না, কোন সুসংবাদ নেই!! এখনো আমরা আগের জায়গাতেই আছি
শব্দকরদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যে সমস্যাটা মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হলো এই সম্প্রদায়ের লোকের সাথে পরিচিত হয়ে তাদের জীবন ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। এই লক্ষে কাজী মামুন এবং মামুন রশীদ বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই চেষ্টার অগ্রগতি সম্পর্কে হয়ত আমরা সামনে কিছু একটা জানাতে পারবো। আপাতত আমরা আগের জায়গাতেই আছি।
এই "না পারার" পেছনে শব্দকরদের নিজেদের লুকিয়ে রাখার প্রবনতা সম্ভবত একটা ভূমিকা রাখছে। পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে কাজী মামুনের একটা অভিজ্ঞতার কথা হুবহু তুলে দিলামঃ
আজকে একজন শিক্ষিত শব্দকরকে ফোন দিয়ে এসব ব্যাপারে একটু সহায়তা চাইলাম। উনি বার বার আমাকে এড়িয়ে গেল। (উনি কেমন জানি পরিচয় গোপন করতে চাইছেন, শব্দকর পরিচয়ে বিরক্তবোধ করছেন)
কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা।
যাহোক, অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন শব্দকরদের সম্পর্কে আরো জানতে। হ্যা, আমরা একটা বিস্তারিত ফিচার আর্টিকেল খুঁজে পেয়েছি (খুঁজে পাওয়ার কৃতিত্ব কাজী মামুনের)। বিএনবি নিউজ-এর সেপ্টেম্বর ১০, ২০১২ তারিখে প্রকাশিত ফিচারটি লিখেছেন বিশ্বজিৎ রায়। ফিচারটি পড়তে পারেন নিচের যেকোন একটি লিংক থেকেঃ
লিংক ১- দারিদ্রতা আর অনুন্নয়নের বৃত্তাবদ্ধতায় ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এক আদিবাসী জনগোষ্টীর কথা
লিংক ২- এ সংক্রান্ত কাজী মামুনের পোস্ট
আমাদের প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে, আমরা থেমে যাইনি!! হয়ত একটু সময় লাগবে, তবু শব্দকরদের জীবন মান উন্নয়নে আমরা যতটুকু পারি ভূমিকা রেখে যাবো।
একটি ছোট সুসংবাদ সহ আপডেট
কিছুক্ষন আগে কাজী মামুনের মেসেজের মাধ্যমে জানতে পারলাম একজন রোটারিয়ান ভদ্রলোক (রোটারিয়ান এ এস মাহমুদ খান পিএইচএফ, চার্টার প্রেসিডেন্ট আরসি, আগারগাঁও, ঢাকা।) আমাদের সাহায্যে স্বপ্রনোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছেন। তিনি আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে পারবেন। তারমধ্যে এখন হেলথ ক্যাম্পের সাহায্যটাই ফার্স্ট প্রায়োরিটি। এরপর সম্ভব হলে উপযুক্ত স্থানে একটি স্থায়ি ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক করার বিষয়ে উনি সাহায্য করতে পারবেন। ওনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি চক্ষু ক্যাম্প, ডেন্টাল ক্যাম্প ইত্যাদি কাজেও সাহায্য করার কথা দিয়েছেন। সেই সাথে তিনি শব্দকরদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করা হলে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণাদী; যেমনঃ টেক্সট বুক, খাতা, পেনসিল, স্কুল ব্যাগ ইত্যাদি সরবরাহ করার ব্যাবস্থা করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও ভবিষ্যতে শব্দকরদের পূনর্বাসনের লক্ষে স্থায়ি আয়ের লক্ষে কাজ করার বিষয়েও তিনি আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ফেসবুকে শব্দকর
যারা ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করেননি বা ব্লগে একাউন্ট নেই তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ফেসবুকে "শব্দকর" নামে একটি গ্রুপ খোলা হয়েছে। সবাইকে আমন্ত্রন আলোচনার জন্য। আপনার ছোট একটি আইডিয়া শব্দকরদের জীবনের মানোয়ন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে!
ফেসবুক গ্রুপঃ শব্দকর
ব্লগারদের বদগুনগুলোর মাঝে একটি উল্লেখযোগ্য গুন হচ্ছে "ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো"! সাম্প্রতিক সময়ে নেতিবাচক কিছু সমালোচনাকে একপাশে রেখে যদি পর্যালোচনা করেন তবে দেখবেন সমাজ সংস্কার, দেশীয় সংস্কৃতির লালন ও ধারণ, আর্তমানবতার সেবায় ব্লগাররা বারবার বাড়িয়ে দিয়েছেন নিজেদের সাহায্যের হাত। সেই ব্লগের শুরুর থেকে আজ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং আশা করি থাকবে।
সংক্ষিপ্ত উপক্রমনিকা ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এবার "বনের মোষ তাড়ানো" বিষয়ে আসা যাক। আপনারা ইতিমধ্যে ব্লগার কাজী মামুন হোসেন -এর পোস্টের মাধ্যমে শব্দকরদের মানবেতর জীবন যাপন সম্পর্কে জেনেছেন।
আধুনিক এই যুগে জাত-পাত-বর্ণ বৈষম্যের কারণে অমানবিক জীবন যাপন করবে আমাদেরই মত কিছু মানুষ এ হতে পারেনা। এ প্রসংগে কাজী মামুন হোসেনের পোস্টের সূত্র ধরে আমি একটি পোস্টে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী ছিলাম। আলোচনা খুব অল্প পরিসরে হলেও একটা বিষয় মোটামুটি আমরা বুঝতে পেরেছি যে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই অচলায়তন ভাঙতে হলে প্রান্তিক এই জন গোষ্ঠির মাঝে গিয়ে এদের সাথে মিশে আমাদের কাজ করতে হবে। এছাড়াও শব্দকরদের অসাহয়ত্বের "শব্দ" আরো ব্লগার ও সাধারণ মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সামহোয়ারইন ব্লগও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছে।
যাহোক, আমি একটি পাইলট প্রকল্পের প্রস্তাবনা নিচে পেশ করছি সবার মতামতের আশায়ঃ
১. শব্দকরদের সংখ্যা যদি আনুমানিক ১০,০০০ হয় এই সবগুলো মানুষকে নিয়ে কাজ শুরু করা যাবেনা। প্রাথমিকভাবে আমাদের এমন একটি (বা একাধিক) গ্রাম নির্বাচন করতে হবে যেখানে অল্পবিস্তর শ'খানেক শব্দকরদের বসবাস।
২. মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা। এই ১০০ মানুষের খাদ্য এবং বস্ত্রের ব্যবস্থা করা আপাতত আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা এটা আমাদের লক্ষও নয় যে আমরা তাদের মুখে খাবার তুলে দেবো। তাদের বাসস্থান আছে ধরে নিয়ে আমরা প্রধান দুইটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারি- শিক্ষা ও চিকিৎসা।
৩. শব্দকরদের গ্রাম বা যে এলাকায় তারা বাস করে সেখানে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায় কিনা তা বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। কিন্তু এখানে বেশ বড়সর "কিন্তু" রয়েছে। একটি বিদ্যালয় স্থাপন মুখের কথা নয়; এর জন্য জায়গার প্রয়োজন, অনুমতির বিষয় রয়েছে, শিক্ষা দেবেন কারা সেই বিষয়টাও বিবেচনায় রাখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় শব্দকরদের (মূলত শিশু, কিশোর) শিক্ষার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা।
৪. চিকিৎসা! এই একটা বিষয় আমরা খুব দ্রুত শুরু করে দিতে পারি। দরিদ্র এই জনগোষ্ঠি যে ন্যুনতম চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছেনা তা আর বলে বোঝানোর দরকার নেই।
এখানে আমার একটি প্রস্তাবনা আছে-
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার আমরা যে পাইলট প্রকল্পের কথা আগে বলেছি সেই প্রকল্পের অধীনে নির্দিষ্ট একটি এলাকায় "ফ্রি হেলথ ক্যাম্পের" আয়োজন করতে পারি। এই আয়োজনে আমাদের লাগবেঃ
* একজন (বা বেশি) স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক যিনি একটি দিন স্বেচ্ছাশ্রম দেবেন নিজ মানবতার দায়ে।
* হেলথ ক্যাম্পের জন্য কিছু লজিস্টিক সাপোর্ট লাগবে; যেমন চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি।
* ফ্রি মেডিসিন- শুধু প্রেশক্রিপশন দিলেই হবেনা ঔষধেরও ব্যবস্থা করতে হবে। সিলেট শহর থেকে প্রয়োজনিয় কিছু ঔষধ কিনে নেয়া যেতে পারে। পরবর্তিতে আমরা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সাথে ফ্রি স্যাম্পলের ব্যাপারে কথা বলতে পারি।
* আমাদের কিছু রেকর্ড কিপিং এর কাজ করতে হবে। এর জন্য আমাদের ল্যাপটপই যথেষ্ট। তবে কিছু ফাইল লাগবে সেই ফাইলগুলোতে আমরা প্রতি পেশেন্টের তথ্য জমা রাখবো এবং সেটি পেশেন্টের কাছেই থাকবে। পরবর্তি সময়ে সহজে পেশেন্টকে সনাক্ত করতে আমরা একটি হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে পারি।
** নোটঃ এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায় এমন হেলথ ক্যাম্প করতে কি কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় কিনা। যদি হয় তাহলে সেই অনুমতির ব্যবস্থা করতে হবে।
সবার মন্তব্য, আলোচনা-সমালোচনা আশা করছি!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৭