজ জিউস তাকে বর দিতে চাইলে, তিনি আজীবন ঘুমিয়ে থাকার বর চান, যাতে আজীবন তার সৌন্দর্য অটুট থাকে। অন্য মিথ অনুযায়ী, এন্ডিমিয়নের এই দীর্ঘ ঘুম ছিলো জিউস প্রদত্ত শাস্তি, কেননা এন্ডিমিয়ন জিউসের স্ত্রী হেরার সাথে সহবাস করতে চেয়েছিলেন। তবে অধিকাংশের মতে, চন্দ্র দেবী সেলেনে এন্ডিমিয়নের সৌন্দর্যে মুগ্ধ তাকে আজীবন ঘুম পাড়িয়ে রাখেন, যাতে সেলেনে এন্ডিমিয়নের সৌন্দর্য সবসময় দেখতে পান।

ঘুমন্ত বীর বা পাহাড়ের ভিতর ঘুমন্ত রাজা পৌরাণিক বা লোকগাঁথার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনেক পৌরাণিক বা লোকগাঁথায় এই রকম রাজা বা বীরের কাহিনী শোনা যায়। এই ধরনের কাহিনীর মধ্যে আছে রাজা ফ্রেডেরিক বার্বারোসা তার ছয়জন যোদ্ধাকে নিয়ে কাইফহোসেরবার্গ পাহাড়ের গুহায় একটি পাথরের টেবিলে বসে বসে ঘুমিয়ে আছে। এক রাখাল হঠাৎ করে সেই গুহার ভিতরে ঢুকলে বার্বারোসার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং রাখালকে জিজ্ঞেস করে, ‘পাহাড়ের উপর কি এখনও র‍্যাভেন (এক ধরনের পাখি) উড়ছে?’ রাখালের ‘হ্যা’ উত্তর শুনে বার্বারোসার জবাবঃ তাহলে আমরা এখনো আরো একশত বছর ঘুমাতে পারবো।

প্রায় একই রকম কাহিনী প্রচলিত আছে সুইজারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড আর বোহেমিয়াতে। পর্তুগালে এটি বিশ্বাস করা হতো যে, সাহসী তরুন রাজা সেবাস্টিয়ান, যিনি খুব দ্রুত মরক্কো আক্রমন করতে গিয়ে নিজের দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন, কোথাও ঘুমিয়ে আছেন। এবং দেশের প্রয়োজনে আবার এক সময় জেগে উঠবেন। নরওয়েতেই একইভাবে ওলাফ ট্রিগভাসন ঘুমিয়ে আছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এমনকি এখনো কিছু ফরাসী কৃষক বিশ্বাস করেন, নেপোলিয়ান বোনাপার্টও এভাবে কোথাও ঘুমিয়ে আছেন!

এন্যাল অব আইসল্যান্ড (যে বইটিতে তেরশ এবং চৌদ্দশ শতকের যেসব ঘটনাবলী আইসল্যান্ড এবং এর আশেপাশে ঘটেছে, তার সংরক্ষিত আছে)-এ লিপিবদ্ধ আছে, ১৪০৩ সালে এক ফিনিশ যুবক নরওয়ের উত্তরে অবস্থিত হ্যালোগ্যালান্ডে বসবাস করতেন, একদিন এক গুহায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, এবং তিন বছর পর ঘুম থেকে উঠেছিলেন। তার পাশের তার ধনুক ছিলো, যেটা কোনো পাখি বা অন্য কোন মানুষ তখনো স্পর্শ করেনি!
অনেক কথা তো বলা হলো। লেখা আর বেশী দীর্ঘায়িত করলে বিরক্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। তাই এবার শেষের পথ ধরি।

শেষটা করতে যাচ্ছি কোরানে গুহাবাসী যুবকদের নিয়ে কি বলা আছে সেটা দিয়ে। ইসলামে গুহাবাসী যুবকদের বলা হয় আসহাবে কাহাফ। সূরা কাহ’ফের ৯ থেকে ২৬ নং আয়াত পর্যন্ত বলা হয়েছে-

আপনি কি ধারণা করেন যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল ? যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোয়া করেঃ ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন’।
তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই। অতঃপর আমি তাদেরকে পুনরত্থিত করি, একথা জানার জন্যে যে, দুই দলের মধ্যে কোন দল তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে অধিক নির্ণয় করতে পারে। আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমি তাদের মন দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর তারা বললঃ ‘আমাদের পালনকর্তা আসমান ও যমীনের পালনকর্তা আমরা কখনও তার পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে। এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক গোনাহগার আর কে?’ তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন।
তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে। আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।
তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না। এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বললঃ আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব। অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না। আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব। ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন। তাদের উপর তাদের গুহায় তিনশ বছর, অতিরিক্ত আরও নয় বছর অতিবাহিত হয়েছে। বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।(সূরা কাহ’ফঃ ৯-২৬)

এই আয়াতগুলো সম্পর্কে কিছু কথা বলার লোভ সামলানো আমার পক্ষে খুবই কঠিন। তার পূর্বে এই সূরার শানে নুযুল নিয়ে কিছু কথা-

ধারণা করা হয়ে থাকে এই সূরা নাযিল হয়েছিলো হযরত মুহাম্মদ (স) এর মক্কী জীবনের প্রায় শেষ দিকে, যখন মুসলমানরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছিল সত্য ধর্ম পালনের জন্য, কিন্তু তারা তখনও আবিসিনিয়ায় হিজরত শুরু করেননি। এই সূরা নাযিলের মাধ্যমে সেইসব মুসলমানদের মনে সাহস দেওয়া হয়েছিলো। অবশ্য এই সূরা নাযিলের প্রত্যক্ষ কারণ ছিলো ভিন্নরুপ। মক্কার কুরাইশরা পদে পদে চাচ্ছিলেন নবীজীকে মিথ্যুক প্রতিপন্ন করতে, তাঁর প্রচারিত ধর্মকে অবমাননা করতে। তারা মদিনার ইহুদীদের কাছ থেকে তিনটি প্রশ্ন শুনলেন, যেটা নবীজিকে করলেন। প্রশ্ন তিনটি ছিলো- ১) আসহাবে কাহাফ বা পাহাড়ে ঘুমন্ত যুবকদের সম্পর্কে, ২) হযরত খিজির (আ) সম্পর্কে, এবং ৩) জুলকারনাইন সম্পর্কে। এই তিনটি ঘটনা শুধুমাত্র মদীনার খ্রীষ্টান বা ইহুদীরাই জানতেন, এবং আরবরা এই সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞাত ছিলেন। প্রশ্ন তিনটি শুনে নবীজি এক রাত সময় চেয়েছিলেন, সেই রাতেই এই সূরা নাযিল হয়েছিলো।

এবার দেখা যাক, কোরানের কাহিনীর সাথে সিরিয় কাহিনীর ভিন্নতা। তার আগে দেখে নিই সিরিয় কাহিনীতে কি কি আছে-
১) জায়গার নাম- এপহেসোস বা ইফেস, বর্তমানের তুরস্কের ইজমির প্রদেশে অবস্থিত।
২) যুবকদের সংখ্যাঃ ৭, এই সাতজনের নামও বলা হয়েছে।
৩) ঘটনার সূত্রপাতঃ ২৫০ খ্রীষ্টাব্দে রোমান সম্রাট ডেসিয়াসের আমলে।
৪) ঘুম থেকে উঠার সময়ঃ ৪৩৪ খ্রীষ্টাব্দের রোমান সম্রাট থিওডোসিয়াসের সময়।
৫) মধ্যবর্তী সময়কালঃ ১৮৪ বছর।
৬) ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গুহার উপরে ইবাদতখানা বানানো হয়েছিলো।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সিরিয় বর্ননাতে কুকুরের কোন অস্তিত্ব নেই। এমনকি গুহাটির খুব সুস্পষ্ট বর্ননা নেই। তাছাড়া, এই সুদীর্ঘসময় গুহাবাসীরা কিভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেলো এবং মধ্যবর্তী সময়টাতে কি কি হয়েছিলো, সেটার কোনো বর্ণনা নেই।

এবার দেখি কোরানে এই বিষয়ে কি কি বলা আছে-
১) জায়গার নামঃ সুস্পষ্ট ভাবে জায়গার নাম দেওয়া নেই। শুধু বলা হয়েছে গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা। প্রশ্ন আসে গুহা এবং রাকীমের অধিবাসীরা- দু’টি কি একই গ্রুপ, না কি আলাদা গ্রুপ? সহীহ বুখারী শরীফে, আসহাবে কাহফ এবং আসহাবে রাকীম নামে দুটি অধ্যায় আছে। আসহাবে রাকীম অধ্যায়ে- সেই তিন ব্যক্তির কাহিনী বলা হয়েছে, যে তিন ব্যক্তি একদা পাহাড়ের এক গুহার ভিতর আটকে গিয়েছিলো, এবং পরবর্তীতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যমে মুক্ত হয়েছিলো। সহিহ সিত্তার অন্যতম, বুখারী শরীফের এই দুই অধ্যায় চিন্তা করলে মনে হবে, গুহাবাসী (আসহাবে কাহফ) এবং রাকীমবাসী (আসহাবে রাকীম)- দু’টি আলাদা গ্রুপ।
কিন্তু আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আল্লাহ শুধুমাত্র আশহাবে কাহফের কথাই বলেছেন। রাকীম যদি আলাদা গ্রুপ হতো, তাহলে এখানে আসহাবে রাকীমের কথাও আসতো। তারমানে আসহাবে কাহফ এবং রাকীম একইসাথে জড়িত। তাহলে পরবর্তী প্রশ্ন হচ্ছে- আয়াতে ‘রাকীম’ মানে কি? কোনো কোনো ইসলামী পন্ডিতের মতে, আসহাবে কাহাফের ঘটনাটি যে জনপদে ঘটেছিলো, সে জায়গার নাম রাকীম। এটি আকাবাহ ও ফিলিস্তিনের মাঝামাঝি একটি জায়গায় অবস্থিত। ‘রাকীম’ নামক জায়গা আছে এবং সেখানে আসহাবে কাহফের অস্তিত্বের খবর পাওয়া গেছে, এরকম আরো দুইটি জায়গা হচ্ছে স্পেনের গ্রানাডার একটি গ্রাম এবং জর্ডানের আম্মানের নিকটে আরেকটি গ্রাম। আবার অনেকে বলেন, এর অর্থ হচ্ছে ‘উৎকীর্ণ’, অর্থাৎ, গুহা মুখে সেই যুবকদের স্মৃতিরক্ষার্থে যে ফলক লাগানো হয়েছিলো। কোরানে অবশ্য স্মৃতিফলক লেখার কথা বলা হয় নি, তাই বলা চলে এখানে ‘রাকীম’ বলতে জায়গার নামই বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত ইফেস শহরে কোনোক্রমেই আসহাবে কাহফের অবস্থান হয় না, কারণ সেখানে ‘রাকীম’ নামে কোনো জায়গা নেই!
তাহলে বাকী তিনটি শহরের যে কোন একটি হতে পারে! ১৯৬১ সালের খনন কার্য অনুযায়ী, জর্ডানের আম্মানের নিকট রাকীম গ্রামেই আসহাবে কাহফ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। তবে এই বিষয়ে কোরানের সর্বশেষ চূড়ান্ত কথা হচ্ছে- তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদও করবেন না। আর তাই আসহাবে কাহফ কোন শহরে অবস্থিত, সেটা বের না করাই ভালো। একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি, আল্লাহ যে জিনিস তার নবীকেও জানতে নিষেধ করেছেন, সেটা না জানাই উত্তম।

২) যুবকদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া নেই। শুধু বলা হয়েছে, কেউ কেউ বলবে ৩ জন, ৫ জন অথবা ৭ জন। লক্ষ্যনীয়- সিরিয় বর্ননামতে ৭ জনের কথা আছে। এখানেও সেই একই কথা- আল্লাহতায়ালা নিশ্চয়ই কোনো গূঢ় রহস্যের কারণে এই ব্যাপারটি স্পষ্ট করেন নি।

৩) ঘটনার সূত্রপাতঃ নির্দিষ্ট সময় বলে দেওয়া নেই।
৪) গুহার বর্ণনা এখানে দেওয়া আছে- তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত- গুহা মুখের অবস্থান কোনদিকে বা গুহার অভ্যন্তরভাগ কেমন- এই আয়াতটির মাধ্যমে তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

৫) এবার ডাক্তার হিসেবে একটা কথা বলি। কোরানের এক আয়াতে আছে- আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে- একজন ডাক্তার হিসেবে জানি, টানা কয়েকদিন একই ভাবে শুয়ে থাকলে বা বসে থাকলে শরীরের Dependent part-এ ঘা হয়। ঘা যাতে না হয়, তাই প্যারালাইসিস রোগীদের শরীরের মুভমেন্ট করিয়ে দেওয়া হয় কয়েক ঘন্টা পর পর। এই আয়াতের অর্থ এটি কি না, আমি নিশ্চিত নই, কিন্তু অনেকটা সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়।

৬) মধ্যবর্তী সময়ে একটি কুকুর কিভাবে তাদের পাহারা দিয়ে রেখেছে, সেটাও বলা আছে।
৭) ঘুম থেকে উঠার সময়ঃ নির্দিষ্ট সময় বলে দেওয়া নেই।
৮) মধ্যবর্তী সময়কালঃ নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি। তবে একজায়গায় বলা হয়েছে, তিনশত বছর বা আরো অতিরিক্ত নয় বছর। কিন্তু এই বাক্যে যে তিনশ আর নয় বছরের সংখ্যা বলা হয়েছে, তা আসলে লোকদের উক্তি- এখানে বর্ণনা করা হয়েছে, এটা আল্লাহর নিজের উক্তি নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে, পরের বাক্যেই বলা হয়েছে- বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন- যদি তিনশ আর নয় আর নিজেই বলতেন, তাহলে আল্লাহর আর পরের বাক্য বলার প্রয়োজন পরতো না। আর তাই আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (র) বলেছেন, এটি আল্লাহর উক্তি নয়, লোকদের কথার উদ্ধৃতি মাত্র।

৯) ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গুহার উপরে ইবাদতখানা বানানো হয়েছিলো(সিরিয় বর্ননাতে এটি ছিলো)।
এখানে একটি কথা বলা যেতে পারে, যখন একদল লোক আসহাবে কাহফের উপর সৌধ করতে চেয়েছিল, পরের অংশেই আল্লাহ বলেছেন, তাদের বিষয়ে তাদের পালনকর্তা ভালো জানেন। তারমানে বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহতায়ালা এই কাজ পছন্দ করছিলেন না। এরপর মসজিদ তৈরীর ব্যাপারটিও আল্লাহ বর্ণনাচ্ছলে বলেছেন। এছাড়া, কবরের উপর যে মসজিদ বা সৌধ তৈরী করা নিষিদ্ধ, সে ব্যাপারেও অনেক সহিহ হাদিস আছে।

কোরানের বর্ণনায় যে জিনিসটি নেই, তা হলো- গুহাটি পাথর দ্বারা বন্ধ করে দেওয়ার কোনো কথা নেই, তার পরিবর্তে আছে কীভাবে কুকুরটি সেই যুবকদের পাহারা দিয়েছিলো।

এবার একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। জানি, এতো বিশাল বড় লেখা দেখে পড়ার আগ্রহ অনেকেরই হয় নি। তবুও যারা প্রচন্ড কষ্ট করে এই লেখাটা পড়েছেন, তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ, শেষ করার আগে বলছি-

“যদিও ইউরোপে বা খৃষ্টান সমাজে ষোড়শ শতকের পর থেকে এই গুহাবাসীদের ঘটনাকে লিজেন্ড বা মিথ বলা হচ্ছে, ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে স্বীকার করা হচ্ছে না, কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে, ঘটনাটির বর্ণনা যেহেতু কোরানে আছি, এর সত্যতা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবে সিরিয় বর্ননার সাতজন যুবক আর কোরানের আসহাবে কাহফ- একই কি না, এটি আমি নিশ্চিত নই, আসলে নিশ্চিত হতেও চাচ্ছি না! কোরানে যা জানতে নিরুৎসাহিত করেছে, (আমি কিন্তু ‘নিরুৎসাহিত’ শব্দটি লিখেছি, ‘নিষেধ’ লিখিনি) তা না জানাই সবার জন্য মঙ্গলজনক। নিশ্চয়ই এর পিছনে কোনো গূঢ় রহস্য আছে, যা বোঝার সাধ্য আমার মতো আমজনতার নেই”।
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×