প্রায় দুই বছর আগে আমার নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নানা বাড়িতে কেউ থাকেনা, এক-দুইবছর পর পর গেট টুগেদার হয়। সবাই মিলে এক-দুইদিন হৈ-চৈ করে চলে আসি।
ভাগ্নে-ভাগ্নী এই প্রথম গ্রামে গেল। ভাগ্নেকে নিয়ে গেলাম পুকুরের সামনে, তখন তার বয়স চার বছর। পুকুর দেখিয়ে বললাম, “কি সুন্দর না পুকুরটা?” সে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে, “কোথায়? আমি তো দেখতে পারছিনা”।
-“এই যে, তোমার সামনেই তো!”
পুকুরের ওপাড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, “অনেক দূরে তো এজন্য দেখতে পাচ্ছিনা”।
সে বোধহয় কুকুর জাতীয় কিছু একটা খুঁজছিল। যখন বুঝিয়ে বললাম তখন অবাক হয়ে বলে, “এই পানিটাই পুকুর?”
আমার এক কাজিন আরো মজার কান্ড করেছে। কোথায় বেড়াতে গিয়ে দেখে কি যেন একটা হেঁটে যাচ্ছে। ওর বাবা বললো, “এটা মুরগী” খুব অবাক হয়ে বলে, “মুরগী এরকম কেন?” বেচারা কি আর করবে? মুরগী তো সবসময় বাটিতে রান্না করা অবস্থায় দেখেছে। তারথেকে শতগুণ আশ্চর্য হয়েছে ডিম দেখে। বলে কি, “ডিম এখানে কেন? ডিম তো ফ্রিজে থাকবে!”
বড় ভাগ্নীটা এবার সমাপনী পরীক্ষা দিল। পরীক্ষা শেষ হলে তাকে কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড জানিয়ে দেয়া হলো। সে তো মহাখুশী! তার কথা শুনে ছোট ভাগ্নীটা (৩ বছর) রান্নাঘরে গিয়ে আপুকে বলে, “আম্মু, আমাকে একটু পাসওয়ার্ড দাওনা!” আপু বলে, “পাসওয়ার্ড দিয়ে কি করবে?” পিচ্চির এক কথা, “আমি পাসওয়ার্ড খাবোওওওও!”
কি মুশকিলের কথা! এখন খাওয়ার জন্য পাসওয়ার্ড পাবে কোথায়? তাকে বলা হলো, “ডিম খাও, ডিমের ভেতরে গোল একটা পাসওয়ার্ড আছে!” ( ডিমের কুসুম সে একেবারেই খেতে চায় না)
আমি ওদের বড়খালামণি কিন্তু ওদের এতবড় সম্বোধন ভালো লাগেনা। তাই শর্টকাটে ব’খা ডাকে। যেটা ডাকতে গিয়ে এখন ‘বখ্খা’ হয়ে গেছে। ঠিক তেমনি আমার ছোটবোনকে ‘ছোখ্খা’। বাসায় এলে তিনটাই বখ্খা বখ্খা করে চিৎকার করতে থাকে। এবার আপু অনেকদিন থেকে গেল। সারাদিন কম্পিউটার পিচ্চিদের দখলে। একজন গেমস খেলে তো অন্যজন টম এন্ড জেরী দেখবে, আরেকজন হয়তো বারবী কার্টুনের জন্য চিৎকার শুরু করে দিল। একজনের সাথে অন্যজনের মিলেনা। শুধু আমি একটু নেটে আসতে চাইলে সব এক জোট, কেউ রাজি হয়না। অনেক বুঝিয়ে কয়েকমিনিটের জন্য ঢু দিয়ে যাই। একদিন রেগে বললাম, “পোলাপানের জ্বালায় ফেবু চেক করতে পারিনা”। বড় ভাগ্নীটা বলে উঠলো, “দুঃখিত, আমি পোলাপান না, মাইয়াপান”।
ক্যামেরা কিনেছি কয়েকদিন আগে। ভাগ্নী জিজ্ঞেস করলো, “কোন কোম্পানীর?”
বললাম, “নাইকন”। শুনেই বলে, “বললেই হলো? নাই বলবোনা”।
-“মানে কি?”
- “তুমিই তো বললে “নাই কন” মানে নাই বলতে বললে তাই বললাম নাই বলবোনা,হুহ!
আগে ছোট দুইটাকে জিজ্ঞেস করতাম কাকে বেশী ভালো লাগে? দুইটাই উত্তর দিত,”বখ্খা” এখন ভাগ্নে চালাক হয়ে গেছে। এখন বলে, “দুজনকেই সমান সমান।” কিন্তু যে কোন আবদার আমার কাছে। একদিন রাগ দেখিয়ে বললাম, “যা তোর আদরের ছোখ্খা কে বল গিয়ে, সব আমাকে কেন বলিস?” পিচ্চি হেসে বলে, “ছোখ্খা তো আদরের না, মাইরের ছোখ্খা! দেখ না খালি বকা দেয়!”
ছোট বাচ্চাদের অনেকেই উনিশ থেকে বিশ হলেই কান্না শুরু করে দেয়। আমার ছোট ভাগ্নীটা এরকম না, সে উনিশ থেকে সোয়া ঊনিশ হবার আগেই কান্না শুরু করে দেয়। একদিন ওর কান্নার ছবি তুলে ফেললাম, সেটা নিয়েও কান্না করলো অনেকক্ষণ। এরপর থেকে কান্না করতে নিলেই হুমকি দেই, “দাঁড়া, তোর কান্নার ছবি তুলে রাখবো।” প্রথম প্রথম হুমকি দিলে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতো। একদিন হুমকি দিতেই সে ঠোঁট উলটে বলে, “তাতে কি হয়েছে?”
-“সবাই দেখে ফেলবে”
-“কিভাবে?”
-“বেশী করলে নেটে কান্নার ছবি দিয়ে দিব, দুনিয়ার মানুষ দেখবে। খুব ভালো হবে তখন”।
কান্না আটকাতে আটকাতে বলে, “তাহলে তোমাকে মাইইর দিব, থাপ্পড় দিয়ে উড়ায়াআআআ দিব। গাড়িতে করে বাসাআআয় চলে যাব। বমি করতে করতে বাসায় চলে যাব”। (গাড়িতে উঠলেই সাধারণত ওরা সব বমি করা শুরু করে)।
ওর কথা শুনে কয়েক সেকেন্ড থ হয়ে গিয়েছিলাম, এরপরে যে অট্টহাসি দিসি, বাসার সবাই চলে এসেছে আমার ঘরে কেন হাসছি সেটা জানার জন্য। আমার হাসি দেখে পিচ্চিটাও কান্না ভুলে হাসতে শুরু করে দিয়েছিল।
পিচ্চিরা যে কতরকম যন্ত্রণা করে! সবসময় শুধু আদর করলে মাথায় উঠবে তাই একদিন ভাগ্নেকে একটা চড় দিলাম (আস্তেই দিসিলাম)। চড় খেয়ে সে ফিকফিক করে হাসে। আমি বললাম, “চড় খেয়ে হাসিস ক্যান রে পাগলা?”
সে বলে, “ আমি জাআআআনি এটা সত্য মাইর না”
-“তাহলে এটা কি?”
-“এটা হচ্ছে মিথ্যা মাইর, আদরের মাইর”।
এইরকম বিচ্ছুকে শাসন করা কেম্নে সম্ভব?
বিজ্ঞাপণঃ
পিচ্চি-পাচ্চা পোস্ট-১ পিচ্চি-পাচ্চা পোস্ট-১
পিচ্চি-পাচ্চা পোস্ট-২
একটি রাজকন্যার গল্প ও সামুর রুপকথার সংকলন