দুর্নীতির কারণে তার যাওয়ার কথা ছিল জেলে, গেছেন তিনি বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নিতে। এটা খোদ মুহাম্মদ ইউনূসের স্বীকারোক্তি ছিল। তার দেশশাসনের আট মাসে বিদেশে যখন গেছেন তিনি, তখন স্বীকার করতেই হবে ওখানে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, এবং এটা আমি বিশ্বাস করি।
গ্রামীণ ব্যাংক ও মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অসততা নিয়ে আমরা দেশে প্রশ্ন করেই যাব, কিন্তু দেশের বাইরে যখন গেছেন/যাচ্ছেন তখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারপ্রধান তিনি। তার সরকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একটা বৈঠকের জন্যে যেভাবে নাকের জল চোখের জল এক করছে, এটা দেখতে সত্যি লজ্জার।
বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আত্মসম্মানবোধ বিসর্জনের এই নগ্নরূপ দেখে হতাশ হচ্ছি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ হলে ভালো, না হলে এটা আকাশ ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা নয়। এটাকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে ধরে নেওয়া যাবে। তবে যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন তারা, ঠিক ওইভাবে চেষ্টা না করলেই বরং সম্মানজনক হতো।
সরকারপ্রধানদের বৈঠক মূলত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। কূটনৈতিক অঙ্গনে এখানে নতজানু হয়ে পড়ার সুযোগ নাই। পারস্পরিক সম্মানের জায়গাকে অক্ষুণ্ন রাখা উচিত। ইউনূস-প্রশাসন এটা করতে পারেনি। এতে জাতি হিসেবে ক্রমে আমরা ছোট হচ্ছি। ইউনূস সাহেব বাংলাদেশের জনগণকে ছোট করেই চলেছেন।
ইউনূস-সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড থেকে মনে হচ্ছে স্রেফ ফেসবুকে কয়েকটা ফটো আপলোডের জন্যে তারা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক কেবল এখানে ফটোসেশান, এরবাইরে কিছু নয়। কারণ অর্থবহ কিছু হতে যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা দরকার, তার কিছু এখানে নেই।
ইতিহাসে এই প্রথম আমরা দেখছি, বাংলাদেশ বর্হির্বিশ্বে মর্যাদা হারানো এক দেশ। এটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটা দেশের সঠিক অবস্থান হতে পারে না। বাংলাদেশের অবস্থান আরও অনেক উঁচুতে। এখানে সাক্ষাতের চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পরেও মানইজ্জতকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে চেষ্টাকে অব্যাহত রাখা আমাদের মোটেও ভালো লাগছে না।
মুহাম্মদ ইউনূসের এই সরকার অনির্বাচিত, এবং দেশে যেমন নেই এর সাংবিধানিক বৈধতা, তেমনি বহির্বিশ্বে নেই স্বীকৃতি। এখানে তার প্রতি যে আচরণ করছে অন্যরা, এটা আমাদের গায়ে লাগছে খুব। এটা ব্যক্তি ইউনূসের প্রতি অন্যদের অসম্মান নয়, এটা বাংলাদেশকেই অসম্মান।
মোদির সঙ্গে ইউনূসের সাক্ষাৎ না হলে এটা দেশের কারো জন্যে আনন্দের সংবাদ নয়। যারা আনন্দ পাচ্ছেন, তাদের অবস্থা থেকে লজ্জা পাচ্ছি খুব। এটা অনুচিত।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করমর্দনের সময়ে ইউনূস কর্তৃক প্রায় মিনিটব্যাপী হাত ঝাঁকানোর দৃশ্য ছিল ভয়াবহ। ওখানে শি জিনপিংয়ের চোখমুখ দিয়ে যা বেরিয়ে এসেছিল, তার নাম তাচ্ছিল্য। নিন্দা জানাই চীনের প্রেসিডেন্টের এমন শারীরিক ভাষাভঙ্গিতে। এখন মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে মুহাম্মদ ইউনূস এমন অথবা এরচেয়েও ভয়াল কিছু করে বসেন কিনা, এনিয়ে আছি ব্যাপক শঙ্কায়। প্রার্থনা করি, এটা যেন না হয়!
বাংলাদেশের ইজ্জত যেন রক্ষা পায়, এই প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের আর উপায় নাই!