আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে যে বিজ্ঞান কি? আপনি কি বলবেন?
আপনি সম্ভবত বলবেন:
বিজ্ঞান হচ্ছে মনুষ্য প্রজাতির জ্ঞান অর্জনের একটি চলমান প্রকৃয়া যা যৌক্তিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলে।
"বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা" বলতে কি বুঝায়?
মনুষ্য প্রজাতি জ্ঞান অর্জনের জন্য কিছু ইন্দ্রিয় এবং মগজের উপর নির্ভর করে। মানুষের ইন্দ্রিয় এবং মগজের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হলে জ্ঞান অর্জনের প্রকৃয়াও সীমাবদ্ধ হবে। অতএব বিজ্ঞান অবশ্যই সীমাবদ্ধ হবে।
সুতরাং প্রথমে আমরা দেখি মানুষের ইন্দ্রিয় এবং মগজের ক্ষমতা কিভাবে সীমাবদ্ধ: জ্ঞান অর্জন করা হয় তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লষনের মাধ্যমে। মনুষ্য প্রজাতি তথ্য সংগ্রহ করে কতিপয় ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে। চোখ, কান, নাক, জিহবা, চামড়া। প্রতিটা ইন্দ্রিয় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের জিনিস নির্নয় করতে পারে। চোখ দিয়ে আলো, কান দিয়ে শব্দ, নাক দিয়ে গন্ধ ইত্যাদি। চোখ দিয়ে মানুষ সব ধরনের আলো দেখতে পায় না, নির্দিষ্ট কিছু তরংগ দৈর্ঘের ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন অনুভব করতে পারে। এর বাইরের তরংগ দৈর্ঘের আলো সাধারনত যন্ত্রপাতির সাহায্য নিয়ে দেখা হয়, উদাহরন: অতি-বেগুনি, অবলাল ও এক্স-রে রশ্মি।
ধরেন মনুষ্য প্রজাতির যদি চোখ না থাকত। তাহলে কি হত? মানুষের সভ্যতা গড়ে উঠত সম্পুর্ণ ভিন্ন ভাবে। সমাজ, অর্থনীতি, বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সব কিছু হত অনেক অন্যরকম।
আবার ধরেন যদি শব্দ শোনার জন্য কান না থাকত, সেই ক্ষেত্রে এই সবকিছু হত আরেক রকম।
মানুষের সভ্যতা ও বিজ্ঞান গড়ে উঠেছে কয়েকটি "অনুভব করা যায়" এমন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। এই মহাবিশ্বে "অনুভব করা যায় না" এমন অনেক জিনিশ থাকতে পারে। এমন অনেক কিছু থাকতে পারে যা নির্নয় করার মত অংগ মানুষের শরীরে নাই।
ধরেন এমন একটা ইন্দ্রিয় "ক" যা দিয়ে মানুষ "খ" নামের এক ধরনের কিছু অনুভব করতে পারে। এখন, এই ধরনের কিছু যদি থাকত, তাইলে মানুষের যেই সভ্যতা আজকে আমরা দেখতেছি সেইটার চেহারাই অন্য রকম হত।
এখন যদি সত্যি সত্যি "খ", "গ", "ঘ" ........এই রকম অসংখ্যা কিছু মহাবিশ্বে থাকে এবং তা নির্নয় করার মত ইন্দ্রিয় মানুষের না থাকে, তাইলে বলতে হবে, হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা মনুষ্য অর্জিত বিদ্যা (তথা বিজ্ঞান) সবসময় অসম্পুর্ন ছিল এবং থাকবে।
মানুষের পক্ষে কখনই এই কথা দাবি করা সম্ভব না যে মানুষ যা যা অনুভব এবং কল্পনা করতে পারে এর বাইরে কিছু নাই।
(এখানে অনুভব করা বলতে শুধু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় বরং যন্ত্রপাতির সাহায্য নিয়েও যা যা ইন্দ্রিয়গাহ্য এবং কল্পনার ক্ষেত্রে গনিত এবং যুক্তি ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে যা যা কল্পনা করা হয় তাও বুঝানো হয়েছে)
কল্পনা করার কথা আসলেই মানুষের মগজের কথা এসে যায়। মানুষের মগজের একটা সীমাবদ্ধতা হল, মানুষ অভিজ্ঞতার বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারে না। আবার মানুষের চিন্তা "বহুসংখ্যক বিষয়" (যেমন: পরিবেশ, পরিস্থিতি, পারসেপশন, নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি) দ্বারা প্রভাবিত এবং ত্রুটিপরায়ন।
আশাকরি ইন্দ্রিয় এবং মগজের সীমাবদ্ধতা বলতে কি বলতে চাচ্ছি বুঝতে পারছেন। এই সীমাবদ্ধতার কারনে মানুষ যত বিদ্যা অর্জন করে তা অসম্পুর্ন থাকাই স্বাভাবিক। এই আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে বিজ্ঞানের একটা সীমারেখা অবশ্যই থাকবে যা মানুষ কখনই অতিক্রম করতে পারবে না।
এই সীমারেখাটাকে আমরা বলতে পারি "মনুষ্য জ্ঞানের সীমানা", যার বাইরের জ্ঞান মানুষ কখনই অর্জন করতে পারবে না। এমনকি এই সীমানার ভিতরে অনেক বিষয় এমন থাকতে পারে যা পুরোপুরি জানা সম্ভব হবে না।
নাস্তিক্যবাদিরা এই সীমাদ্ধতা উপেক্ষা করেই নাস্তিক হয়। সসীম বিজ্ঞানের অসীম গৌরবগাঁথার সত্য-মিথ্যা মিশেল দেওয়া নেশা-ধরানো গীত গাইতে গাইতে এরা একধরনের যুক্তিনাশক ধুম্রজাল তৈরী করে। বিজ্ঞান নামক কুয়ার মধ্যে নর্তন কুর্দন করতে করতে এরা ভুলে যায় যে এই কুয়ার বাইরে বিশাল একটা জগত আছে যা তাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা সম্ভব না।
আপনাকে যদি কখনো কেউ প্রশ্ন করে যে নাস্তিক্যবাদ (Atheism) কি? আপনি তখন কি বলবেন?
আপনি বলবেন:
নাস্তিক্যবাদ হচ্ছে "বিজ্ঞানের সাথে কৌশলি মিথ্যা মিশিয়ে" জনসাধারনকে বোকা বানান পূর্বক সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে অবিশ্বাসী করে তোলার অপচেষ্টা জনিত একটি সুচতুর মতবাদ মাত্র।
ভাল থাকেন। নাস্তিক্যবাদি কুপের বাইরের জগত সম্পর্কে অসচেতন হইয়েন না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১