somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাকে ছেড়ে বহু দুরে............।

১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় হলে ডানা মেলে যেভাবে মা-পাখিকে ছেড়ে ছানা-পাখি উড়ে যায়, সেভাবেই কোন একদিন স্বনির্ভর মানুষ হতে আপনার আদর উপেক্ষা করে, মমতায় মোড়ানো পরিবার ফেলে, ভালবাসার শহর ছেড়ে, বহু বছর আগে নিজের স্বপ্ন পুরনে দেশান্তরী হয়েছি। ২০০৪ সালে যে বাড়ি ছেড়েছি, সেখানে আর কোনদিন আগের মত করে ফিরতে পারি নি। এই ফেরা হয় না বলেই, হয়ত সকল পুরুষ তার ভালোবাসার নারীর ভেতর তার মমতাময়ী মায়ের ছায়া দেখতে চায়, আমিও চেয়েছি। আজ যতটুকুই এই আমি, তা আপনার শেখানো আদর্শের প্রতিফলন। সেই রৌদ্রমাখা ভরা দুপুরে অথবা মেঘে ঢাকা বর্ষার বিকেলে আপনার বুকে-পেটে উম মাখানো কুঠুরিতে ছোট্ট আমি যেভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকতাম; সেভাবে আপনার বুকে মাথাগুঁজে ঘুমানোর প্রবল আকাঙ্খা আমার এতটুকু কমেনি। সেই ছোট্ট আমি পুরুষ হয়েছি, কত শহরের মায়ায় থিতু হয়েছি কিন্তু আপনার মকমলের মত নরম কোলের নিরাপদ আশ্রয়ের শান্তি আর কোথাও পাই নি। এখনও আপনার শরীর ও শাড়ির গন্ধ নিতে ইচ্ছে হয়। ভাত খেয়ে হাতটা এখনও আপনার শাড়ির আঁচলেই মুছতে চাই। ছোট বেলার সন্ধ্যা গুলিতে হাত-পা ধুয়ে দিয়ে কাপড় পরিয়ে, আমি আর ছাঁপাকে আপনি রান্নার চুলার পাশে পাটিতে বসিয়ে পড়ালেখা শেখাতেন। যখন বালক হলাম, মার্বেল খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, পুকুরে গোষল, ক্রিকেট আথবা ফুটবল খেলে সন্ধ্যার দিকে আব্বার রাগের ভয়ে চুপচাপ পা টিপে টিপে বাসায় ঢুকতাম, আপনি সবসময় আগলে রেখেছেন। একটা মানুষ কি করে যুগের পর যুগ ক্লান্তিহীন ভাবে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তার সকল সন্তানকে জিজ্ঞেস করে তাদের পছন্দের খাবারগুলি নিরলস রান্না করে যায়, এটা আমাকে এখনও ভাবায়। জীবনে কোন দিন পড়ালেখার চাপ দেন নি। ফেল করতে করতে, একসময় যখন বুঝলাম আমার পড়া লেখা করা উচিৎ, সেই সময় আপনি রাতের পর রাত জেগে পাশে বসে ছিলেন। আপনার ফেল্টু মার্কা ছেলেটার পড়ায় মনোযোগ দেখে আপনারও হয়তো ভাল লাগত। আমি লজ্জা পেতাম এই ভেবে যে, চার/পাঁচটা বিষয়ে ফেল করা ছেলেটার পাশে বসে তার মা ঘন্টার পর ঘন্টা সোয়েটার বুনছে আর একটু পরপর বলছে চা খাবি, ঝালমুড়ি মেখে দিব। আপনার সেই সেবার কারনেই আমার ভাল ছাত্র হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা এবং ভাল কিছু করার তাড়না। বাড়ি ছেড়েছিলাম, সাথে ফেলে এসেছি আমার প্রিয় পড়ার টেবিল, ক্যসেট প্লেয়ার, ক্রিকেট ব্যাট, লাটাাই আর প্রিয় বন্ধুদের। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেমিস্টার ব্রেক এ খুলনা থেকে রংপুর যাওয়ার পথে, কি কি খাবো সব একে একে শুনতেন। প্রতিবার আপনাদের সবাইকে ছেড়ে ভার্সিটিতে ফিরে যেতে আমার খুব কষ্ট হত। সেই আমি নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতে রংপুর থেকে খুলনা, ঢাকা, আরো কত বিদেশী শহরের মায়া ছেড়ে আট হাজার কিলোমিটার দুরের এক শহরে বন্দি হয়েছি। পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন এবং বসবাসযোগ্য শহর গুলির একটিতে থেকেও যেন মাঝে মাঝে অনিরাপদ অনুভব করি, কারণ এ জীবনে সব কিছু থাকলেও আপনার আদর মমতা নেই। কতকিছু নিয়ে লেখা হয়, আপনাকে নিয়ে কিছুই লেখা হয় না। কি অদ্ভুত! আম্মা আপনি তো শুধুই ভালবাসেন, বিনিময়ে কিছুই করতে পারি নি, কোন দিন কারও সেবা নেন নি। জীবন বুঝে গেছি, আর ভুল হবে না। অসীম কৃতজ্ঞতা।

আম্মা, আব্বা এবং ছাঁপা। হ্য়ত ১৯৮৩-৮৪ ইং এর কোন এক দিনে।

স্বপ্নপুরী, দিনাজপুর-- আব্বা এবং আম্মা, ২০০০ ইং সালে হবে হয়ত।

আমি, হয়ত ২ বছর বয়স হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×