somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাই হেরি তায় সকলখানে...

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিগুরু এক্সপ্রেস থেকে নেমে বোলপুর রেলওয়ে স্টেশনে পা রাখতেই কেমন একটা শিহরন হয় সারা শরীর জুড়ে। শান্তিনিকেতন! স্টেশন থেকে রিকশা নিয়ে হোটেলের পথে যেতে যেতে ক্রমশঃ আরো গাঢ় হতে থাকে প্রাণের মানুষের স্পন্দন। মোহগ্রস্তের মতো দেখি শান্তিনিকেতনের চারিপাশে ছড়িয়ে থাকা সেই মানুষটির উষ্ণতা। এই ছড়িয়ে যাওয়া মহাজীবনের অদ্ভুত সবুজ অনুভূতি ডালপালা বিস্তার করতে থাকে শিরা উপশিরায়। একটা জন্মেও শেষ হবার নয় তাঁর সমুদ্রে অবগাহন। যতবারই তাঁর রচনার ঢেউ আছড়ে পড়ে, অবাক হয়ে দেখি কতশত নতুন আলো ফসফরাসের মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে প্রতিবারেই। যে ভূমিতে তাঁর পদচারণা এবং কর্মকান্ডের একটা বিরাট অংশ জড়িয়ে আছে, সেখানে ক'দিনের বিচরণ এক অনন্য অনুভব।
দুহাত বাড়িয়ে আহরণ করতে চেয়েছি তার সবটুকু... লালমাটির রাস্তা, ধূলো, ঘাস, হাটের মানুষ, ঝরা শালপাতা, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস, নদীস্রোত, বাউল, শিল্পের পসরা, আলো, হাওয়া এমনকি কুয়াশাঘেরা অন্ধকার- সব্বাই মিলে ঘিরে ধরে অনুচ্চারিত সুরে গাইতে থাকে সবসময়,
"আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
তাই হেরি তায় সকলখানে..."

এই বাড়িটি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্মিত, নাম শান্তিনিকেতন। এটি এখানকার প্রাচীনতম বাড়ি। এর নামেই পরে জায়গাটি নামাংকিত হয়ে যায়।


নানা রঙের কাঁচ দিয়ে সাজানো উপাসনাস্থল। ভারী সুন্দর লাগে দেখতে।


একতারাটি একটি তারে, গানের বেদন বইতে নারে...


বিশ্বভারতী প্রাঙ্গনের আম্রকুঞ্জ, সমাবর্তন অনুষ্ঠান এখানেই হয়।


পথের ধারে সাজানো মাটির পুতুল।


তালগাছ ঘিরে তৈরী কুটির। বর্তমানে মহিলাদের কারুচর্চা কেন্দ্রে কারুসঙ্ঘ।


কাঠের গুঁড়ির উপর অনামী শিল্পীর এলোমেলো বাটালীর স্পর্শ। একটি ছন্নছাড়া দোকানের ভিতরে খুঁজে পেলাম এটা।


ছাতিম তলা, যেখানে প্রথম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্রাম নিতে এসে আশ্রম প্রতিষ্ঠার কথা ভেবেছিলেন।


কলাভবন চত্বরে যেতেই চোখে পড়ে রামকিঙ্কর বেইজের শিল্পকর্ম। আর চারিদিকে ছড়ানো শিল্প নিদর্শন।


মাঠের মধ্যে টুকটাক ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে বানানো সাইকেল আরোহী, অমর্ত্য সেনকে উপলক্ষ্য করে নাকি বানানো।


কালোবাড়ি, কলাভবনের ছাত্রাবাস। নন্দলাল বসুর তত্ত্বাবধানে এই দেওয়ালের শিল্পগুলি রচনা করা হয়।


ছাত্রদের করা ম্যুরাল।


কলাভবন, সারা বাড়ি জুড়ে কারুকার্য।


ছাত্রদের করা অদ্ভুত সব শিল্পনিদর্শন।


সুবর্ণরেখা, অতি পুরোনো বাড়িটার ভেতরে বইয়ের বিশাল ভান্ডার, সাথে রবীন্দ্রসঙ্গীত আর আবৃত্তির সিডির সম্ভার।


তিনপাহাড়, টিলার উপর সুপ্রাচীন বটগাছ।


কিছুটা দূরে সৃজনী শিল্পগ্রাম, নানান প্রদেশের চিরায়ত লোকশিল্পের এক সুন্দর প্রদর্শনী অনেকটা জায়গা জুড়ে।


সৃজনীর ভিতরে।


খোয়াই নদী।


প্রান্তিক রেইলওয়ে স্টেশানের সামনে


পথের ধারে কাশফুলের সমারোহ।


কোপাই নদী। কথিত যে এই নদীকে নিয়ে লেখা, আমাদের ছোটনদী।


কোপাইয়ের ধারে একলা বাউল।


কিছু দূরে কংকালীতলার মন্দির, এটি একটি পীঠ। তার সামনে বাউলেরা গানের ডালি সাজিয়ে।


কাঠের কাজ। বসুন্ধরা নামের একটি প্রখ্যাত হস্তশিল্পের দোকানে।


ডোকরার কাজ, বসুন্ধরাতে।


'আমার কুটির' আর একটি নামকরা হস্তশিল্পের দোকান, তার চত্ত্বরে বসানো মূর্তি, রামকিঙ্কর বেইজের সৃষ্টি।


খোয়াইয়ের পাশে সোনাঝুরির হাটে বাউলগানের আসর। এই হাট বসে শনিবারের বিকেলে।


সোনাঝুরির হাটে বাউলগান।


হাটের পসরা।


শহুরে ক্রেতা আর গ্রাম্য বিক্রেতা।


রাজবংশী চিত্রকর।


ধানের শিল্পকর্ম নিয়ে সাঁওতাল রমণী।


বাদ্যযন্ত্রের পসরা নিয়ে বংশীবাদক। অনেকক্ষণ মুগ্ধ হয়ে শুনেছি সেই নিংড়ে নেওয়া সুর।


আদিবাসীদের তৈরী গহনার সম্ভার।

শান্তিনিকেতনের কুটিরশিল্প বেশ নামকরা। বিশেষতঃ কাপড় আর চামড়ার কাজ। পথের পাশে সারি সারি দোকানে সাজানো থাকে বিভিন্ন রকম হাতের কাজ।

দোকানে সাজানো বাটিক আর কাঁথাস্টিচের কাজ।


চামড়ার জিনিসের দোকান।


ক্রমশঃ ফেরার সময় হয়ে আসে... এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে পথের ধারে নীচু হই, পোড়ামাটির চিত্রকল্পজুড়ে শুনতে পাই...
"গানের সুরের আসনখানি পাতি পথের ধারে
ওগো পথিক তুমি এসে বসবে বারে বারে
ঐ যে তোমার ভোরের পাখি
নিত্য করে ডাকাডাকি
অরুণ আলোর খেয়ায় যখন এসো ঘাটের ধারে
মোর প্রভাতীর গানখানিতে দাঁড়াও আমার দ্বারে..."



শেষের কথাঃ অনেকগুলো অপটু আলোকচিত্র দিয়ে অযথাই ভারাক্রান্ত করে তুললাম পোস্টটা। আসলে স্বল্প সময়ে কোনটা ছেড়ে কোনটা দেবো এটা বাছা আমার কাছে কঠিন হয়ে উঠেছিল আর একাধিক পোস্টে ভাগ করেও দিতে চাইনি। আশা করি প্রিয় বন্ধুরা নিজগুণে এই ধৃষ্টতা ক্ষমা করে দেবেন।

ইচ্ছা করলে এখানে ক্লিক করে আমার Flickr এলবামটি দেখা যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:২৮
৩৩টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×