হাতেগোনা দশবারজন মালিক, শাহ আলম, মতি, ফালুর, মিডিয়ার ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা ভুলে যান। এখন আর টাকা দিয়ে, গিফ্ট দিয়ে, লাঞ্চ দিয়ে সাংবাদীক ডেকে এনে সংবাদ সন্মেলন করার দরকার নাই। ঐ কাজ করপোরেট হাউজ পর্যন্তই থাকুক। তারা লাঞ্চ, গিফ্টের সাথে বিশ সেকেন্ড পঞ্চাশ হাজার টাকা রেটে প্যামেন্টও দিক। করুক, ঐ টাকা সিএসআর এর পাঁচ শতাংশ প্রফিট থেকেই যাবে, যদিও জনগণের টাকা বড়লোকের মিডিয়া ম্যানেজে মিসইউজ মাত্র।
কিন্তু সাধারন মানুষের সংবাদ সন্মেলন করতে এখন আর সাংবাদিকের প্রয়োজন নাই। আপনি আপনার বক্তব্য টেক্সট, ইমেইজ, ভয়েস, ভিডিও যেকোন ফরমেটে ইন্টারনেটে ছরে দিন, নিজে না পারলে আশেপাশের পুলাপানেরে ডেকে পুলাপানের সংবাদ সন্মেলন করেন। আপলোড দিতে বলেন, মুহুর্তে ফেইসবুক টুইটার ইউটিউব ব্লগে ছরিয়ে যাবে। তখন গুরুত্ব বিবেচনায় ফালুর টিভির রিপোর্টার তার নিজের মাসিক রিপোর্ট ভাউচারের জন্য আপনার পিছে ছুটবে। যেমন ধরুন এখন যদি, এপিএস ফারুকের ড্রাইভার আজম আলীর স্ত্রীর আশে পাশের কেউ তার ভয়েস/ভিডিও/ইমেজ রেকর্ড করে নেটে আপলোড করতে পারতো তাহলে ঐ ডকুমেন্ট চব্বিশ ঘন্টা পরের পত্রিকাগুলোর প্রথম হিটের আগেই এক দেড় লাখ হিট পেতে যেত, এখন বলেন কোনটা শক্তিশালী ?
এখানে আমি নতুন আবিষ্কারের কিছু বলিনি। এদেশে এখনও পুলাপান সাংবাদীক সন্মেলন শুরু না হলেও অচিরেই হয়ে যাবে। সরকার শুধু মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অনুমোদন দিয়ে তা সহজ লভ্য ও সাধারন মানুষের নাগালে আনলেই কেল্লাফতে। দেশে ত্রিশ চল্লিশ শতাংশ নেট ইউজার হলে সমস্ত মিডিয়ার পিতা হয়ে যায় ইন্টারনেট যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরীকের এ্যাক্সেস আছে। প্রাইভেট চ্যানেলের ২০ সেকেন্ডে ৫০ হাজার টাকা রেট লাগবে না। মিডিয়ার স্বাধীনতার গুলি মারেন, স্বাধীন মিডিয়ার দাবী তুলেন । দেশের যেকোন নাগরীকের যেকোন সময় যেকোন লোকেশন থেকে ঐ মিডিয়ায় এ্যাক্সেস থাকবে, যেমন এই মুহুর্তে আপনি এই লেখাটিও পড়ছেন, পেপারও পড়েন, টিভিও দেখেন, পার্থক্য আছে কি ?বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই এ্যানভায়রনমেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০০ সালে, ওয়ার্লেস ব্রডব্যান্ড আবিষ্কারের সাথে সাথেই। দেখেন না ইউটিউবের জন্ম ২০০৪ সালে। আর ইউটিউবের চেয়ে বড় মিডিয়া এই মুহুর্তে আর কে ? সারা বিশ্বের যে সকল মিডিয়ার ইউটিউবে চ্যানেল নাই, সেগুলো বেকওয়ার্ড মিডিয়া বলে। সম্প্রতী আরব বিশ্বে বসন্তের ডাক কিভাবে জনগণের স্বাধীন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিটি নাগরীকের কাছে পৌছে গিয়েছিল ? অবশ্যই বলবেন না সরকার রাষ্ট্রিয় প্রচার মাধ্যে বিক্ষোভকারীদের প্রচার করে দিয়েছিল !
তিউনিশির ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪০ শতাংশ, মিশর ৩০ শতাংশের উপরে। একটা সমাজে যখন একতৃতীয়াংশ নেট ইউজার থাকে তখন অটোমেটিক শতভাগ মানুষ সেই মিডিয়ায় সংযুক্ত হয়ে যায়, কারন মানুষ সমাজে ও পরিবারে এক সাথে বসবাস করে, একে অন্যকে হায়, হ্যালো বলে, এনালগ শেয়ার করে। মিশরে একটা ২৬ বছরের কিশোরী ইউটিউবে বললো, পিপল আই এম গোয়িং টু তাহরির স্কয়ার ... মুহুর্তে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ হিট। মোবারককে নামিয়ে ঘরে ফিরেছে। আর ১৮ দিন জনগণকে রাউন্ডদ্যা ক্লক সংযুক্ত রেখেছে সোস্যাল মিডিয়াগুলো। কোথায় কারও একটা ডেমো মুহুর্তে ছরিয়ে গেছে মিশর ছেরে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত। মানুষের এরকম স্বাধীনতার ভয়েই বাংলাদেশে প্রতিটি সরকার ইন্টারনেটকে ভিষন ভয় পায়। তাই ২০১২ সালে এসেও আমাদের নেটের অবস্থায় সোমালিয়া, সুদান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়ার চেয়ে খারাপ। এখানে এখনও মোবাইল ব্রডব্যান্ডই নেই। গত শতকের ইন্টারনেট ব্যাংকি বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশেই নেই। সাকুল্যে জাতীয় ব্যন্ডউইথ ইউজ ২২ জিবিপিএস, ১৬ কোটির দেশ যা জাপানের দশজন ইউজারের ব্যান্ডউইথের চেয়ে কম। তাহলে শুনছেন যে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয় হয় করছে ? সব ভূয়া, ছাগল তো তাই বুঝতে পারছেন না।
যাহউইক সংবাদ সন্মেলনে ফিরে আসি। নেটের এই দুরবস্থা থাকলেও এরকম স্বাধীন নিউজ দিতে সমস্যা নাই, একটু কষ্ট আর ধর্য্য থাকতে হয় শুধু। আমি ২০০৮ সালে সুনামগঞ্জের শাল্লা থেকে আপলোড করতে পেরেছি। এখন অবস্থা আগের চেয়ে বেটার, নেটে লক্ষ লক্ষ বাঙালি প্রতিমুহুর্তে পাবলিশ করছে, শেয়ার করছে। ডিজএ্যাডভান্টেজ যেটা তা হলো দেশে নেট ইউজার খুব কম। তাই কোন তথ্য নেটে ছরালেও সাধারন মানুষের কানে পৌছায় না। নেট ইউজার আর তিন চারগুন বাড়লেই এই অবস্থা কেটে যাবে। এখন সরকার আট দশ শতাংশ দাবি করলেও সেটা যে নিতান্তই ইডিয়টিক ইনফো তা ২২ জিবিপিএস ন্যাশনাল ইউজ, তথ্যটি দেখেই বোঝা যায়, সর্বোচ্চ কত জন যেতে পারবে এই পরিমান ব্যান্ডউইথ দিয়ে যা দিয়ে জাপানের দশজন যায় ? সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু নেট ঠিক হলে পরে দেখে শেখার চেয়ে, এখনই নিজের চার পাশে যেখানে যা পান প্রকাশ করে মানুষের প্রকাশের অভ্যাসটা গ্রো করুন।
কাল হরতালে, যে যেখানে পারেন এরকম সংবাদ সন্মেলন করবেন। নেট র-ভয়েস, ভিডিও, ইমেইজের ডিমান্ড ভেরি হাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:২৬