প্রবাসী শ্রমিকদের আয়কে কালোটাকা বললেন অর্থমন্ত্রী -আমি বলি ঠিক কথা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সেদিন এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন প্রবাসীদের আয় কালো টাকার অন্যতম উৎস।অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রবাসী-আয়কে কালোটাকার উৎস উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘তারা অন্য দেশে আয় করে আমার দেশে পাঠাচ্ছে। এদের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয় না।যার ফলে টাকাগুলো অপ্রদর্শিত থেকে যায় যা কালোটাকা হিসেবে পরিগণিত হয়।অর্থমন্ত্রীর যুক্তিটি হলো বৈধ পথে যাঁরা দেশে অর্থ পাঠান, তাঁদের আয়কর দিয়েই তা পাঠাতে হয়।এ ক্ষেত্রে ওই অর্থ কালো হওয়ার সুযোগ নেই।আমি তার সাথে একমত, তবে সম্পূর্ন না কারন উনি অসম্পূর্ন তথ্য বা অর্ধ সত্য বলেছেন।উনি সমস্যার জায়গাটা ঠিকই দেখালেও চোরকে ছেরে সাধুকে চোর বলছেন।
কালো টাকার উৎস নিয়ে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য গবেষণা হয়েছে, রেমিটেন্সকে কালো টাকার স্পর্শের উর্ধ্বে রাখার ক্ষেত্রে এক দশকেরও আগেই অনেক অগ্রগতিও করেছে।বাংলাদেশেও গবেষনা হয়েছে, কিন্তু কোনো গবেষণায়ই কখনও প্রবাসী-আয়কে কালোটাকার উৎস হিসেবে দেখায় নি।মন্ত্রী বলছেন প্রবাসীদের আয়ের যে রেমিটেন্স বৈধ্য পথে দেশে আসছে তা সাদা টাকা। আর যা অবৈধ্য পথে আসে সেগুলি কালোটাকা।এখানে প্রশ্ন দুইটি, এক, কি পরিমান রেমিটেন্স অবৈধ্য পথে আসছে, দুই, কি ভাবে রেমিটেন্স কালো হচ্ছে ? প্রশ্নের উত্তর, যে রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি যার পরিমান দশ বিলিয়নের টাকার উপরে তার ২০% আসে বৈধ্য পথে ও ৮০% আসে অবৈধ্য পথে। অর্থাৎ আরব সহ বিভিন্ন দেশে আমাদের যে ৭০ লাখ মূর্খ অর্ধশিক্ষিত দরিদ্র প্রবাসী মুজুরেরা থাকে তাদের টাকা কালোটাকা !!!! কারন এই অংশটাই অবৈধ্য পথে আসে।আর ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসীরা সেখানে যা আয় করে তা সেখানেই ব্যয় করে, বা তারা সেখানেই সেডেল।আবার এখানকার প্রবাসীদের বড় একটা অংশ দেশ থেকে পিতামাতা বা নিজের কালোটাকা সেখানে পাচার করে দুই হাতে খরচ করে, যেমন নেতা আমলা চোরাকারবারীদের ছেলেমেয়েরা।
গ্রামের মূর্খ অশিক্ষিত আরবের মুজুর মিসকিনেরা, যারা বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার দিন থেকে প্রতারিত হতে শুরু করে নানা দলাল, ফরিয়া, রাজনীতিবিদ, আমলার হাতে।যেদিন দেশে ফিরে আসে, সেদিন এয়ার্পোর্টে তাদের মালামল নিয়ে টানাহেচড়া পর্যন্ত করে কাস্টমস অফিসারেরা।আর বাড়ি গিয়েও যারা বিদেশ ফেরত ধূর হিসাবে গ্রামের টাউট বাটারপারদের খপ্পরে পরে।সে দেশ, গ্রাম, বাড়ি ছেরে নিসংঙ্গ অর্ধশিক্ষিত বিদেশ বিভ্যুয়ে ছেলেটি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রাতদিন মুজুরি করে, দেশি টাকায় মাসে যে মাত্র বিশ, ত্রিশ বা পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতন পায় - যা এখানকার ছোটছোট চোরেরাও তাদের এক সন্ধ্যার ফ্যামিলি চাইনিজ খাওয়ায় বিল দেয়।সেই টাকা নিজের পেট কেটে যার প্রায় পুরোটাই দেশে বউছেলেমেয়ে পরিজনের জন্য পাঠায়, তার উপর থাকে সমাজের প্রতিটি অংশের লোলুপ দৃষ্টি, সেই রক্তে কেনা কাঁচা টাকাকে নিয়ে দশকের পর দশক ধরে চলছে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক হাজার রকমের ফন্দি ফিকির ও ধান্দাবাজী আর সাদাকালোর খেলা।এই যে আজ অর্থমন্ত্রী এগুলোকে কালোটাকা বললেন তা এক চোখা গর্ধপের কাছে আসলেই অপ্রদর্শিত টাকা মনে হবে অথবা দৃষ্টিই আকর্ষন করবে না।কিন্তু এই বিপুল রেমিটেন্সকে কাজে লাগিয়ে গত দুই দশক ধরে রাষ্ট্র, অর্থমন্ত্রনালয়, বাংলাদেশব্যাংক, রাজনীতিবিদ, আমলা ও লুটেরা গোষ্ঠি তাদের দুর্নীতির কত লক্ষ কোটি কালোটাকা শুধু সাদাই করেনি, দেশে থেকে প্রতিদিন পাচার করে যাচ্ছে সেই খবর কেউ নেব না।আমাদের কমনসেন্সেই বিষয়টা ধরা পরবে না।গ্রামের যেই ছেলেটি বাপের পৈতিক জমি বিক্রি করে, গরু বিক্রি করে, সবাইকে সেই নিজের টাকার ভাগ দিয়ে, বিদেশ গিয়ে দিনরাত মুজুরী করে যেই টাকা উপার্যন করলো তাও কালো টাকা ? এই হলো আমাদের অর্থনৈতিক আইন কানুনের আউটপুট।
তাহলে দেখা যাচ্ছে অর্থমন্ত্রী প্রবাসীদের আয়কে অপ্রদর্শিত টাকা বলে ভুল করেন নি।এখন ঘটনাটা দেখুন কি দিয়ে কি হলো - বর্তমানে প্রায় ১ কোটি প্রবাসী মিডিলইস্ট থেকে শুরু করে ইউরোপ আমেরিকায় বসবাস করে।ধরে নিলাম এর অর্ধেক অন্তত গ্রামের সাধারন মূর্খ ছেলেমেয়ে।সে রকমই এক লাল মিঞা দুবাইয়ে কাজ করে, কনস্ট্রাকশন ফার্মে।দুই দিন পর এ মাসের বেতন পাবে, তার কোম্পানীর দেয়া ব্যাংক একাউন্টে সে টাকা জমা পরবে।ব্যাংকে গেল বেতনের টাকা তুলতে, তুলে হাতে কয়টা টাকা রেখে সবটা বাড়িতে পাঠাতে হবে, মা বলেছে নায়েব সাহেব বলেছে, বিশহাজার টাকা দিলেই তার পৈত্রিক ভিটাবাড়ির নামখারিজ হয়ে যাবে, চাচারা আর জোর করে দখল নিতে পারবে না, ঐদিকে সুদের টাকা এখনও অর্ধেক বাকি।ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পর তার পিছনে দাড়িয়ে থাকা এক বাংলাদেশি লোক বললো তিনি দেশে টাকা পাঠানোর লোক মানে এজেন্ট।সে জিজ্ঞেস করলো, ভাই বাড়িতে টাকা পাঠাবেন ? কোথায় বাড়ি, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেন! বাড়িতে টাকা হাতে পাইয়া মোবাইলে কথা কইয়া তার পর আমাকে দিরহাম দিবেন।রেইট হাইয়েস্ট এবং কোন ফিস বা কমিশনও লাগবে না, ফ্রি, দেশসেবা বলতে পারেন!আমরা দেশ প্রমিক।
এতে এজেন্টের লাভ কি ? লাভ ওর পুরাটাই, সে আসলে হুন্ডি করছে। এখানে লাল মিঞার দেয়া মোবাইল নম্বরের ঠিকানায় লোকাল হুন্ডির এজেন্ট বাংলা টাকায় যে টাকা পৌছে দিলেন আসলে ঐ টাকাটা ছিল অবৈধ্য, দুর্নীতির কালোটাকা -আন্ডার্গ্রাউন্ডে একটা বড় মার্কেট আছে যেখানে টাকা সাদা করা এবং একই সাথে টাকার ভিসা নেয়া হয়ে যায়।আর ঐ দিকে দুবাইয়ের এজেন্ট লাল মিঞার কাছ থেকে যে দিরহাম নিলেন সেটা ছিল সাদা টাকা।এভাবে দুবাইয়ের সাদাটাকা দেশে এসে কালোটাকা হয়ে গেল।আর লুটেরারা এক ঢিলে দুই পাখি, টাকা পাচার ও সাদা দুইই হয়ে গেল।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষজনও প্রবাসে থাকে, তারাও নিজেদের দেশে টাকা পাঠায়।তবে তারা কেউ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠায় না।পাঠায় ব্যাংকের মাধ্যমে।কারন ২০১২ সালে তারাতাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক উন্নত করে ফেলেছে।আজ বিশ্বের যেকোন নাগরীক যেকোন দেশে বসে তার ঐ দেশের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে ফান্ড তার নিজের দেশে বা যেকোন দেশে যেকোন ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে পারে ল্যাপটপে বসেই।আর বাংলাদেশ পরে আছে এখনও ১৯৮০ দশকের ব্যাংকিং নিয়ে।কেন ? এরকম টাকা পাচার থেকে শুরু করে দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে লুটতরাজ করার জন্যই অর্থমন্ত্রনালয়, বাংলাদেশব্যাংক, রাষ্ট্র অতিসুপরিকল্পিত ভাবে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে এরকম অথর্ব করে রেখেছে।আর আজ সিলেটের হুন্ডি ব্যাসার অধিপতি আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেন প্রবাসীদের আয় কালোটাকার উৎস।এই হচ্ছে অতিসংক্ষেপে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার ও দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের অতি সংক্ষেপ এক দিক। নিউজ
আমাদের বৃদ্ধ অর্থব অর্থমন্ত্রী তিন বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশে পেপলটাই আনতে পারলেন না, রিট for Paypal in bd Now - দৃষ্টিআকর্ষন হাইকোর্ট
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন