মহৎ যারা যারা আত্মকেন্দ্রিক নন, তারা অমরতার আয়োজনে সম্পদ বিসর্জন দেন।রাজা রামমোহন রায় বা হাজী মুহম্মদ মুহসিনদের মতো লোকেরা চতুর্থ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে কেবলি ছবি, তাদের দর্শন সমাজে অনুপস্থিত।
অধ্যাপক ইউনুসের বিরুদ্ধে ইউরোপের অর্থ গ্রামীণের বোন সংস্থায় ট্রান্সফারের যে অভিযোগ উঠেছে, তা উনার অর্থ বিষয়ক স্পর্শ কাতরতার ফলাফল। ওই অর্থ দিয়ে ইউনুস ভূমধ্যসাগরের তীরে প্রাসাদ তৈরী করেন নি, সেটি গ্রামীণের বোন সংস্থায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।তবুও এটি দাতাদের সঙ্গে চুক্তির বরখেলাপ। দ্রুত ব্যবসা প্রসারের নেশা কাল হয়েছে তার জীবনে।
ঢাকার উদ্যোক্তাদের ব্যবসা প্রসারের এক হানা নেশা আমার চোখে পড়েছে। স্লো এন্ড স্টেডি উইনস দ্য রেস এখন উপহাসের পাত্র বাণী চিরন্তনী।
সাদাকালো বাংলা ছবিতে চিত্র নায়ক ফারুককে দেখেছিলাম প্রথম শটে পায়ে হেঁটে, ২য় শটে সাইকেলে,তৃতীয় শটে বাইকে,চতুর্থ শটে গাড়ীতে পঞ্চম শটে নায়িকার কোলে। ব্যবসা বৃদ্ধির এই ঢালিউড মডেল অধ্যাপক ইউনুস এবং ঢাকার অন্যান্য রুই-কাতলা-মৃগেলকে আপ্লুত করেছে।ফলে উদ্যোক্তাদের একুরিয়ামটাতে মাতস্যন্যায়। ইউনুস বিষয়ক নরওয়ের ডকুমেন্টারী ফাঁদ তার ধারাবাহিকতা। ইউনুস সাধু নন, তার ঘরের বন্ধু বিভীষণরাও সন্ত নন।
ইউনুসের বাবা সওদাগর ছিলেন। ক্ষুদ্র ঋণের দর্শন টি সওদাগরের দর্শন। তাই এর ভালোখারাপ দুই দিকি আছে। সোশ্যাল কমিটমেন্ট কম সেটা নোবেল কমিটিও জানেন। তাই পুরস্কারটা অর্থনীতিতে না এসে শান্তির সম্ভাবনাতে এসেছে। বারাক ওবামার মতো। আওয়ার্ড ইন হোপ।
আমাদের দেশে পশ্চিমা বা সাদা চামড়া প্রীতি ভয়াবহ। ইউনুস নিজেও এই রোগের শিকার। কাজেই নরওয়ের এক অখ্যাত সাংবাদিকের ডকুমেন্টারী দেখে আমরা নড়ে চড়ে বসলাম। এবার ইউনুস বধে কোন বাধা রইলো না।
উইকীলিক্সের তথ্যফাঁসবিপ্লব,অতীতে তেহেলকা ডটকমের শনৈ শনৈ উন্নতিতে নরওয়ের অখ্যাত সাংবাদিক বেছে নিলেন ইউনুসকে। ঢাকাই কইয়া দিমুর বাপ-মায়েরাও এনজিও করেছেন, যারা নোবেল কমিটিতে এসব তথ্য আগেও ফ্যাক্স করেছেন তারা নরওয়ের ক্রাইম রিপোর্টার ঝন্টুকে চুরি করা পয়সায় কেনা প্রাডোতে জোবরার রহস্যভেদে পৌঁছে দিয়েছেন। খুব খুশী লাগছে। দেশ রত্ন শেখ হাসিনা ইউনুসকে সুদখোর বলেছেন। আমি ভেবেছিলাম মেয়েদের মুখে কিছু আটকায় না, উপরন্তু হাসিনা নোবেল পাবার মতো লোক ওয়াজেদ মিয়ার স্ত্রী। আর ইউনুসকে সুদখোর বলার সুইপিং কমেন্ট আজ ইন্দিরাগান্ধী বেঁচে থাকলেও করতেন। তবে ফাঁদ ডকুমেন্টারীতে ঢাকা তোলপাড় হবার পর শেখ হাসিনা ওই কমেন্টের কারণে অল্টারনেটিভ নোবেলের যোগ্য হয়ে গেলেন।
ইউনুসের এই গল্পটি ঈশপের গল্পের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলো। অর্থই অনর্থের মূল। ট্যাকা ট্যাকা করেই ঢাকা মহাপ্রস্থানের পথে বলাই বাহুল্য।নরওয়ের নরাধমের মিডিয়া সন্ত্রাসে ইউনুস নিহত। এই খবর পাবার পর বাঙ্গালী মুসলমানের জীবনে অঘোষিত ইউনুস ঈদ। ব্যর্থ এনজিও চোরেরা বান্ধবীদের ফোন করে বলছে, অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি। সুযোগের অভাবে ভদ্রলোকেরা গম্ভীর ভাবে বলছে ইউনুস ইজ আ গ্রীডি ম্যান।
আপনি যদি জীবনে কিছুই না করেন, আপনি নিরাপদ, বিছানায় ঠেস দিয়ে শুয়ে হায়রে জীবনে কিছুই করতে পারলাম না এই লম্বা কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে যারা কিছু করছে তাদের ক্যারেকটার এসাসিনেশন করে মোটামুটি ডায়াবেটিসে শুকিয়ে সমাজে সততার পোড়াকাষ্ঠ হয়ে উঠতে পারেন।
সরদার ফজলুল করিম বা সিরাজুল ইসলাম চোধুরী বা পলান সরকার যদি ইউনুসকে চোর বলেন আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু চোরস্য চোরেরা আজ উচ্চকিত। ঝাঝরকূল ইউনুস সূচকে বলছে ফুডা ফুডা। এই বাঙ্গালী ঝাঝর সমাজ দক্ষিণ এশীয় কুচুটে সমাজের সক্রিয় অংশ।তাই জার্মানী-নেদারল্যান্ডস-নরওয়েতে ইউনুসের বন্ধু যারা তারা এই খেলাটা বুঝতে পেরেছে। আর বাঙ্গালী চিলের পিছে দৌড়াচ্ছে, যেন ইউনুস কূলটা হলে দেশে শান্তি আসবে।
গোলকের সামাজিক ব্যবসায় ইউনুস এক অবিসংবাদিত নাম। পুঁজিবাদের প্রাসাদে বসে এই ক্যাসানুভা বিকল্প দিয়েছেন রিসেশনে বিশীর্ণ ওবামাকে। ঢাকায় ইউনুসের শতাধিক ফিউনেরালে অপদার্থ সমাজ আত্মতুষ্টি পেতে পারে। তাতে ইউনুসের কিছু এসে যায়না। গল্প কবিতা লিখে নোবেল পাওয়া আর গ্রামীণের মতো সংগঠন দাঁড় করিয়ে নোবেল পাওয়া এক কথা নয়। সংগঠন তৈরীতে প্রতিদিন একটু একটু করে শরীর পুড়ে যায়, ৯টা-৫টা বাবুরা ভাবতেও পারেন কি একটা পানের দোকান দাঁড় করাতে কতটা পুড়ে উদ্যোক্তা ছোটখাট ইউনুসেরা।
ভাবনা ছবির যৌন কর্মী শাবানা আজমীর জীবন বেচে সন্তান মানুষ করার লড়াই মূল্যবোধের প্রচলিত উঁচু নাকটি কেটে দিয়েছে। তাই ইউনুসের দুর্নীতির ফাঁদ দেখিয়ে জাত গেল জাত গেল বলে লাভ নেই। বাংলাদেশ ইউনুসকে খল নায়ক ভাবলে, নরওয়ে ইউনুসের সোশ্যাল বিজনেস এক্সপ্রেসটাকে ডিরেইলড করতে চাইলে ইউনুসের কিছু এসে যায়না। আমৃত্যু কাজটা চালাবেন তিনি, আজি হতে শতবর্ষ পরে যখন কইয়া দিমুদের শরীর বায়োগ্যাস উতপাদন করবে, বায়োগ্যাস উতপাদন প্ল্যান্টে ইউনুসের ছবিতে ফুল দেবে কইয়া দিমুর গ্রান্ড ডটার আকলিমা ইউফান। কাজেই আজ ইউনুসের মৃত্যুতে শোকের কিছু নাই, চোখ কপালে তোলার কিছু নাই। আমি বরং নিজের চরকায় তেল দিই উহা ঘরঘর করিতেছে।
ইত্যবসরে জানাইয়া রাখি গান্ধীদর্শন ওবামাকে আকৃষ্ট করিবার পর এক বৃটিশ ক্রাইম রিপোর্টার আরেক ঝন্টু গান্ধী যৌন জীবন নিয়ে চটি রিপোর্টিং করেছেন। ভারতের কোন মিডিয়া উহা ক্যারি করে নাই। এতো বোকা তাহারা নহে।
পুনশ্চঃ এই লেখায় ইউনুস তোষণের নির্লজ্জ প্রচেষ্টায় বিক্ষুব্ধ হয়ে দেবদূত কেউ কেউ আমাকে বন্ধু তালিকা থেকে খারিজ করতে চাইলে আমি আর কীই বা করতে পারি!
সৎ বন্ধুতার ফিউনেরালে মন খারাপ হবে। মিস করবো তাদের। ইউনুসের আত্মার শান্তি প্রত্যাশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৫৬