যখন কেউ রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে, "আমরা নির্বাচনে অংশ নিবো , তবে নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা ছাড়া নয়," তখন বুঝতে হবে—ব্যাপারটা ঠিক ভোট নয়, বিষয়টা আম্পায়ার। আম্পায়ার যদি আগেই খেলার স্কোর জানিয়ে দেয়, আর ব্যাটসম্যান প্রতিপক্ষের হয়েও ফিল্ডিং করে, তবেই খেলা ‘গ্রহণযোগ্য’। এই হলো আমাদের রাজনৈতিক মঞ্চের ছায়া বিরোধীদের শুদ্ধ সংস্কারবাদ।
নাহিদ সাহেব, একজন প্রতিভাবান বক্তা। এমন বক্তা, যিনি নিজের দলের এলজিআরডি উপদেষ্টা দ্বারা পুরো মন্ত্রণালয় পরিচালনা করিয়ে মুখে বলেন—“আমরা অবরুদ্ধ। প্রশাসন বিএনপির হয়ে গেছে।” ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায়, যেন এক লোক নিজের বাসার সবকিছু নিজের লোক দিয়ে ভরে ফেলার পর বলে, “আমার এখানে বাইরের কেউ থাকতে পারছে না!”
এনসিপির বাস্তবতা হলো—ক্ষমতায় নেই, কিন্তু ক্ষমতার চেয়ে বেশি প্রভাবশালী। ঠিক যেন সরকারকে কোলে বসিয়ে নিজেদের দল চালানো। মন্ত্রণালয়ে ফাইল ছাড়াতে হলে দলীয় লোককে সালাম দিয়ে ঢুকতে হয়, জেলা প্রশাসককে নোট পাঠাতে হয় ফেসবুক ইনবক্সে, আর পুলিশের বদলি হয় “ভাইয়ের নাম কইছেন তো?” এই প্রশ্নের উত্তরে।
তবু তারা নির্বাচন চান না, কারণ—“প্রশাসন নিরপেক্ষ নয়। সত্যিই, সবশেষে রাজার গলাতেও যদি মণিহার না থাকে, তবে রাজ্যতন্ত্র অপূর্ণ থেকে যায় ! এদিকে চাঁদাবাজির হালচাল এমন যে, এনসিপির স্থানীয় নেতারা আজকাল ঠিকাদার নয়—একেকজন ছোটখাটো কাস্টমস অফিসার। যার কাজ শুধু হিসাব নেওয়া—কে কত ভাগ দেবে, কোন স্কিমে কার পছন্দের লোক ঢুকবে, আর কার লাইসেন্স বাতিল হবে। রাজনীতির নতুন সংজ্ঞা এখন “টেন্ডারের ভাগের উপর সংগঠন গড়ে তোলো”।
নাহিদ ভাইয়ের দলের একজন নেতা দল ক্ষমতায় না থাকলেও অফিসে বসে ইউএনওর সাথে মিটিংয়ে বলছে, “ সামনে আমি নির্বাচনে দাঁড়াবো , বুঝে শুনে কাজ করবেন। । ইউএনও কিছু বললে উত্তর আসে, “দেখেন, আমরা কিন্তু সংস্কার করতে এসেছি।” এই সংস্কার এমন, যা শুরু হয় পকেট থেকে আর শেষ হয় তদবীর-বাণিজ্যের হিসাব কষে। তারপরও দাবি— নিরপেক্ষ প্রশাসন চাই। হ্যাঁ, চাই। তবে সেটা এমন প্রশাসন, যা শুধু আমাদের ফোন ধরে, অন্য কাউকে তোয়াক্কা করে না।
একই সঙ্গে বিএনপিকেও দোষারোপ চলে। অথচ মাঠে বাস্তবতা হলো, বিএনপি এখনো জনতার শক্তিতে টিকে থাকা রাজনৈতিক দল। প্রশাসন ভয় পায়, সরকার অস্থির হয়, জনতা তাদের চেনে। তারা হঠাৎ জন্ম নেয়নি, ফাইলপত্রের ছায়ায় গজিয়ে ওঠেনি, বরং আন্দোলন-সংগ্রামে করে টিকে থাকা ইতিহাসধারী দল। তবু এনসিপির বক্তব্য এমন, যেন বিএনপি তাদের কফির কাপে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে।
সত্যি বলতে, আজকের কিছু বিরোধী দল আসলে বিরোধী না—তারা ‘প্রতিনিধিত্বকারী সরকারপন্থী বিরোধী পক্ষ’ । মুখে গর্জে উঠে, ভিতরে ফিসফিস করে বলে—“ভাই, ১০০ সিট দিলে আগামীকাল নির্বাচন হলেও আপত্তি নাই। "
রাজনীতি এখন বাণিজ্যিক স্বনির্ভরতা অর্জনের ল্যাব। এই ল্যাবের থিসিস হচ্ছে—কীভাবে জনগণের কাছে জনদরদী সাজা যায়, আর পেছনে প্রশাসনের সাথে “প্রজেক্ট শেয়ারিং” চালিয়ে যাওয়া যায়। নাহিদ সাহেব এই থিসিসের শ্রেষ্ঠ গবেষক। তার বক্তব্যে থাকে গণতন্ত্র, বিচার, সংস্কার—আর বাস্তবে থাকে ট্রিক্স খাটিয়ে ভোট ছাড়াই ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করে যাওয়া।
তাই পরিশেষে বলতেই হয়— নাহিদ ভাই, আপনি নিরপেক্ষতা চান না। আপনি চান একটি “রিমোট কন্ট্রোল প্রশাসন”—যার ব্যাটারি বদলাবেন আপনারা, কিন্তু রিমোটের বডিতে লেখা থাকবে ‘গণতন্ত্র’ !
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৩