মোদির সাথে ডঃ ইউনূসের সাক্ষাৎ এবং.....
'সাইড লাইনে সাক্ষাৎ" দেখে যারা উল্লাসে উচ্ছ্বসিত, আনন্দে উদ্ববেলিত....কেউ কেউ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গলাবাজি করছেন- ভারত ভুল বুঝতে পেরেছে, ডক্টর ইউনুস স্যারের কাছে চাণক্যনীতি পরাজিত হয়েছে- ইত্যাদি ইত্যাদি- চোখের দেখায় এগুলো ভালো লক্ষণ মনে হলেও আসলে এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর।
অতি উৎসাহিত বন্ধুদের সতর্ক করছি। অন্তত ভারতের বেলায় এটা 'বদমায়েশী ট্যাক্টিস'!
মনে রাখবেন, শত্রু যতক্ষণ আপনার সাথে খারাপ আচরণ করবে ততক্ষন আপনি নিরাপদ। কারণ, আপনি শত্রু সম্বন্ধে সজাগ আছেন। যেকোন বিপদ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। কিন্তু শত্রু যখন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে, বন্ধুর মতন সোহাগী আচরণ করবে তখন বুঝতে হবে আপনার জন্য কঠিন সময় আসছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- কয়েক দিন আগে চিন সফরে গিয়ে ডক্টর ইউনুস ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন- যেটা ভারত পারস্পরিক অর্থনৈতিক এবং প্রতিবেশী সুলভ হিসেবে ব্যবহার করতে পারতেন। সেখানে চিকেনস নেক খ্যাত শিলিগুড়ি করিডোরে ভারত অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র এবং এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাবস্থাও মোতায়েন করেছে!
এই বদমায়েশী ট্যাক্টিসটাকে আপনি 'হাসিনা টেকনিক' বলতে পারেন। কারণ, হাসিনা সবসময় বলতো- "আমরা জনগণের ভোটার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি! উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি!"
বাস্তবে সে ওগুলো হরণ করে নিজে দানব হয়ে দেশের জনগণের কণ্ঠ চেপে ধরেছিল। প্রকাশ্যে বলতো ভালো কথা কিন্তু কাজ করতো গুমখুনের।
তেমনি ভারতও এখন মিষ্টি মিষ্টি ব্যবহার করছে আপনাকে ভুলভাল বুঝানোর জন্য, আপনাকে 'অফ গার্ড' রাখার জন্য! যখন আপনার আস্থা অর্জন করবে ততক্ষণই আপনার টুটি চেপে ধরে তাদের আসল উদ্দেশ্য হাসিল করে নিবে।
অতএব ভাববেন না, মোদী মাইন্ড চেঞ্জ করেছে ডঃ ইউনূসের ব্যাপারে, বাংলাদেশের ব্যাপারে। ফাইনাল এটাক করার আগে একটু দম নিতে হয়, দিল্লি তাই করছে বর্তমানে।
"হাসিনাকে ফেরত দিতে চায়" বলেনি সত্য আবার ফেরত দিবে না, তাও বলেনি। এমন রহস্যময় কথা বলে বাংলাদেশের সাথে ভালবালাই করতে চায়।
কারণ, তখন বাংলাদেশ মনে করবে, নিরপেক্ষ এবং ভারত বান্ধব দেশগুলো দেখবে- আহা, ভারত সরকারেরকত দরদ বাংলাদেশের মানুষের জন্য!
কিন্তু আসলে এটা একটা টোপ বাংলাদেশের জন্য।
হাসিনাকে ফেরত দিবে বলে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা করবে, হাসিনার ফেরত দানের বিনিময়ে বাংলাদেশ কি কি করবে!
এই টোপ গিললে, ভারত তখন তাদের সকল দাবি দাওয়া পেশ করে বাংলাদেশের উপর আগে যে নিয়ন্ত্রণ ছিল- সেগুলো ফেরত চাইবে।
বিশেষ করে প্রশাসন, বিভিন্ন বাহিনীতে ট্রেনিং এর নাম করে যাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতো, সেগুলো আবার চালু করতে চাইবে। তাদের ব্যবসা বাণিজ্য, সকল ইনভেস্টমেন্ট আগের মতো একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ চাইবে হাসিনাকে ফেরত দেয়ার নাম করে।
বাংলাদেশ এইসব বিষয়ে গ্যারান্টি দিয়ে চুক্তি করা মাত্রই, দিল্লি তখন 'হাসিনার সর্দি জ্বর হয়েছে, ভোর রাইতে পেটে মোচড় দিয়ে কামড়ায়' বলে তাকে ফেরত পাঠানো অনির্দির্ষ্ট কাল (মানে সর্দি এবং পেটের ব্যাড়াম ভালো না হয়) পর্যন্ত দিল্লিতে কুতুব মিনার দেখার জন্য রেখে দিবে।
অতএব আপনি যদি দিল্লির মিষ্ট ব্যবহার, আর হাসিনার ফেরত আসার লাড্ডু গিলেন তাহলে বাংলাদেশ আবার দাদাদের দাদাগিরীর কাছে হেরে যাবে।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে হাসিনার কোন বিচার হবে না, মানে করতে পারবে না।
কারণ , বিচার ব্যবস্থায় এবং প্রশাসনে এনাফ জাদরেল দোসর বসে আসে যারা গড়িমসি করে এই বিচার স্থগিত করে দিবে। এছাড়া মিডিয়া সেলেব্রেটি এবং দালাল সুশীলরা তো আছেই বিচার ভণ্ডুল করার জন্য।
অতএব হাসিনা না আসলেই বাংলাদেশের জন্য বেটার।
তাহলে "সে আসলে জেলে যাবে" এই ভয় দেখিয়ে হাসিনার অনুসারীদের দৌড়ের উপর রাখা যাবে।
জানি আমার এই কুবুদ্ধি কারো পছন্দ হবে না, তবে আওয়ামীদের সাথে ডিল করতে চাইলে "চোরের উপর বাটপারি" শিখতে হবে। 'সের এর উপর সোয়া সের' দিতে হবে।
নইলে তথাকথিত 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা'র আম তো খোয়া গেছেই, এবার ছালাটাও যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৫০