হাইলাইটস
- জাতীয় পর্যায়ে শীঘ্রই একটা কনভেনশন আয়োজন করা
- আন্দোলনে যে কেউ তার দক্ষতা নিয়ে সম্পৃক্ত হতে পারে
- ঘুষের বিনিময়ে বিদেশী কোম্পানীর কাছে জাতীয় সম্পদ তুলে দেয়া ক্রিমিনালদের আন্দোলনে জায়গা নেই
- প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরীর উদ্যোগ নেয়া
- বিকল্প মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়াতে আন্দোলনের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা
বহুজাতিক কোম্পানী অনুন্নত দেশের সম্পদ লুটে খায় এটা আমরা বেশ ভালো করেই জানি। দু'শ বছরের বৃটিশ শাসন সেটা আমাদের হাড়ে হাড়ে টের পাইয়েছে। বিজ্ঞানে, শিল্পে উন্নত ইউরোপ - আর দরিদ্র ভারতীয় উপমহাদেশ। বিধাতা আর প্রজার সম্পর্ক। তারপরে উপমহাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং আমরা ধরে নিয়েছি বিদেশীরা আমাদের সম্পদ লুটে নিতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে চিত্রটা সেরকম হয়নি। বাণিজ্যিক আগ্রাসনের নামে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানী আমাদের সম্পদ লুটে খাওয়া শুরু করেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার ৪০ বছর পরেও এই চিত্র এখনও ভয়াল। আমাদের তেল, গ্যাস, কয়লা লুটে খাচ্ছে বিদেশী কোম্পানী। আমাদের কিছু বাস্টার্ড রাজনৈতিক, আমলাদের যোগসাজশে অসম চুক্তির মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, হচ্ছে তেল, গ্যাস, কয়লা, বন্দর সহ জনগণের, রাষ্ট্রের সম্পদ।
এই আগ্রসান প্রতিরোধে দৃক গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মতবিনিময় সভা। 'জাতীয় সম্পদ রক্ষা সংস্কৃতি মঞ্চ' এর আয়োজনে শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক কর্মীর উপস্থিতিতে সকাল ১০.৪৫ মিঃ শুরু হয়। লালন সংগীত শিল্পী অরূপ রাহী সভার সূচনা করেন ২০০৬ থেকে এ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে কয়লা খনির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ আন্দোলন, লং মার্চ নিয়ে তৈরী একটা ফটো ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের মাধ্যমে।
তিনজন ফটোগ্রাফারের তোলা সেসব চিত্র তুলে ধরে মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। ঢাকায় বসবাসরত বেশীরভাগ মানুষ যার সাথে অপরিচিত। কয়লা খনির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের গণজাগরণ, বিশাল সমাবেশের সেসব চিত্র একদমই অপরিচিত। টেলিভিশন, পত্রিকায় এসব চিত্র একদমই দেখা যায় না। বহুজাতিক কোম্পানীর বিজ্ঞাপন ভোগী মিডিয়া এসব চিত্র প্রচারে অনুৎসাহিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। ফটো ডকুমেন্টারী শেষে লিখিত সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন ফারুক ওয়াসিফ।
সূচনা বক্তব্যের পরে উন্মুক্ত আলোচনা শুরু হয়।
(টু বি আপডেটেড)
১১.২০ মি
একজন কবি, কলাম লেখক যিনি পেশায় এনজিও কর্মী আলোচনা শুরু করেন। তিনি নিজের পরিচয় এনজিও কর্মী হিসাবে দিয়ে বলেন, যদিও এনজিও এখন একধরনের গালি কিন্তু তারপরেও আমি পরিচয়টা দিলাম। সেক্ষেত্রে হয়তো এটা বেশী গালি হিসাবে পরিচিত করা যাবে। তিনি বলেন সংস্কৃতি কর্মীদের তেল গ্যাস সহ জাতীয় সম্পদ রক্ষায় কথা বলতে হবে। দেখা যায় সংস্কৃতি সেবীরা এ বিষয়ে সোচ্চার নয়। আমাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী তৈরী করতে হবে।
১১.২৮
কবি সামসুদ্দোহা শোয়েব বলেন, রাষ্ট্রের শাসকদের মধ্যে একধরনের ফ্যাসিজম লক্ষা করা যায়। যা এখন মদদ দিচ্ছে মিডিয়া। ক্রসফায়ার থেকে শরু করে নানা প্রকার ক্লিনজিং চলছে যা রাষ্ট্রকে ফ্যাসিস্ট করে তুলছে।
১১.৩০
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তিনি তার ক্লাসের উদাহারণ তুলে ধরেন। জনৈক ছাত্র প্রশ্ন করেছিলো আফ্রিকা যদি কলোনীর অন্তর্ভূক্ত না হতো তবে অবস্থা নিশ্চয়ই আরো শোচনীয় থাকতো। এখন দেখা যাচ্ছে তাদের জিডিপি বা উন্নয়নের ইন্ডিকেটর ইতিবাচক। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, কোনো দেশই যদি কলোনীর অন্তর্ভূক্ত না হতো বা কলোনীয়াল শাসন ব্যবস্থা যদি না থাকতো তবে হয়তো উন্নয়ন পরিমাপক চিত্রও ভিন্নভাবে ব্যাখ্যায়িত হতো। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব সম্পদ কিভাবে আমরা ব্যবহার করবো সেটা আমরাই ভালো নির্ধারণ করতে পারবো, যা আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে।
১১.৩৯
গায়িকা কৃষ্ণকলি ব্যক্তিগত জীবনের উদাহারণ দিয়ে বলেন আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, গুগলে বাংলা কিওয়ার্ড লিখলে সে শব্দের পর্নোসাইট আগে চলে আসে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠ্যবিষয়ের মধ্যে মননশীলতা উন্নয়নের বিষয়গুলো অনেক কম।
১১.৪৫
আলতাফ পারভেজ বলেন, এই মত বিনিময় সভা একটা সময়োচিত সিদ্ধান্ত। তবে বোঝা যাচ্ছে এর জন্য আরো সময় দরকার। আমাদের বড় আকারে হয়তো একটা কনভেনশন করা প্রয়োজন হতে পারে, সেজন্য ভাবতে অনুরোধ জানাই। তিনি আরো বলেন, তেল গ্যাসকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে যদি সেটা রপ্তানী না করা হয়, সেটাও স্পষ্ট করে বলা দরকার।
১১.৫১
রাইয়ান হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বলেন, আমাদের শেখানোই হচ্ছে আমরা ক্রেতা। এই চিত্রটা পরিবর্তন করতে হবে।
১১.৫২
হাসান আল জায়েদ বলেন, ঐক্যের বিষয়ে আমাদের সমস্যা আছে, আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে আমরা ঐক্যকে ধরে রাখতে পারি। কারণ আমি বুঝত পারছি এই আন্দোলন একটা বড় দিকে যাবে, কিন্তু একই সাথে অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে আমাদের বিভেদও হয়ে থাকে এমন আন্দোলন নিয়ে। সেজন্য দ্বিধা রয়েছে..এ বিষয়ে ভাবা উচিত। সচেতন হতে হবে।
১১.৫৫
একজন সংস্কৃতি কর্মী বলেন তেল গ্যাস নিয়ে জাতীয় কমিটির বাইরে একটা ফোরাম হিসাবে এই ফোরাম কাজ করতে পারে। অনেক সময় মূলস্রোতের বাইরে গিয়ে দেখার দরকার আছে, সেটা হয়তো এই সংগঠনের মাধ্যমে হতে পারে।
১১.৫৯
পারভেজ শহীদ বলেন, এই সভা প্রমাণ করে আমরা ক্রমশ সচেতন হচ্ছি। কারণ সমাজের সবচেয়ে সেনসিটিভ অংশকেই এখানে আহবান করা হয়েছে। আমাদের সম্পদকে চেনাতে হবে আমাদের মানুষকে, সন্তানকে। আমরা জানিই না কি আমাদের সম্পদ। এটা আরো স্পষ্ট করে জানতে চাই।
১২.০৩
ফারুক ওয়াসিফ নাম না প্রকাশ করে একজন প্রাক্তন জ্বালানী উপদেষ্টাদের কথা বলেন, যিনি এশিয়া এনার্জিকে এদেশে উপস্থাপন করেছিলেন সবচেয়ে ভালো কোম্পানী হিসাবে তাকে
১২.০৭
সালিম সামাদ বলেন, আমি আসলে শুনতে এসেছি। কারণ এ পর্যন্ত আমি এ আন্দোলন সম্বন্ধে শুনে এসেছি। আমি আপনাদের সাথে আছি।
১২.০৮
নাসরিন খন্দকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, এই সভার দুটো উদ্দেশ্য বুঝতে পারছি। এক, ঐক্য তৈরী করা, দুই, কিভাবে সবাই কাজ করতে পারে যার যার স্থানে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করি।
১২.১৫
একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, আমার যেটা মনে হয়েছে এই আন্দোলন সম্পর্কিত নথির অভাব আছে। আন্দোলনের জন্য উপযোগী ভাষার প্রয়োজনীয়তাও অনুভূত হয়েছে। একই সাথে আমার মনে হয় এই ফোরামের জন্য একটা মেম্বারশীপের ব্যবস্থা রাখা যায় যার সাথে একটা টোকেন চাঁদা দেওয়ার প্রচলন থাকবে।
১২.২৮
মিথিলা মাহফুজ, আইইউবির ইংরেজীর শিক্ষিকা বলেন, আমার দেখা মতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মধ্যে এসব আন্দোলনের চিত্র খুব হতাশাব্যঞ্জক। আমার মনে হয় এখানে উপস্থিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ বিষয়ে সচেষ্ট হওয়া উচিত।
১২.৩২
স্বপন আদনান, অর্থনীতিবিদ বলেন, আমি শুনতে এসেছিলাম। তারপরেও আলোচনা শুনতে শুনতে কয়েকটা জিনিস মাথায় এসেছে সেগুলো শেয়ার করি। যে ইস্যু নিয়ে কথা বলবো, তা হলো, নির্ভরশীলতার সংস্কৃতি আর হচ্ছে প্রতিবাদের সংস্কৃতি। এবং এর বিকল্প রূপ। আইরিক ইয়ানসিন নামে একজন নরওয়েজিয়ান বাংলাদেশের নির্ভরশীলতার রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন,
১২.৪৭
নাট্যকার কামাল উদ্দীন কবির, নালন্দার শিক্ষক বলেন, মূলত শুনতে এসেছিলাম। আমি শিশুদের জন্য কাজ করছি। আমাদের শিশুরা দেশ পরিচয় ছাড়া বড় হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকে দেশ পরিচয় খুব হালকাভাবে উপস্থাপন করা হয়। আমি ছায়ানটে দেখলাম যে এখানে ৯০ শিশুরা ইংলিশ মিডিয়াম থেকে আসা যাদের বাসায় পর্যন্ত বাংলা চর্চা অনুৎসাহিত করা হয়। এটা আমি আগে জানতাম না। আমাদের বাদ্যযন্ত্রের বেশীরভাগের নাম পর্যন্ত বাংলা নেই। লাম্বা গীত যা ময়মনসিংহে পরিচিত সেটাকে যেমন ইউরোপিয়ান ব্যালাডের ধরণ মিলে যায় বলে নাম দেয়া হয়েছে গীতিকা। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এরপরে পিয়াস করিম এবং প্রফেসর আনু মোহাম্মদ বক্তব্য রাখেন। জাতীয় সম্পদ রক্ষার জাতীয় কমিটিতে কাজ করার জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভূক্তির প্রয়োজন নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। একমাত্র ক্রিমিনাল ছাড়া। ক্রিমিনালের ব্যাখ্যা তিনি এভাবে তুলে ধরেন যে এমনও দেখা যায় অতি সামান্য আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়। এইসমস্ত ক্রিমিনালদের জাতীয় কমিটিতে কোনো জায়গা নেই।
পরিশেষে মতবিনিময় সভার আয়োজকরা আলোচিত বিষয় ও উত্থাপিত নানামুখী প্রস্তাব পর্যালোচনা করে একটা সার-সংক্ষেপ তৈরী করেন। গণমুখী ক্যাম্পেইনের জন্য বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন অনুভূত হওয়ায় জাতীয় পর্যায়ে শীঘ্রই একটা কনভেনশন আয়োজন করা হবে। সংস্কৃতি মঞ্চের কাজের প্রকৃতি কেমন হবে তা নিয়ে সবার মতামত আরো বৃহৎ কলেবরে সম্পৃক্ত হবে।
২.৩০ মিনিটে মত বিনিময় সভা সমাপ্ত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:০৬