আমরা যারা সরকারি চাকরি করে সৎ জীবনযাপনের চেষ্টা করি, তাদের মধ্যে একটা অহংবোধ কাজ করে। হয়ত বেতন কম পাই, জমা-স্থিতি নেই বললে চলে, তাতে কী বিপদ-আপদে পড়লে পুরো রাষ্ট্রই আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। অতএব অর্থের জন্য কাঙালপণার কোন মানে নেই। তাই ছাত্রজীবনে পেছন সারির সহপাঠীটি যখন বহুজাতিক কোম্পানির চাকরির বদৌলতে ঝা চকচকে গাড়ি হাকায়, ওয়েল ফার্নিশড ফ্ল্যাটে ডিনারের দাওয়াত দিয়ে পয়সার গরম দেখায়, তখন এই বোধের জোরে সব তুচ্ছ মনে হয়।
কিন্তু আজ (১৩ সেপ্টম্বর) একটি পত্রিকায় সাবেক প্রধান বিচারপতির এবিএম খায়রুল হকের স্ত্রী মিসেস আসমা হকের সাক্ষাৎকারটি পড়ে মনে হলো এতোদিন আমি বুঝি বোকার স্বর্গেই ছিলাম।
সম্প্রতি এবিএম খায়রুল হকের স্ত্রীর চিকিৎসা বাবদ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থ গ্রহণকে বিরোধীদলীয় নেত্রী উৎকোচ গ্রহণের সঙ্গে তুলনা করায় মিসেস আসমা আক্ষেপ করে বলেন, মনে হয় মরে যাই। মরে গেলেই মঙ্গল। অন্তত এত নোংরা কথা শুনতে হত না। এখন মনে হয় কেন যে সরকারি টাকা নিয়ে চিকিৎসা করাতে গেলাম। ওই সময়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। এ জন্য সে সময়ের প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমীন আমার চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তখনও জানতাম না তিনি আমার চিকিৎসার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ব্যবস্থা করেছেন।
তীব্র প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে অধিক যোগ্যতা নিয়ে এই সরকারি চাকরিতে আসাই যেন আমাদের ভুল। এমনিতেই বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হতাশার অন্ত নেই। তার ওপর ন্যায্য প্রাপ নিয়েও যদি প্রশ্ন ওঠে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। আমরা তো কোন দলের লোক নই। যখন যে সরকার আসবে তারই আজ্ঞা বহনে আমরা প্রস্তুত। তাহলে আমাদের কেন রাজনীতির মাঠে টেনে আনা?