somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েনস আইরেস ভ্রমণ: ইতিহাস থেকে ফুটবল সংস্কৃতি

১৭ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বুয়েনস আইরেসে এটাই ছিল আমার প্রথম ভ্রমণ, এবং আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে আমার আর্জেন্টিনিয়ান বন্ধু সান ইসিদ্রোতে থাকেন — একটি সুন্দর শহরতলি, যেখান থেকে শহরের কেন্দ্র মাত্র ৪০ মিনিটের দূরত্ব। যেহেতু সেদিন ছিল সপ্তাহান্ত, শহরটি ছিল তুলনামূলক শান্ত, শুধু কিছু লোককে সকালে ব্যায়াম করতে দেখা যাচ্ছিল।

বুয়েনস আইরেসকে বলা হয় “দক্ষিণ আমেরিকার প্যারিস”, এবং প্রথম দেখাতেই শহরের স্থাপত্যশৈলী আমাকে মুগ্ধ করলো। ভিক্টোরিয়ান যুগের প্রাচীন ভবনগুলো এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে — কখনো বিদেশি দূতাবাস, কখনো বা বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে। শহরটিতে ইউরোপীয় প্রভাব সুস্পষ্ট, তবে এর মধ্যে ল্যাটিন আমেরিকার প্রাণবন্ত আবহও বিদ্যমান। এ শহরেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রশস্ত সড়ক — Avenida 9 de Julio, যার প্রশস্ততা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম।

গোলাপ বাগানের সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়া
তারপর আমরা গেলাম বিখ্যাত “এল রোসেদাল” (El Rosedal) — শহরের অন্যতম সুন্দর গোলাপ বাগান, যা পার্কে ত্রেস দে ফেব্রেরো-এর অংশ। পার্কজুড়ে জগিং করা মানুষ, হাঁটাহাঁটি করা দম্পতি, আর মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো হাঁসের দল। আর্জেন্টিনায় দৌড়ানো আর হাঁটা যেন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ — এমন পরিচ্ছন্ন এবং নান্দনিক শহরে থাকলে যে কেউ বাইরের পরিবেশে সময় কাটাতে আগ্রহী হবে।

একটি অপেরা হাউস, এখন বইয়ের রাজ্য
আমার ভ্রমণের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা ছিল “এল আতেনিও গ্র্যান্ড স্প্লেন্ডিড” (El Ateneo Grand Splendid) পরিদর্শন করা। এটি একসময় একটি অপেরা হাউস ছিল, যা এখন বিশ্বের অন্যতম সুন্দর বুকস্টোরে পরিণত হয়েছে। ভবনের ব্যালকনি, অলংকৃত ছাদ, এবং মঞ্চ এখনো সংরক্ষিত রয়েছে, যা পুরো বইয়ের দোকানটিকে এক ঐতিহাসিক আবহ দিয়েছে।

বইয়ের সংগ্রহ দেখার সময় আমার চোখ আটকে গেল মুহাম্মদ ইউনূসের “দ্য থ্রি জিরো”-এর স্প্যানিশ অনুবাদে, যা আর্জেন্টিনায় প্রকাশিত হয়েছে। আমি আমার বন্ধুর জন্য বইটি কিনলাম, এবং তিনি বেশ অবাক হলেন — কারণ তার ধারণা ছিল, বাংলাদেশ মানেই ফুটবলপাগল দেশ, সেখানে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বই পাওয়া যাবে, তা ভাবেননি!

ফুটবল: লা বোকায় এক ধর্ম
এরপর আমরা শহরের নিচের অংশে গেলাম, যেখানে অবস্থিত “লা বোকা” (La Boca) — আর্জেন্টিনার ফুটবল এবং শিল্পসংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত “লা বোম্বোনেরা” (La Bombonera) — বোকা জুনিয়র্স ফুটবল ক্লাবের স্টেডিয়াম, যা আর্জেন্টিনার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব।

এলাকাটি ছিল পর্যটকে ঠাসা, রাস্তার পাশে শিল্পীদের আঁকা রঙিন দেয়ালচিত্র, ফুটবল ফ্যানদের ভিড়, আর দোকানে বিক্রি হওয়া নীল-হলুদ জার্সির সমারোহ — এ যেন শুধুই একটি এলাকা নয়, এক ফুটবলবন্দনা!

আমরা খোলা আকাশের নিচে বসে লাঞ্চ করলাম, আর সামনে চলছিল রাস্তার পাশে ট্যাঙ্গো নাচ! নাচের প্রতিটি স্টেপে ফুটে উঠছিল আর্জেন্টিনার আবেগ, সংস্কৃতি, আর ইতিহাস। একদিকে গরুর মাংসের স্টেক, এক গ্লাস ওয়াইন, আর সামনে ট্যাঙ্গো — এ এক স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা!

এক বিশাল গির্জা
শেষে আমরা গেলাম “বুয়েনস আইরেস মেট্রোপলিটান ক্যাথেড্রাল” (Buenos Aires Metropolitan Cathedral)-এ, যা দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত গির্জাগুলোর মধ্যে একটি। এর নিওক্লাসিক্যাল স্থাপত্য, অভ্যন্তরের অপূর্ব কারুকাজ, এবং এখানেই সংরক্ষিত রয়েছে আর্জেন্টিনার জাতীয় বীর জেনারেল হোসে দে সান মার্টিনের সমাধি। শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, এটি আর্জেন্টিনার ইতিহাসেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।



সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৩২
৩১৬২ বার পঠিত
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

১. ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: আরো বেশি ছবি দিবেন। এবং ছবির নীচে ক্যাপশন দিয়ে দিবেন।

ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিএনপি নিয়ে সামান্য ভাবনা! :(

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১৯

(লেখাটা বড় হলেও পড়ে দেখার আমন্ত্রন জানাই) বিএনপি নিয়ে কিছু লিখতে বা বলতে আমার নিজের মায়া হয় (যদিও লিখছি সাহস করে কারন বিএনপি উগ্র দল নয় বা আমাকে মেরে ফেলবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ মা মাটি দেশ

লিখেছেন ইসিয়াক, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

যে মাটির বুকে রক্তের হোলি খেলিস সেতো তোদের মা!
কাজ ফুরালেই পাঁজিরে তুই  সেকথা জানতাম না। 

মঙ্গলের দূত সে যুগে যুগে অমঙ্গলের ক্ষেত্রে  যম।
পালাতে পারবি না সময় হলে ফুরাবে তোর দম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি সন্তুষ্ট না

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:০২




নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জানার জন্য বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সংগে বৈঠক করে বলেছে ডিসেম্বর নির্বাচনের কাট অফ সময়। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাটবাজার এবং অনলাইনে কেনাকাটা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:০৪

হাটবাজার এবং অনলাইনে কেনাকাটা.....

প্রত্যাহিক বাজার করার একটা আলাদা স্বস্তি আছে। আমরা যারা হাতে ধরে বেছে বেছে শাকসবজী, মাছ গোসত এবং অন্যান্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য কিনি তাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিরপেক্ষতা চাই, তবে রিমোট কন্ট্রোলটা আমাদের হাতে থাক !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০২



যখন কেউ রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে, "আমরা নির্বাচনে অংশ নিবো , তবে নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা ছাড়া নয়," তখন বুঝতে হবে—ব্যাপারটা ঠিক ভোট নয়, বিষয়টা আম্পায়ার। আম্পায়ার যদি আগেই খেলার স্কোর জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×