somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর দশ(পনেরো)টি বিলুপ্ত শহর বা সভ্যতা- একটি বিস্ময় ও একটি প্রশ্ন!!

০১ লা মে, ২০১১ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি প্রত্নতত্ত্ব বা ইতিহাসের ছাত্রী নই, বিলুপ্ত শহর বা জনপদ নিয়ে গভীর জ্ঞান যেমন নেই, তেমন নেই এ সম্পর্কে হাজার পৃষ্ঠার বই পড়ার মতো ধৈর্য্য বা আগ্রহ। তবে হারিয়ে যাওয়া পৃথিবী বা হারিয়ে যাওয়া শহর শুনলে শিহরনের সাথে মন খারাপ হয়ে যায়, যদিও এসব মৃত শহর আধুনিক সভ্যতায় সেসব দেশের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের সাথে সাথে পর্যটনের স্থান হিসেবেও বড় আকর্ষন।

প্রায় শত বছর ধরে বেশ দাপটের সাথে ফোরবস‌্ ম্যাগাজিন তার খ্যাতি ধরে রেখেছে, ফোরবস্ নামটির সাথে এক ধরনের আস্থা জড়িয়ে আছে, তাদের দেয়া যেকোন পরিসংখ্যান বা তালিকা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়, ফোরবস্ প্রদত্ত সেরা দশের গ্রহনযোগ্যতা সবসময়ই বেশি...

ফোরবস্ মাগাজিনে পৃথিবীর বুকে বিলুপ্ত দশ(পনেরো) শহরের তালিকা আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করি, কিছু পরিচিত নিদর্শনের পাশাপাশি অজানা দেশের না জানা শহরের নাম হয়তো জানবো... দেখবো স্থাপত্যকলার কিছু বিস্ময়কর নিদর্শন- যেখানে একসময় ছিলো জীবনের জয়গান, সদ্যজাত শিশুর কান্নার সাথে সাথে হেসে উঠতো চারপাশের জগৎ, যে শহরের সবুজ মাঠ কিশোর কিশোরীর চন্চল পদচারনায় মুখরিত ছিলো, যেখানে এক সময় মানুষ যেতো আনন্দভ্রমন বা অবকাশ যাপনে, যে শহরে এক সময় প্রাণের জোয়ার বয়ে চলতো... আজ তা নিস্তব্ধ, নিস্তেজ, নিঃশব্দ এক মৃতপুরী...

এসব এলোমেলো ভাবনার সাথে আগাম শিহরন নিয়ে তালিকায় চোখ বুলিয়ে যাই.... ঘুনাক্ষরেও যে চমক বা শিহরনের জন্য প্রস্তুত ছিলামনা তাই যখন সামনে এসে দাঁড়ায় থমে যাই.. আনন্দ, শিহরন আর উচ্ছাসের সাথে সাথে বিস্ময়... আবার কিছুটা দ্বিধা বা কনফিউশন...

তালিকাটা এমন...

১. পেট্রা- জর্ডান
দেশ- জর্ডান
সভ্যতা- দি নেবাটিয়ান বা আল আনবাত(আরবী ভাষায়)
সময়কাল- খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ট শতাব্দী


খাড়া পাহাড়ের পাথর খোদাই করে সুনিপুন ভাবে নির্মীত গোলাপবর্ণের এই শহর, আশির দশকের“ইন্ডিয়ানা জোন্স এন্ড লাস্ট ক্রুসেড” নামের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

২.চিচেন ইজা (চিচেন ইটজা), মেক্সিকো
দেশ- মেক্সিকো
সভ্যতা- মায়া সভ্যতা
সময়কাল- ৬০০-১০০০ খ্রীস্টাব্দ।


মেসোআমেরিকার(আমাদের কাছে যা দক্ষিন আমেরিকা নামে অধিক পরিচিত) সবচেয়ে বড় বলকোর্টটির অবস্থান এই মৃত নগরে। চিচেন ইজার ঠিক পাশেই এক অতিকায় সিনোট বা সিন্কহোল যেখানে তৎকালীন বিশ্বাস অনুসারে ঈশ্বরের সন্তোষ্টির জন্য জীবিত মানুষের(মূলত কুমারী এবং যুদ্ধে আটককৃত শত্রুপক্ষ) দেহ বিসর্জন দেয়া হতো এমন।

৩.ভূ-গর্ভস্থ ডেরিংকুয়ো শহর, তুরস্ক
দেশ-তুরস্ক
সভ্যতা- সম্ভবতঃ ফ্রিজিয়ান
সময়কাল- আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী থেকে খ্রীস্টাব্দ দশম শতাব্দী।


দশের অধিক লেভেল বা তল বিশিষ্ট ভূ-গর্ভস্থ এই স্থাপনাটিতে ৫০,০০০ মানুষের আবাস এবং গবাদীপশু ধারনের স্থান রয়েছে। ধারনা করা হয়, রোমানদের সাম্প্রদায়িকতা ও নির্যাতন থেকে আত্মরক্ষার জন্য তৎকালীন অধুনা খ্রীস্টধর্মের অনুসারীরা এখানে আত্মগোপন করতেন।

৪.মাচুপিচু, পেরু
দেশ- পেরু
সভ্যতা- ইনকা
সময়কাল- পন্চদশ শতাব্দী ও ষষ্টদশ শতাব্দী (খ্রীস্টাব্দ)।


স্প্যানীশ ও পর্তুগীজ আগ্রাসন বাহীনির বয়ে আনা স্মল পক্স বা গুটি বসন্তের মহামারী পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত রাজকীয় দূর্গের নগরের জনপদ সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যদিও পরবর্তীতে অসাধারন সুন্দর এই বিলুপ্ত শহরটি কোন স্প্যানিশ আবিস্কার করতে পারেনি, ১৯১১ সাল পর্যন্ত শহরটির অস্তিত্ব সকলের কাছে অজানা ছিলো।


৫. এ্যাংকর, কম্বোডিয়া
দেশ- কম্বোডিয়া
সভ্যতা- খেমের রাজত্ব
সময়কাল- নবম শতাব্দী থেকে পন্চদশ শতাব্দী(খ্রীস্টাব্দ)


এ্যাংকর ওয়াট সহ সহস্রাধিক মন্দিরের এই শহরটি দীর্ঘদিন খেমের রাজ্ব্যের রাজধানী ছিলো। বর্তমান থাইল্যান্ডের আগ্রাসীবাহিনীর আক্রমণের পর শহরটির ধীরে বিলুপ্তি ঘটে।

৬. প্রাক- রোমান কার্থেজ, তিউনিশিয়া
দেশ- তিউনিশিয়া
সভ্যতা- ফিনিশিয়ান
সময়কাল- ৬৫০-১৪৫ খ্রীস্টপূর্ব


রোমান সাম্রাজ্যের ঘোর শত্রু হ্যানিবালের নগর ছিলো কার্থেজ। তৃতীয় তথা সর্বশেষ পিউনিক যুদ্ধে নগরটি সম্পূর্ণ রূপে ভস্মীভূত হয় এবং শহরের মাটি জুড়ে লবন ছিটিয়ে এর ধ্বংস নিশ্চিত ও স্থায়ী করা হয়।

৭.পম্পেই- ইটালী
দেশ- ইটালী
সভ্যতা- রোমান সাম্রাজ্য
সময়কাল- সপ্তম/ষষ্ট শতাব্দী(খ্রীস্টপূর্ব) থেকে উনআশি খ্রীস্টাব্দ।


উনআশি শতাব্দীর ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্নুৎপাতে ধ্বংস হয়ে যাবার পূর্ব পর্যন্ত পম্পেই নগরী শিল্প সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র এবং রোমান উচ্চবিত্তের অবকাশ যাপনের গন্তব্য ছিলো। আগ্নেয়গিরি ধ্বংসলীলার পর সেখানে শুধু প্রাকৃতিক ভস্মে মোড়া শহরের মামীটা পড়ে আছে।

৮.মেম্ফিস, মিশর
দেশ- মিশর
সভ্যতা- প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা
সময়কাল- খ্রীস্টপূর্ব তৃতীয় মিলেনিয়াম থেকে ২৫০ খ্রীস্টাব্দ।


নীলনদের মোহনায় অবস্থিত মেম্ফিস শত শত বছর ধরে ব্যবসা, বাণিজ্য, ধর্ম এবং রাজকীয়তার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিলো। আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেট সহ বিভিন্ন পরাশক্তির আগ্রাসন নগরটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

৯. টিওটিহুয়াকান (টোটিহুয়াকান), মেক্সিকো
দেশ- মেক্সিকো
সভ্যতা- সম্ভবত টোটোন্যাক জনগোষ্ঠী
সময়কাল- ১০০তম খ্রীস্টপূর্ব অব্দ থেকে ২৫০ খ্রীস্টাব্দ।


এই শহরের স্থপতিরা আজও অজানা রহস্য। প্রাক-কলাম্বিয়ান আমেরিকার বেশ কিছু বৃ্হত্তম পিরামিড এখানে অবস্থিত। টিওটিহুয়াকান য্যাপোটেক ও মায়া সহ বিভিন্ন সাম্রাজ্যের প্রেরণা হয়েছিলো।

১০. বাগের হাটের মসজিদের শহর, বাংলাদেশ
দেশ- বাংলাদেশ
সভ্যতা- খানজাহান আলীর শাসনামল
সময়কাল- পন্চদশ শতাব্দী(খৃস্টাব্দ)


পূর্বে খলীফাবাদ নামে পরিচিত এই শহরটি একজন তুর্কী জেনারেল স্থাপনা করেন।পন্চাশের অধিক ইসলামিক নিদর্শন এবং ষা্ট গম্বুজ মসজিদ (যা ষাটটি স্তম্ভ এবং আশিটি গম্বুজ সমন্বয়ে নির্মিত) সমৃদ্ধ এই শহর।


(বাগেরহাট শহরটি খানজাহান আলীর সময় থেকে আজ অবধি কখনও মৃত ছিলো বলে জানা নেই.. বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদটিও খুব সম্ভবত একদিনের জন্যও অব্যবহৃত ছিলোনা। নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে বুঝতে পারছিনা, মৃত শহরের তালিকায় “বাগের হাটের” নাম থাকাটা কতোখানি যৌক্তিক, তবে ফোরবস্ এর তালিকাটি যদি ঐতিহাসিক নিদর্শনের দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করা হয়, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন এসকল শহরের মাঝে নিজ দেশের এই অপরূপ স্থাপত্যকলার নামটি খুঁজে পাওয়া আনন্দের নিঃসন্দেহে)।


১১. বুনো পশ্চিমের ভুতুড়ে নগর সমূহ, যুক্তরাষ্ট্র
দেশ: যুক্তরাষ্ট্র



১২. ট্রয় নগর, তুরস্ক
দেশ- তুরস্ক



১৩. প্রাচীন কগুরিও রাজ্যের রাজধানী ও সমাধিস্তম্ভ সমূহ, চীন
দেশ- চীন



১৪. থেবেস, মিশর
দেশ- মিশর



১৫. ব্যাবিলন, ইরাক
দেশ- ইরাক






তথ্য ও ছবি সুত্র- ফোরবস্ ম্যাগাজিন।।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১১ সকাল ১০:২৩
৭৬টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×