So over
তার শরীর ক্যাফেইন আসক্তির তীব্রতম পর্যায়ে চলে গেছে। এবং সকাল থেকে পেটে গ্যাস্ট্রিক পেইন দিচ্ছে।
ইদানিং এত বেশি কফি খাওয়া হচ্ছে যে পেশাব করলে ভুরভুর করে কফির গন্ধ বের হয়, সে ভাবল।
Coffee i shoot you.
সে রেগে ছিলো, অবশ্য নির্দিষ্ট কারো ওপর নয়। ক্যাফেইন ক্যান্সার তৈরি করে, বিষ একটা। ভাগ্য ভালো কফি আর কফিমেট দুটাই শেষ। মাসের ৭তারিখ আসার আগে আর কফি কিনবো না। কিনলেও দিনে ১ কাপের বেশি কফি নয়। শেষ কাপটা নিজে খেতে পারলো না বলে এখন আফসোস হচ্ছে। নাহ, আফসোসের কিছু নেই। নিজেকে কন্ট্রোল করা শিখতে হবে। নিজের ক্ষমতা নিজের হাতে রাখার চেয়ে তৃপ্তির আর কী হতে পারে? হ্যা তমার ব্যাপারটাও কন্ট্রোলের মধ্যে আনতে হবে। হতে পারে তমা অনেক সুন্দর তার মানে এই না তার পাত্তা না পেলে জীবন বৃথা। না সে আমার খোঁজ নিয়েছে, না কখনও অপেক্ষা করেছে। হিসাব তাহলে যার যার তার তার, ভাবলো সে। অবশ্য তমাও কফি পছন্দ করে। কিন্তু সে তো আমার মেসেজের কোন রিপ্লাই দেয় নাই। আবার মোবাইল দেখল সে। ৩১ ঘন্টা ১৬ মিনিট পার হলো। মেয়েগুলা এত ভাব নিতে পারে জানা ছিলো না।
আমি আর কখনোই তমার সাথে কথা বলতে যাবো না, অবশ্য সে বলতে আসলে আলাদা বিষয়; তখনও ঠান্ডা আচরণ করবো। এবং কল করবো না, চ্যাটেও নক করবো না। সিদ্ধান্ত ইজ সিদ্ধান্ত। তমা you are so over.
কফিমেটের বয়ামটা আমার দিকে নিরীহ ভাবে তাকিয়ে আছে, আহা, শালারা এখন তোর দাম ২৫০ টাকা করে ফেলসে, ভাবল সে। কাছে গিয়ে বয়াম হাতে নিয়ে সে বুঝলো বোতল খালি না। দৌড়ে কফির বয়াম চেক করলো। নিচের দিকে কিছু কফি গলে লেপ্টে আছে। তাতেই চলবে। দ্রুত কফির বয়ামে শেষ কফিমেটটুকু ঢেলে চিনি আর গরম পানি মেশালো। ঝাকাঝাকি করে গরম কফিটা বোতল থেকে সরাসরি গলায় চালান দিলো। শান্তি।
কফিকে ক্ষমা করা যায়, but তমা, তুমি ভাব নিসো, এর ফলাফল তোমাকে দেখতে হবে। ছাদের কোণে গিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সে ভাবে। তমাদের বারান্দায় কাউকে দেখা যাচ্ছে। এই গরমের মধ্যে গায়ে চাদর প্যাচানো। তমা না তো?
তার কি জ্বর?
তার কি অসুখ?
তার কি মন খারাপ?
বৈরী বাতাস
ব্যাপারটা বর্ষাকালের বাতাসে ব্যাডমিন্টন খেলতে নামার মত। আন্দালীব থাকলে অণিমা থাকে না। অণিমা থাকলে আন্দালীব থাকে না। আন্দালীব কিছু বোঝাতে চাইলে অণিমা ভাব ধরে এমনটা তো হতেই পারে। অণিমা কিছু বললে আন্দালীব সেটাকে কমেডিতে রুপান্তরিত করে।
এভাবে চলে গেল মাস ও বছর।
এখন তারা বিরক্ত ও হতাশ।
দেখা হলে কীরে খবর কী এর বাইরে আর কিছু না।
তাদের কথার সাম্রাজ্যে এখন সাইলেন্স আর ব্যাকস্পেস এর ছড়াছড়ি।
আড্ডায় কথা উঠলে আন্দালীব বলে আরে আমাকে দিয়ে কিছু হয় কখনও?
অণিমা বলে জানোই তো কাউকেই আমার বেশিদিন ভাল্লাগে না।
তাদের শ্বাসটা যে তখন একটু ভারী হয়ে ওঠে তা চেয়ার টেবিল বুঝলেও তারা টের পায় না।
অবশেষে বরফ ভাঙতে একরাতে ছেলেটা লিখলো, কী করিস?
বর্ষাকালের বাতাসে ব্যাডমিন্টন খেলা অব্যাহত রাখতে নিয়তি মেয়েটাকে রেখছিলো অন্য ব্রাউজারে।
মেয়েটার সাড়াশব্দ নেই। অণিমা, so confused.. so scared.. so hideous..
তারপরও ভালো লাগা? তারপরও অপেক্ষা?
অন্যের কাছে এসে তাকে খুঁজে বের করা??
৫৬মিনিট পর মেয়েটা মেসেজ দেখে দুঃখিত হয়। ততক্ষণে ছেলেটাও নেই।
উত্তর দেয়, স্যরি রে, কাজ করতেসিলাম অন্য ব্রাউজারে খেয়াল করতে পারি নাই।
যথারীতি কোন উত্তর আসে না।
কী ভেবে মেয়েটা লিখে missed you.
তারপর তার কাছেই ব্যাপারটা হাস্যকর লাগে। আন্দালীব, so classy.. so moody.. so rude..
তাকে নিয়ে চিন্তা করার কিছু নাই। সে আমার অপারগতা কখনই বুঝবে না।
তারপরও দীর্ঘশ্বাস?
কথাটা স্ক্রীনে দেখতে ভালোই দেখাচ্ছে তবু মাথা ঝাঁকিয়ে সে কথাটা আনমনে মুছতে কীবোর্ডে হাত রাখে।
মর্মান্তিক ব্যাপার! ব্যাকস্পেস আর এন্টার কিন্তু একদম কাছাকাছি।
যদি থাকো, না থাকো
চ্যাটবক্স ১
পাঠকঃ ইয়েয়েয়ে
সঙ্গীঃ কী?
পাঠকঃ সে আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখসে
সঙ্গীঃ তোকে ডেডিকেট করে?
পাঠকঃ নাহ
সঙ্গীঃ তোকে জানাইসে যে তোকে নিয়ে লেখা?
পাঠকঃ নাহ
সঙ্গীঃ তাইলে এত খুশি হবার কী আছে?
পাঠকঃ পড়ে মনে হইল আমাদেরকে নিয়েই লেখা
সঙ্গীঃ জিজ্ঞেস না করে লাফালাফি করিস না
পাঠকঃ জিজ্ঞেস করলে যদি অস্বীকার করে তাইলে অনেক খারাপ লাগবে রে।
সঙ্গীঃ রাফলি জিজ্ঞেস করবি, লিখল না লিখল কী আসে যায় এমন।
চ্যাটবক্স ২
লেখকঃ শিট!
বন্ধুঃ আবার কী?
লেখকঃ কালকে রাতে টাল অবস্থায় একটা লেখা লিখে পোস্ট করে ফেলসি
বন্ধুঃ সমস্যা কী?
লেখকঃ উহু পারসোনাল কথা দিয়ে ভর্তি , আমার আর তার
বন্ধুঃ হেহে ভয় লাগলে মুছে ফ্যাল, সে হয়ত খেয়ালও করে নাই
লেখকঃ আরে মোবাইল চেক করে দেখি আমি টাল অবস্থায় তাকে মেসেজ দিয়ে পড়ে মন্তব্য করতে বলসি
বন্ধুঃ তাহলে শিট বলা যায়
লেখকঃ কী করি! এই লেখা দেখলে সে হয়ত আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগই রাখবে না
বন্ধুঃ রাখা দরকার নাকি?
লেখকঃ মারা যাচ্ছি
বন্ধুঃ বলে দিলেই পারিস
লেখকঃ বললাম তো সে এরকম টাইপের না, জিজ্ঞেস করলে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে
বন্ধুঃ আরে বাদ দে, তুই লেখক মানুষ যা খুশি নিয়ে লিখবি, কার কী বলার আছে!
চ্যাটবক্স ৩
পাঠকঃ গল্প পড়লাম
লেখকঃ ক্যামন লাগ্লো?
পাঠকঃ আছে... কিন্তু আমাদের কনভারসেশন দিয়ে ভরানো ক্যানো?
লেখকঃ মানুষ আজকাল খালি মজা চায়, তাই ভাবলাম তাদের মজা দিই।
পাঠকঃ অও! ভালো।
My sexy one
রুমটা গাঁজার তীক্ষ্ণ মিষ্টি গন্ধে ভরে আছে।
আমরা ঝিমোচ্ছিলাম। নাতাশা হঠাত বলে উঠল কালকে রাতে তন্ময়কে স্বপ্নে দেখসি। আমি, রাফা আর মতিন ফ্যা ফ্যা করে হেসে উঠলাম।
না, সত্যিই স্বপ্নে দেখসি। দেখলাম আমি আর কয়েক ফ্রেন্ড মিলে তাকে গ্যাং ব্যাং করতেসি।
অ্যা? তোর সাথে খারাপ সময় যাইতেসে নাকি? জিজ্ঞেস করলাম।
নাহ, but আমার ইচ্ছা করে একদিন তাকে অনেক গিলাবো, অনেক। then আমার গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে তাকে রেপ করবো।
আর গার্লফ্রেন্ড, যত্তসব বালছাল, রাফা বলে কোণায় ধোঁয়া ফুঁকতে ফুঁকতে।
মতিন বলে, তোর আবার কী হইল?
নিশু ঘুরাইতাসে, সে বিরক্ত হয়ে হেলান দেয় দেয়ালে।
তারে না বাদ দিয়া দিবি?
দিবোই তো, আগে কয়েকবার চুইদা লই তারপর। আগের বয়ফ্রেন্ডের সাথে কইল শুইসে নাকি! আমার সাথে তার যত বাহানা, মাগী একটা।
বাদ দিবি ক্যান? আমার তো নিশুরে ভালাই মনে হয়, আমি বলি।
ভালা হইলেই কী? সে তো ভার্জিন না। বিয়ার রাতে হাইমেন ফাটাইতে না পারলে বিয়ার দরকার কী?
তাও কথা কাবিনের দাম আছে, আমি বলি।
মতিন বলে এরে জিগাও ক্যা রাফা? এইটা তো সীলমারা লম্পট, এর নিজের নাই ঠিক।
আমরা চারজন ভ্যাকভ্যাক করে হেসে উঠি।
নাতাশা বলে মিরুর নয়া চৌদ্দতম কোম্পানী এত্ত লোকাট প্যান্টস পরে নিচু হইলেই আন্ডারওয়্যার দেখা যায়।
মতিন বলে, এসব পোলারে জুতাইতে মন চায়।
রাফা বলে, হইসে মতিন বেশি ফাল পারিস না। তোর ডার্লিং তো দুধ দেখায়া ঘুরে। অবশ্য জোস শেপ। তুই ধরসশ? কিরাম নরম?
মতিন একটু লাল হয়, হাসে। কইসি মাইয়ারে ওড়না ঠিক জায়গায় দিতে, দিবো না। তয় টিপাটিপি করলে মানা করে না এই যা মন্দের ভালা।
রাফা বলে, তাইলে তো পুরা খানকি মাইয়া রে!
হ দেখি কয়দিন শেপ সেক্সি থাকে। যে পরিমাণ টানাটানি করতাসি আর কয়দিনেই ঝুইলা পড়ব।
আমরা আবার চারজন খ্যাক খ্যাক শব্দ করে হেসে উঠি।
হাসিস না মিরু নাতাশা বলে, তোর মালও বেশি সুবিধার না। নাম কী জানি?
তার নাম মনে না থাকার কিছু নাই। তাও বললাম, আজিব তো ভুইলা গেসি!
হেহেহে হেহেহে কাম শেষে নামও মনে রাখে না এই না হইলে মিরুমনি। মতিন বলে।
রাফা জানায়, শোন ওই পোলা কিন্তু ভার্জিন না, তার চেহারা দেইখাই বুঝা যায় অনেক আউটগোয়িং ইনকামিং কল করসে।
হেহ সে গ্যে না, ইনকামিং আইবো ক্যাম্নে? আমি মিনমিন করি। আর তার ভার্জিনিটি দিয়া আমার কি! আমি তো তারে সেক্স অর্গান দিয়া জাজ করি না।
হইসে বড় বড় ডায়লগ দিস না। তুই ভার্জিন না তোর কোম্পানীও ভার্জিন না দুনিয়া এখন উল্টা লাগতাসে। মতিন বলে।
হঠাত কল আসে রাফার।
হ্যা নিশু, আমি তো একটু ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। না না গাঁজা খাচ্ছি না। চিন্তা করো না, আমি বাসায় পৌছেই কল দেবো।
আমরা না শোনার ভাণ করি।
ঝিমোতে ঝিমোতে শাফায়াতের লো কাট প্যান্টসের কথা মনে পড়ে। তাকে লোকাটে দুর্দান্ত দেখায়।
আমাদের ভালোবাসা
পাবলিক বাসে চাপাচাপি করে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করে আমি অভ্যস্ত, কিন্তু আজকের হিসাব আলাদা।
আজ আমার জ্বর, ভুল বললাম, গত তিন ধরেই জ্বর। তাও মেনে নিলাম, কিন্তু যে সিটটা খালি ছিলো ওটায় লাফ দিয়ে সে বসে পড়েছে। আমি রাগ করবো কী না তাও বুঝলাম না, কারণ আমার রাগে, অভিমানে তার কিছুই আসে যায় না। তাছাড়া রাগ করলে অনেক ঝামেলা। প্রাথমিকভাবে সে আমাকে দুঃখিত করে, আমি অভিমানিত হই, আমি অভিমানিত এটা বুঝতে পারলে সে রাগ ভাঙানোর উটকো হাস্যকর চেষ্টা করে (যেটা না করলেও ব্যাপার হত না) এবং সেটায় আমার রাগ না ভাঙলে তার মুখ কালো হয়ে যায়, যেটায় আমারই কষ্ট বাড়ে। পৃথিবীতে যত রকম খারাপ লাগা আছে এর মধ্যে তীব্রতম একটা খারাপ লাগা - তার মন খারাপ দেখা। মোটের ওপর সবদিকেই আমার ক্ষতি। গুনীজনের কথা ‘বুদ্ধি বড়র মাশুল’ যা আমি প্রতিনিয়ত দিয়ে চলেছি। তাই রাগ না করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কোনোকিছুই কারো জন্য আটকে থাকে না।
অবশেষে চতুর্থ কাউন্টারে তার পাশের যাত্রী নামায় আমি বসার সিট পেলাম।
হেহে বসেই ছাড়লা? বলে সে কনুই দিয়ে ধাক্কা মারার সময় একটু অবাক হয়। তোমার জ্বর? বলো নাই ক্যানো?
বললে কী হত? সিট পেতাম?
সে চরম বিরক্ত চেহারা করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলো।
শব্দহীন দীর্ঘ বিরতি।
মাঝে মাঝে আমি ভাবি, বলে বাসের হর্নের শব্দে সে থামল। তুমি ক্যানো আমার সাথে সময় নষ্ট করো!
তোমার এমন কারো পাশে থাকা উচিত যে তোমার হাত ধরবে, ভালো বাসি বলবে, বাসার সামনে দাঁড়াবে। আমার সাথে সব গল্প খরচ করে ফেললে তো পরে পস্তাবা।
শুনে হতাশ লাগে!
বিরক্ত হয়ে বলি, চারপাশে তো এটাই হয়, যার যেখানে থাকার কথা সে সেখানে থাকে না।যার মানিব্যাগে টাকা দরকার তারটা খালি, যার না থাকলেও চলত সে ভারী পকেট নিয়ে ঘুরে। তাছাড়া আমাকে নিয়ে তোমার এত চিন্তার কী আছে? আমাদের তো কোনো ভালো বাসাবাসি নাই।
হুম ভালো বাসা বাসি নাই এটা ঠিক, গম্ভীর স্বরে সে বলে। তারপরও কখনও যদি বেছে নিতে বলা হত পৃথিবীতে যে কোনো ১টা অস্তিত্ব থাকতে পারবে। তোমার অথবা আমার। আমি তোমাকে বেছে নিতাম।
উত্তরে কী বলবো ভেবে পাই না।
কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে সে হেসে বলল, অবশ্য বেঁচে থাকাটা আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় না, অন্তত সারা রাস্তা বসে বসে যাওয়ার তুলনায়!