ঢাকা-কুয়ালালামপুর-সিঙ্গাপুর-ঢাকা
Click This Link
দেশের বাইরে যেতে ভাল লাগে কিন্তু কখনই এমন ইচ্ছা করে না যে হা করে অমুক মসজিদ বা মন্দির দেখতে অথবা জমিদার বাড়ী দেখতে। নেপালে যেবার গাইড আমাকে সয়ম্ভু মন্দির দেখাল তখন মনে হল আমি ঢাকার কত কত পুরোন আর ঐতিহাসিক মন্দিরই দেখি নি। সবচেয়ে বেশী যা ভাল লাগে তা হল কোন রাস্তার পাশে বসে ঐ দেশের মানুষের জীবনযাত্রা দেখতে। যে কারনে কোন দেশে গিয়ে অনেক অনেক স্পট না দেখে ফিরে আসতে আমার তেমন খারাপ লাগে না।
আমি যখন মালয়েশিয়া যাবার প্ল্যান করছিলাম তখনই হঠাৎ করে দেখা হল আমার পুরনো বন্ধু রাজুর সাথে। সে সিলেটের একটি ট্রাভেল এজেন্সীতে কাজ করে। আমার টিকেটের যাবতীয় চিন্তা সে নিয়ে নিল। আমার প্রাথমিক প্ল্যান ছিল কুয়ালা লামপুর থেকে ল্যাংকাউই যাওয়া। সাথে বউ আর বাচ্চা থাকায় আমার এক বন্ধুকে বলছিলাম কি করে কুয়ালা লামপুর থেকে ল্যাংকাউই গেলে ভাল হবে। সে আমাকে প্লেনে যেতেই সাজেস্ট করল। সাথে এও বলে দিল এর চেয়ে কম খরচে আমি সিঙ্গাপুর যেতে পারি। প্রায় ৪বছর আগে আমি একবার সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম। তখন একা একা সেন্তোজা আইল্যান্ডের 'সং অব সি' দেখে এত মন খারাপ লেগেছিল যে মনে মনে ঠিক করেছিলাম আমার ফ্যামিলি মেম্বারদেরও কোন একদিন এনে দেখাব। অন্যদের তো আর নিয়ে যেতে পারি নি। সুযোগ যখন এসেছে তখন বউকে দেখিয়ে আনি - এই ভেবে ঠিক করলাম সিঙ্গাপুরও ঘুরে আসব।
আমি এমন কোন ভিআইপি না যে চাহিবা মাত্র ফরেন এম্বাসি আমাকে ভিসা দিতে বাধ্য থাকবে। তাই পরের চিন্তা পরে করব এহেন ঠিক হল। আগে মালয়েশিয়ার ভিসা নেয়ার আবেদন করলাম। অনলাইন থেকে জেনে নিয়ে ভিসা ফি এবং প্রয়োজনীয় কাগজসহ আমার সুহৃদকে দিলাম। সেই ৩/৪ কার্যদিবস পরে আমাকে ভিসাসমেত পাসপোর্ট দিয়ে গেল। আমি আমার ১.৫ বছর বয়সী ছেলের পাসপোর্ট আলাদা করেছিলাম। তার পাসপোর্টে ভিসা সিল দেখতে বেশ লাগল।
এবার সিঙ্গাপুরের ভিসার জন্য এপ্লাই করলাম। সেই সুহৃদই সব করে দিলেন। ৫ কার্যদিবস পরে সিঙ্গাপুরের এম্বাসীও আমাদের তাদের দেশে নিরাপদ মনে করলেন। এবার শুরু হল টাকা পয়সার যোগাড়। আমার যে বন্ধু এতদিন বলছিল টাকা পরে দিলেও হবে সে এখনও প্রায় একই বথা বলছে। বলছে যে টাকা আজকে না দিলেও কাল দিলেই চলবে। আমি যেন তাড়াহুড়ো না করি!! আমিও আর দেরী না করে ক্রেডিট কার্ডের একটি চেক ভেঙ্গে তার ব্যাংক একাউন্টে দিয়ে দিলাম। এইটা তেমন কোন সমস্যা মনে হল না। তারপর গেলাম ফেরন কারেন্সীর জন্য। গুলশান মার্কেটে অনেকগুলো ফরেন এক্সচেজ্ঞের দোকান আছে। ৩টি দোকান চেক করে যেখানে সবচেয়ে ভাল রেট বলে সেখান থেকে কারেন্সী কিনে নেয়াই আমার তত্ব। কিন্তু সেখানেই আক্কেল গুড়ুম। ইতিমধ্যে যে মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত আর সিঙ্গাপুর ডলারের দাম এত বেড়ে গিয়েছে তা আমার ধারনার বাইরে ছিল। আবার তার সাথে যুক্ত হয়েছে হজ্বের জন্য দাম বাড়া। 'সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কি ভয়' - এইটাও আমার আরেকটি প্রিয় লাইন। তাই যা আছে কপালে ভেবে কিনে নিলাম যতটুকু পারা যায়। আমার প্লেনের টিকেটের রুট ঢাকা-কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর-ঢাকা। এর মধ্যে কুয়ালালামপুর থেকে সিঙ্গাপুর বাস না এয়ার এশিয়ায় যাব তা ঠিক করি নাই।
এর মধ্যে দেশে শুরু হয়ে গেল হজ্ব ফ্লাইট নিয়ে ঝামেলা। এমনিতেই বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে টিকেট কেটেছি বলে বন্ধুরা ভয় দেখাচ্ছিল। এবার তারা আরও কয়েকটি দাত বের করে হাসি দিল। কেউ কেউ এমন বুদ্ধিও দিল যেন এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় আবার ফেরত আসার প্রস্তুতি নিয়ে যাই। কারন ফ্লাইট যে উড়বে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। আরও ভয়ের খবরটা দিল এয়ারপোর্টে কাজ করে আমার এমন এক বন্ধু। সে জানালো ঐ দিনের মালয়েশিয়াগামী বিমানের ফ্লাইট অভার বুকড। আমি যেন একটু আগেই এয়ারপোর্ট চলে যাই।
যা আছে কপালে ভেবে আল্লাহর নাম নিয়ে আয়াতুল কুরসী পড়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে রওয়ানা হলাম এয়ারপোর্টে।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফ্লাইট পাওয়ার জন্য তারিখটা বেছে নিয়েছিলাম ২৭ সেপ্টেম্বর। বাদ বাকি ঘটনায় আমি মোটামোটি চমৎকৃত। এই গল্প আবার আরেকদিন করব ইনশাল্লাহ।