৮ অক্টোবর, ২০১১
শনিবার
আজ অনে-ক ক্লান্ত, অল্প কথায় শেষ করব তাই! সেই ভোর ছ'টায় যাত্রা করে কলকাতায় পৌঁছে হোটেল ঠিক-ঠাক করে রুমে ঢুকতে পারলাম সাড়ে দশটারও পরে। আর এখন সোয়া বারো, বাংলাদেশে পৌনে এক, আর আপনি নিশ্চয়ই গভীর ঘুমে- স্বপ্ন্ররাজ্যে কড়া নাড়ছেন! কাল তো আবার অফিস, আর এখানে রোববারে কাল সারা কলকাতা ঘুমুবে, আমরা বেরিয়ে পড়ব সকাল সাতটেতেই!
কলকাতা না কি full of life, কই! সোয়া এগারটাতে বেরিয়ে ঘুরে ঘুরে খাবার দোকান খুঁজতে খুঁজতে দেখি সব বন্ধ প্রায়! আর রাতের ঢাকা ভাবেন, কত্ব হাজার রকমের খাবারের পসরা নিয়ে বসে থাকে পুরোনো ঢাকা! কেন যেন কলকাতা একদমই ভালো লাগে না আমার, খুব নোংরা লাগে- চারপাশে কেবল টয়লেট আর এলকোহলের গন্ধ! মির্জা গালীব স্ট্রীট (কলকাতার হোটেল পাড়া বলা যায় একে, সাদার স্ট্রীটকেও; নিউমার্কেটের একদম কাছে) এর যে হোটেলে উঠলাম একদম পছন্দ হয় নি আমার, ৪০০ রূপী বাজেটে এর থেকে ভালো হোটেল মেলারও কথা না! অদ্ভুত ঘোর-প্যাঁচওয়ালা ডিজাইন; হাইট মেলাতে না পারলে আর্কিটেকচারের ছাত্ররা এরকম নানান স্টেপ আপ-ডাউনের খেলা খেলে!
তবে ভারতের যে ব্যাপারটা অদ্ভুত ভাল্লাগে আমার তা ওই গন্ধই; একেকটা শহরের কেমন একেক রকম গন্ধ! কলকাতায় ঢুকতেই এত সুন্দর হাস্নাহেনার গন্ধ পাচ্ছিলাম আর ভাসানের ঢাকের আওয়াজ! দশমীর একদিন পর এলাম, তাও দেখি বিসর্জনের আয়োজন! বাস থেকে কয়েকটা স্ন্যাপ নেওয়ার চেষ্টা করলাম, চলন্ত অবস্থায় দেবী প্রতিমা ঝাপ্সা হয়ে গেল- তবুও দু'একটা দেখাব না হয় আপনাকে!
রাতের কলকাতায় ভাসানের আয়োজন...
বিসর্জনের পথে...
আমরা যখন একসাথে আসব, বলে রাখছি কলকাতায় স্টে করব না! এমনিতেই চারপাশটা দুর্গন্ধ, কুশলটা আবার খায় সিগ্রেট। খবরদার, আর সিগ্রেট খাওয়া চলবে না কিন্তু! কক্ষনো বাসে আসব না, হয় ট্রেন নয় বিমান- দুপাশেরই কাস্টমসের লোকগুলো এত্ত বাজে, যাত্রীর চেয়ে দালালের সংখ্যা বেশী!আচ্ছা, এত লোভ কেন মানুষের বলবেন? অসদুপায়ে দু'পয়সা উপার্জনের জন্যে মানুষ কেন এত পাগল হয়? ভ্রমণ কর তিনশ টাকা জমা দিতে দাঁড়ালাম সোনালী ব্যাংক এর বেনাপোল বুথে, নির্লজ্জের মতো ঘুষ চাইল বিশ টাকা- কাস্টমসেও না, ব্যাংকে- বিশ্বাস হয়?
ভারতে ঢুকলাম, কাস্টমস অফিসারদের না কি বাংলা টাকা ১০০ দিতে হবে! চোর-ছ্যাঁচড়দের মতো টাকা চাইতে একটুও লজ্জা হয় না তাদের! এসবই জানি, এসব ভোগান্তির কথা কতোই তো শুনি; তারপরেও আমি প্রতিবার অবাক হই, ফ্রাস্ট্রেটেড হই! আচ্ছা, বাদ দিই এসব হতাশার গপ্পো! কেমন কাটল আজ সারাদিন আপনার? ছুটির দিন, সারাদিন ফাটিয়ে একা একা ঘুরেছেন নিশ্চয়ই? আমিও কাল সারাদিন অনেক ঘুরব, আর লিখে লিখে হিংসে দেব আপনাকে!
আজ শেষ করি!
শুভ রাত!
৯ অক্টোবর, ২০১১
রোববার
জানেন, আজ কত্ব সকালে বেরিয়েছি আমরা? পৌনে সাতটা! আপনি নিশ্চয়ই তখন ঘুমে কাদা! অনেক, অনে-ক কিছু ঘটেছে আজ, কোনটা রেখে যে কোনটা বলব! সবচেয়ে এক্সাইটিংটাই শুরুতে বলি, আজ আমাদের দেখা হলো- গৌতম দা'র সাথে। চিনতে পারছেন না? আরে ব্লগার মহাবিশ্বের সাথে। কলকাতার মানুষ আতিথেয়তা জানে না- এই বহুল প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে দাদা আমাদের দমদম মেট্রো স্টেশন থেকে পিক করে নিয়ে গিয়ে বিশাল খানা-দানায় ভূরিভোজন করিয়ে আবার গাড়ীতে তুলে দিয়ে গেলেন। তবে কাহানী মে টুইস্ট হ্যায়- দাদার পিতৃভূমি কিন্তু কুষ্টিয়ায়! আর কলকাতার বৌদিমনি যে কী ভাল! রান্নাও চমৎকার, কুশল তো পনির দিয়ে করা আইটেমটার রেসিপি মুখস্থ করল!দাদা-র মেয়ে টুপুরটা যে কী ভয়াবহ মিষ্টি, নরসিংদীর রসগোল্লার মতো- একদম কপ করে গিলে ফেলতে ইচ্ছে করে!
কলকাতা নিয়ে কাল কতো অভিযোগ-অনুযোগ করলাম আপনার কাছে, আজ সব নাই হয়ে গেল! কলকাতার জীবন দেখেছি খুব কাছ থেকে- বাসে-মেট্রোতে চড়ে, সল্টলেকের পশ এলাকায় ঘুরে ঘেমে ভিজে সিটি সেন্টারের এসি-র বাতাস গায়ে মেখে, ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে ক্লান্ত হয়ে রাস্তার নিম্বুপানি আর পাওভাজি খেয়ে আর বাসের ভেতর থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে বিসর্জ়িত না হওয়া পূজোমন্ডপে দেবী-প্রতিমা দেখে! কেবল একটা জিনিসই বুঝতে পারছিলাম না- বাংলাভাষী মানুষ এত কম কেন কলকাতার রাস্তাঘাটে!
কলকাতার বাস, কলকাতার ঐতিহ্যের মতোই
সিটি সেন্টার (ভারতের স্বনামধন্য স্থপতি চার্লস কোরিয়ার ডিজাইন করেছেন), সল্টলেক
ভিক্টোরিয়ার কোমল সবুজে চোখ জুড়োল, মন ভরল মেমোরিয়ালে প্রদর্শিত বিরল সব জল আর তেলরং এর পেইন্টিং দেখে!হাওড়া ব্রীজে দাঁড়িয়ে গঙ্গার বাতাস খেতে খেতে ব্রিটিশদের দূর-দৃষ্টির প্রশংসা করলাম আর তারপর দিনান্তে গড়িয়ায় সত্যি সত্যি বাঙ্গালী আবাস দেখে, আতিথেয়তা গ্রহণ করে! কী, হিংসে হচ্ছে খুব? আচ্ছা, আর হিংসেয় জ্বলতে হবে না- আমরা আবার এসে ভিক্টোরিয়া পার্কের অপার্থিব সুন্দর সবুজে কিছু নিশ্চুপ মুহূর্ত পাশাপাশি বসে না হয় কাটিয়ে যাব!
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
হাওড়ার ঝুলন্ত সেতু
মেট্রোতে চড়ে গড়িয়া থেকে দমদম যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই লিমনের 'আমি ঘরের হই নি, বাহির আমায় টানে' গানটা মনে পড়ল আর তা মাথার ভেতরে বাজতেই থাকল!
আমি পথ থেকে পথে যাই, দূর থেকে দূরে
আমি তোমার জন্যে গাই একটা গান সুরে
আমি তোমায় ভুলে বলো যাবো কোনখানে?
তাই তোমার হই নি আকাশটা জানে.........
এই গানটা আপনাকে দিলাম আজ!
কেন যেন আজ খুব অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে আমার!
আপনি আমার খুব কাছেই আছেন, খু-উ-ব কাছে! অথচ কেন মনে হচ্ছে আপনি অনেক দূরে সরে যাচ্ছেন আমার কাছ থেকে!
আমি ছুঁতে পারছি না আপনাকে!
প্রিয় বন্ধু 'কানন' কে উৎসর্গ করলাম এই লেখাটা! মনের কথা শোনার মতো বন্ধু হয় তো মেলে অনেকই, কিন্তু সেই কথাগুলো ভুল না বোঝে ঠিক নিজে যেমনটি অনুভব করি তেমন করে বোঝার মতো বন্ধু খুব বেশি মেলে না! প্রবাসে খুব খু-উ-ব ভালো থাকিস!