আজকাল প্রায় সময় মেয়েদের সম্পর্কে এক ধরণের মন্তব্য শুনি, কখনও positive কখনও negative অর্থে
'তাকে আমার মেয়ে মনে হয় না', 'সে তো প্রায় ছেলেই' অথবা 'সে মেয়ে না, টমবয়' ।
সচরাচর এ ধরণের মন্তব্য করা হয় চিন্তাচেতনায় সামনে এগিয়ে থাকা সফল সাবলীল মেয়েদের সম্পর্কে।
অনেকক্ষেত্রে মেয়েটাও নিজেকে মেয়ে না ভেবে প্রায় ছেলেদের মত বা টমবয় হিসেবে ভাবতে গর্ব বোধ করে।
এমন কী মেয়ে হওয়া স্বত্ত্বেও নিজের বৈশিষ্ট্যকে সে ভাগ করে নারী বৈশিষ্ট্য বনাম পুরুষ বৈশিষ্ট্যে, যদিও সামগ্রিকভাবে তার যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নারীর।
কথা হচ্ছে নারী এখনও সমাজে under privileged একটা লিঙ্গ।পারিপার্শ্বিক চাপ, প্রতিকূলতা স্বত্ত্বেও একটা মেয়ে যখন double effort দিয়ে তার যোগ্যতা প্রমাণ করে উঠে আসে, তখন তাকে তার লৈঙ্গিক পরিচয়ে স্বীকৃতি দেয়া হবে না কেন!
তাহলে দাঁড়াচ্ছে কী, সমস্যার মুখোমুখী হও মেয়ে হিসেবে, কারণ এটাই অলিখিত সংবিধান। এবং যদি under privileged হওয়া স্বত্তেও নিজেকে উন্নত প্রমাণ করতে পারো, তাহলে তুমি ঠিক মেয়ে নও। আচরণে অনেকটা ছেলেদের মত কিন্তু দৈহিকভাবে নিতান্তই একটা মেয়ে।
শ্রেষ্ঠত্ব যদি কোনো শিরোপা হয়ে থাকে তবে সেটা অর্জনের বিষয় , লিঙ্গসূত্রে প্রাপ্ত কোনো সম্পদ না। পুরুষ যেখানে জন্মগতভাবে over privileged , under privileged উন্নত নারীকে প্রতিকূলতাহীন সুবিধাপ্রাপ্ত পুরুষের সাথে শ্রেষ্ঠত্বের তুলনা করা অবান্তর।
সমাজের যাবতীয় শ্রেষ্ঠত্ব আত্তীকরণের যে পুরুষতান্ত্রিক চেষ্টা তার মারাত্মক একটা হল উন্নত হলেই সে পুরুষভাবাপন্ন ।
সাফল্যের স্বীকৃতি পেতে যদি পুরুষকে তার লৈঙ্গিক স্বাতন্ত্র ত্যাগ করে ‘মানুষ’ হয়ে না উঠতে হয়; তবে নারীকে কেন প্রায় পুরুষের মত বা টমবয় ‘উভলিঙ্গ প্রাণী’তে পরিণত হতে হবে!
সামাজিক বিধিনিষেধ আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে অধিকাংশকে মেয়েকে লেখাপড়ার বাইরে প্রায় সামাজিক সম্পর্কহীন একটা নিতান্তই পারিবারিক জীবন পার করে দিতে হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমাজের সাথে সম্পর্কহীন যে কোনো মানুষের আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপনই সবচে’ সাম্ভাব্য ব্যাপার। যদিও আত্মকেন্দ্রিকতা অথবা বস্তুগত জীবন যাপনের কারণ হিসেবে সামাজিক বা পারিবারিক প্রতিকূলতাকে অবজ্ঞা করে নারীকে সংজ্ঞায়িত করা হয় ‘মেয়েলি’ শব্দে।
সামনের সারির মেয়েরা যদি নিজেকে 'নারী' হিসেবে পরিচয় দিতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তাহলে 'নারী' শব্দটার negative image চিরন্তন হয়ে থাকবে।
নারী, নারী হিসেবেই উন্নতির স্বীকৃতি অর্জন করতে শিখুক, অর্ধ পুরুষ বা অলৈঙ্গিক ছদ্মবেশের আড়ালে নয়। এবং ডানপিটে কোনো মেয়ে নিজের পরিচয় টমবয় এর পরিবর্তে ‘নারী’ লিঙ্গের একজন গর্বিত সদস্য পদকে বেছে নিক।
কারণ নারী চরিত্র বা মেয়েলিপনার ঐতিহাসিক সংজ্ঞা কেবল নারীরাই পাল্টে দিতে পারে, সমাজ না।