হাটবাজার এবং অনলাইনে কেনাকাটা.....
প্রত্যাহিক বাজার করার একটা আলাদা স্বস্তি আছে। আমরা যারা হাতে ধরে বেছে বেছে শাকসবজী, মাছ গোসত এবং অন্যান্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য কিনি তাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকম। কাঁচা বাজারের মধ্যে সব চাইতে কঠিন সময় মাছ-মুরগী কেনা। দামাদামি করিনা বেশী, কিন্তু চলতি বাজারদর মোটামুটি জানি- তাই পরিস্থিতি মেনে বুঝেই দাম বলি। প্রায়শই দাম বলে একটু দূরে গেলেই মুহূর্তের মধ্যেই আপনার পছন্দের মাছ/মুরগী বদলে ফেলে দোকানী আপনাকে ডেকে মিন্তির ঝুড়িতে তুলে দিবে। এখানেই অভিজ্ঞরা বুঝে যায়- বিক্রেতার কারচুপি এবং কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ীদের সাম্রাজ্যে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সীমিত টাকায় প্রয়োজনীয় বাজার ব্যবস্থাপনায় দরদরিয়ে ঘামতে ঘামতে ক্লান্ত লাগে, তবুও সব মিলিয়ে বাজার করা একটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। ক্লান্তি আছে আবার পরিতৃপ্তিও আছে। টাকার অভাবেই যখন প্রয়োজনীয় পণ্যটা কিনতে পারিনা তখন নিজের সাথে প্রতারণা করি। যখন দেখি- অনেকেই মাছের বাজার, গোসতের বাজার ঘুরে ঘুরে কিছুই কিনতে না পেরে মলিন মুখে ফিরে যায়- তখন খুব বেশি খারাপ লাগে....
জামানা বদলে গিয়েছে।
শহরের বিরাট একটা অংশের হাটবাজার থেকে কেনাকাটা কমে গিয়েছে। দুই তিন দশক সুপারশপে গিয়ে ফিক্সড প্রাইসে কেনাকাটা করায় অভ্যস্তদের মধ্যেও একদশকের বেশী সময় অনলাইনে কেনাকাটায় অনেকেই নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছে। অনলাইনে কেনাকাটায় আমিও কম পিছিয়ে নেই। তবে অভিজ্ঞতা ৯৮% ক্ষেত্রেই নানাবিধ প্রতারণার শিকার হয়েছি।
দেশজুড়ে অলিগলিতে এখন দোকানীদের পসরা। শাকসবজী, মাছ-মাংস সবই পাওয়া যায়। আমরা যারা অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও অনলাইনে কেনাকাটা করি তারা চাইলেই- আমাদের বাড়ির আশেপাশে অস্থায়ী দোকানীদের থেকে দেখেশুনে তাজা শাকসবজী, মাছ এবং মাংস কিনতে পারি। গরুর মাংসের বেলায় অন্তত মরা গরু কিম্বা ঘোড়ার মাংস কিনতে হবেনা। খাসির মাংস কিনে ভেড়া/ কুকুরের মাংস কিনলেন কি-না সেই সন্দেহ থেকে মুক্ত হয়ে নির্দিধায় রসনা তৃপ্ত করতে পারবো। মাংসের বেলায় আমি কি বোঝাতে চেয়েছি.... আশা করি সবাই তা বুঝতে পেরেছেন।
প্রতিটা পরিবারে বাড়ি, গাড়ি না থাকুক, দামি মোবাইল না থাকুক, শুধু প্রতিটা মানুষের পকেটে সপ্তাহের একদিন একটু ভেজালমুক্ত বাজার করার পয়সা থাকুক, সব বাড়িতে চাল থাকুক, ডাল থাকুক, একটু সব্জি একটু মাছ থাকুক আর মাঝেমধ্যে একটু মাংস থাকুক। আমাদের এই সহজ সরল মৌলিক অধিকার, আনন্দটা সবার হোক। এইটুকু প্রিভিলেজ সবাইকে দিতে স্রষ্টার কোনো কার্পণ্য নাই, আপনার ইচ্ছাশক্তিই কিছুটা ভেজালমুক্ত খাবারের নিশ্চয়তা দিতে পারে!