সৃস্টির সেরা জীব হয়েও মানুষের মধ্যে অনেক ঘৃণিত অভ্যাস রয়েছে যার অন্যতম হলো “বিশ্বাসঘাতকতা” । এই পৃথিবীর সব জায়গায় কিছু না কিছু বিশ্বাসঘাতক আপনি অবশ্যই খুঁজে পাবেন । তবে এই পৃথিবীতে এমন কিছু বিশ্বাসঘাতক জন্মেছিলো , যাদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সেই রাষ্ট্র বা জাতিকে অনেক চড়া মূল্য দিতে হয়েছিলো , আজ সেইরকম কিছু বিশ্বাসঘাতকের কথা বলবো
ব্রুটাসঃ
প্রাচীন রোমে একসময় আংশিক গনতন্ত্র প্রচলিত ছিলো , সেখানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিলোনা । যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা , আর্থিক ব্যবস্থা পৃথকভাবে চলতো । কিন্তু সেইসময় জুলিয়াস সিজার একজন একনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান , অর্থাৎ যাবতীয় ক্ষমতা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে আসাই ছিলো তার ইচ্ছা , এই ঘটনায় সিনেটররা ক্ষুব্ধ হন এবং তারা যেকোনো মূল্যে এই ব্যবস্থা ঠেকানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন । তখন সিনেটররা সিজারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং এই পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলো ব্রুটাস । সিজার আর ব্রুটাসের সম্পর্কে বন্ধুর মত ছিলো ,এমনকি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনায় ব্রুটাস সিজারকে সমর্থনও দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সেই ব্রুটাসের নেতৃত্বে অন্যান্য সিনেটরেরা , রাজদরবারে সিজারকে একের পর এক ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে । হত্যাকাণ্ডের সময় ব্রুটাস নিজে মুখ ঢেকে আসে , সিজার যখন একের পর এক ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরতে থাকেন , তখন ব্রুটাসের মুখের পর্দা সরে যায় ,এবং সিজার তাকে দেখতে পায় এবং বলে “Et tu, Brute?” অর্থাৎ ব্রুটাস তুমিও!!!!!
রবার্ট হ্যানসেন
আমেরিকায় জন্ম , একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে নিজের কর্ম জীবন শুরু করেন , ১৯৭৬ সালে FBI তে যোগ দেন । কম্পিউটার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত কাজ যেমনঃ নেটওয়ার্ক ইনট্রুডার , ওয়ার ট্যাপিং ইত্যাদি কাজে অনেক দক্ষ ছিলেন । ১৯৮৩ সালে কাউন্টার ইন্টিলিজেন্সীর অংশ হিসেবে একটা দলের সাথে তাকে সোভিয়েত ইউনিয়নে (বর্তমান রাশিয়া) পাঠানো হয় । সেখানে সে টাকার বিনিময়ে মার্কিন ডবল এজেন্টদের নাম সহ অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য কেজিবির এক এজেন্টের কাছে বিক্রি করতে থাকে।পরবর্তীতে সে ধরা পরে , এবং বর্তমানে সে আজীবন দন্ড প্রাপ্ত একজন আসামী হিসেবে জেলে আছেন।
জন ড্যাস
১৯৪২ সালে আমেরিকার অর্থনীতিতে ধ্বস নামানোর জন্য , জার্মানরা এক নতুন কৌশল অবলম্বন করে । জার্মানদের উদ্দেশ্য ছিলো আমেরিকার বাজারে জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়া , এই জন্য তারা আটজন ইংরেজী ভাষা জানা জার্মানকে আমেরিকায় পাঠায় । প্রথম দিকে জার্মানদের এই মিশন খুব ভালো ভাবেই চলছিলো , পরবর্তীতে জন ড্যাস অর্থলোভী সরাসরি জার্মানদের এই পরিকল্পনা FBI এর কাছে ফাঁস করে দেয় পরবর্তীতে ঐ মিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে মার্কিনীরা আটক করে ।
বেনেডিক্ট আর্নল্ড
আমেরিকান রেভুলশনারী ওয়্যার ,যেটা পৃথিবীর অন্যতম সফল বিপ্লব হিসেবে পরিচিত ,যার ফলাফল আজকের সুপার পাওয়ার আমেরিকা । আমেরিকান সিভিল ওয়্যারের অন্যতম সফল জেনারেল ছিলেন বেনিডিক্ট আর্নল্ড , অনেক বীরত্বপূর্ন কাজের জন্য তার অনেক সুনাম ছিলো , কিন্তু পরবর্তীতে সেও ব্রিটিশদের টাকার কাছে হার মানে এবং টাকার বিনিময়ে ব্রিটিশদের সাথে যোগ দেয় এবং পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে চলে যায় , যদিও যুদ্ধের পরে ব্রিটিশরাও তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় । তিনি অনেক কস্টে এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় কানাডায় মৃত্যুবরণ করেন।
Vidkun Quisling
একজন নরোয়েজিয়ান আর্মী অফিসার এবং রাজনীতিবিদ । জার্মানদের নরওয়ে দখলের জন্য যাবতীয় সামরিক তথ্য হিটলারের কাছে পাচার করেন , অনেক ইহুদীদের অবস্থান নাৎসিদের হাতে তুলে দেন । পুরস্কার হিসেবে হিটলার তাকে দখলকৃত নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বানান । ১৯৪৫ সালে জার্মানদের আত্মসমর্পণের পরে নরওয়ের জনগণ তাকে বিচারের সম্মুখীন করে এবং তার ফাঁসি হয়।
আলফ্রেড রেড
ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত বিশ্বাসঘাতক ,যার বিশ্বাসঘাতকতার মূল্য দিতে হয়েছিলো অস্ট্রিয়ার ৫ লক্ষ্য মানুষের জীবন দিয়ে । আলফ্রেড ছিলেন অস্ট্রিয়ার কাউন্টার ইন্টিলেজেন্সীর প্রধান , কর্মক্ষেত্রে তার অনেক সুনাম ছিলো । কিন্তু কেউ জানতোনা সে গোপনে রাশিয়ার হয়েও কাজ করছিলো , সে মূলত ছিলো একজন ডবল এজেন্ট ,১৯০৩ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত সে একজন ডবল এজেন্টের কাজ করেছিলো ।১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় সে অস্ট্রিয়ার ,সাইবেরিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা রাশিয়ানদের হাতে তুলে দিয়েছিলো , যার ফলে অস্ট্রিয়ানদের সেখানে চরম মূল্য দিতে হয় একই সাথে রাশিয়ান সেনাবাহিনী সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে , এমনকি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাশিয়ায় নিয়োজিত অস্ট্রিয়ান এজেন্টদের নাম সে রাশিয়ানদের কাছে বিক্রি করে দেয় । যখন তার এই বিশ্বাসঘাতকতার কথা প্রকাশ হয়ে যায় তখন সে নিজে আত্মহত্যা করে।
২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫৮