somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তার দায়ভার কি সেনাবাহিনী নেবে? তাদের সমালোচনাকে অনেকে সেনাবাহিনীর সমালোচনা মনে করছে কেন?

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এখনও আমাদের জন্য গর্ব এবং আস্থার জায়গা। কারণ দুর্নীতির এই দেশে একমাত্র সেনাবাহিনীই সেই প্রতিষ্ঠান যার আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সুনাম এখনও আছে। কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তার অপকর্মের দায় কখনই সমগ্র সেনাবাহিনীর উপরে চাপানো ঠিক হবে না।

কয়েক দিন আগে ছাত্র নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন যে, সেনাপ্রধান পরিশুদ্ধ আওয়ামীলীগকে রাজনীতিতে আনার ব্যাপারে আগ্রহী। সেনাপ্রধানের কথার সারমর্ম হল যে তোমরা কিছুই জানো না। তোমরা বাচ্চা ছেলে। তোমাদের বয়সের চেয়ে আমার চাকরীর বয়স বেশী। তোমাদের প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের অভাব আছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ এবং হাসিনার কারণে ২ হাজারের বেশী মানুষ খুন হয়েছে, ৩০ হাজারের বেশী মানুষ আহত হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে, প্রায় ৬ শ মানুষ অন্ধ হয়েছে। সেই আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসনের জন্য কেন সেনাপ্রধানের এতো আগ্রহ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পক্ষে কোন কথা বলাটাই তো ঠিক হয়নি তার। শুধু ছাত্রদের সাথে না, সেনাপ্রধান আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে নাকি এই বিষয়ে আলাপ করেছেন। রাজনৈতিক নেতারা সুবিধাবাদী হওয়াতে তারা এই আলোচনার কথা চেপে গেছে। হাসনাত দেরীতে হলেও বলেছে। হাসনাত সঠিক কাজ করেছে এবং সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সেনাবাহিনীর উঁচু পদের কিছু কর্মকর্তা যে এখনও হাসিনার পক্ষে কাজ করছে এটা সাধারণ মানুষের জানার প্রয়োজন আছে।

সেনাবাহিনী আমাদের গর্বের জায়গা হলেও গত সাড়ে ১৫ বছরে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী মধ্যম সারীর এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চরম জুলুম এবং অন্যায়ে লিপ্ত ছিল। তাদের নির্দেশে বা তাদের অধিনস্ত লোকদের দ্বারা যে সব অপকর্ম ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে গুম, আয়নাঘর, রিমান্ডে নির্যাতন, জঙ্গি গ্রেফতারের নাটক, চুক্তি ভিত্তিক হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রার্থী সামরিক কর্মকর্তাদের গুম, নির্যাতন, ইসলামী দলগুলির উপরে অমানবিক নির্যাতন, বিরোধী দলের উপরে নির্যাতন, নির্বাচন ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে সহায়তা প্রদান ইত্যাদি। এমন কি ৫ আগস্টের পরেও তারা ৬ শ এর অধিক আওয়ামীলীগপন্থী অপরাধীদেরকে সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়েছে। আগস্টের পরে কয়েকজন বিপথগামী জেনারেল পালিয়ে গেছে সেনাবাহিনীর চোখের সামনে দিয়ে। সেনাবাহিনীর উঁচু পর্যায়ের জেনারেলরা মনে হচ্ছে এই ব্যাপারে কিছুই জানে না। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনরায় বিচার শুরুর ব্যাপারে অনেক জেনারেল আগ্রহী না। কারণ তখন তাদের অনেকেই প্রতিবাদকারী অফিসারদের উপরে সংঘটিত অন্যায়ের সাথে জড়িত ছিল। আগস্ট মাসে কেন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হল না সেটার জন্যও হয়তো এক সময় এই কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে। তারা চাইলেই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করতে পারতেন। সেটা করা গেলে ভারতে বসে শেখ হাসিনা তার দল নিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারতো না।

হাসিনা আমলে পুলিশের পাশাপাশি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, এনএসআই এর কিছু কর্মকর্তা গুম, খুন, রিমান্ডে নির্যাতন এবং আয়নাঘরের সাথে যুক্ত ছিল। জুলাই মাসে বিজিবি জনগণের উপরে গুলি চালিয়েছে। এই সব বাহিনী মুলত সামরিক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চলে। আমাদের বুঝতে হবে যে আগস্টে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে আসতে বাধ্য হয়। কারণ হল জুনিয়র কর্মকর্তা এবং সৈনিকদের চাপ এবং জাতিসংঘের চাপ। ঊর্ধ্বতন কতিপয় অসাধু অফিসারের কারণেই সেনাবাহিনী প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে এবং হচ্ছে।

আমরা জানি যে সেনাবাহিনীর ৯৯% সদস্য সৎ, দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক। কিন্তু কতিপয় মধ্য পর্যায়ের এবং উঁচু পর্যায়ের কর্মকর্তা পুরো সেনাবাহিনীর সুনাম নষ্ট করে চলেছে বিগত ১৫ বছর ধরে। এখনও সেনাবাহিনীর উঁচু পর্যায়ে হাসিনার সমর্থক কর্মকর্তারা অনেকেই আছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সাধারণ জনগণ এই সব বিপথগামী কর্মকর্তাদের বিপক্ষে বলছে। কিন্তু অনেকে (যার মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও আছেন) মনে করছে মানুষ সেনাবাহিনীর বিপক্ষে। তাদেরকে বুঝতে হবে যে সেনাবাহিনীর উপরের পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান দরকার, যেন সেনাবাহিনীর সম্মান এবং মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে। জন সাধারণকে দোষ না দিয়ে তাদের উচিত এই সমস্ত অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:৪৪
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

* ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’
* ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
* ‘নাটক কম করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসসালামু আলাইকুম। ইদ মোবারক।

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৯



ঈদ এখন এক নিরানন্দময় উপলক্ষ্য।
কিতাবে আছে ধনী-গরীব অবিভাজনের কথা বরং এদিন আরো প্রকটতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় বিভেদরেখা কেননা আমরা আমাদের রাষ্ট্র- সমাজব্যবস্থা ও জনগণকে সেভাবে দিয়েছি ঘিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের শুভেচ্ছা: দূর থেকে হৃদয়ের কাছ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

আসসালামু আলাইকুম,
আজ ঈদের দিন। চারদিকে উৎসবের আমেজ, হাসি-খুশি, নতুন জামা আর মিষ্টি মুখের আদান-প্রদান। আমি ইউরোপে আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা কোণে একটা ফাঁকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই যে আমার নানা রঙের ঈদগুলি ......

লিখেছেন অপ্‌সরা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪২


পেছনে ফিরে তাকালে আমি সবার প্রথমে যে ঈদটার কথা স্মরন করতে পারি সেই ঈদটায় আমি পরেছিলাম আমব্রেলা কাট নীলচে বলবল রং একটা জামা এবং জামাটা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×