
কিন-ব্রীজ।
হঠাৎ করেই দলেবলে সিলেট বেড়ানো হলো। সেই ছোটবেলা ট্রেনে করে নানু-দাদু'র বাড়ি যাওয়া হতো ঈদের সময় এমনি দলেবলে। অনেকদিন ট্রেনে চড়া হয়নি, ভাবলাম তেমনই মজা হবে। কোথায় কি, সিটে গিয়ে দেখি জানালা বন্ধ। খোলা জানালা ছাড়া ট্রেনের মজা আছে নাকি?
রাতে ভাতিজি বলছিলো - "সিলহট(!!) যাবো আমরা"। যতই বলি সিলেট, ও বলে সিলহট। স্টেশনে নেমে দেখি একটা রেস্টুরেন্টের নাম "সিল-হট রেস্টুরেন্ট"

আলী আমজাদের ঘড়ি - শহরে ঢুকতেই ব্রীজের গোড়ায় নজরে আসে।

সুরমা নদী - ভোরে ঘুম ভেঙে নদীটা দেখে কিযে শান্তি লাগল।

ব্রীজের নীচ দিয়ে দারুন পায়ে চলার পথ, সাথে সুরমা নদীর ঘাট।

কানিশাইল ঘাট - শহরের নানান জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে এলাম এখানে। দারুন জায়গাটা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার - উচুঁ এক টিলার উপর তৈরি করা হয়েছে এটা, নীচ থেকে শুধু সিড়িঁটা নজরে আসে। শান্ত, সুন্দর। তবে নির্জনতাটা অনেক বেশি। চারপাশের সৌন্দর্য্যটা দারুন দেখায় এই শহীদ মিনার থেকে।

জাফলং - অসাধারন। গাড়ি থেকে নামতেই ১০/১১ বছরের কয়েকজন দাড়িয়ে গেলো - "আই এ্যাম মিস্টার আক্তার হোসেন, টুরিস্ট গাইড। সবখান আমার মতোন আর কেউ ঘুরাইতে পারবো না"

পানি এতো ঝকঝক করছিলো, আমাদের সাথে থাকা বাচ্চারা অনবরত ধমক খাচ্ছিল পানি ধরার জন্য, ওদের কি দোষ আমারতো ইচ্ছে করছিলো ট্রলারে পা ঝুলিয়ে বসি।

জাফলং-এ রঙ-বেরঙের পাথর তোলা।

জাফলং-এ ট্রলার করে এপাড়ে আসার সময় ব্রীজটা দূর থেকে যত ভালো লাগছিল কাছে এসে তেমনটা লাগেনি।

বালি আর পানি একসঙ্গে পাবার আনন্দে পিচ্চিদের ফিরিয়ে আনা ক্ষ্টকর হয়ে পড়েছিলো।

সিলেট সার্কিট হাউস - এককথায় দারুন। বিশাল জায়গা জুড়ে তৈরী করা হয়েছে। সুরমা নদী'র তীরে, তবে শহরের ব্যস্ততা অনেকটা দূরেই থাকে এখান থেকে। ভোরে দলবেধেঁ নামায পড়ে বাড়ি ফেরত মুসুল্লি দেখা যেত, তেমনি কাছের কোন মন্দির থেকে শাখেঁর আওয়াজ শোনা যায়। তবে আশ্চর্য লেগেছে যে, রিক্সাওলা'রা থুক্কু ড্রাইভারদের যদি বলতাম "সার্কিট হাউজ যাবেন?" বলতো চিনি না। পরে স্হানীয় একজন বুঝিয়ে দিলেন, "কিন-ব্রীজ , বড়ব্রীজে'র গোড়ায় যাবে", তখন রিক্সা পেলাম।
কোথাও বেড়াতে গিয়ে আয়োজন করে দাওয়াত খেতে যাওয়া ভালো লাগে না। কিন্তু এখানে ভাইয়া-ভাবীর অনেক স্হানীয় বন্ধুরা ছিলো, তাদের কয়েক বাসায় যেতে হয়েছে। তেমনি একটা ছিলো সুপ্রভা'দি-মানস'দা। ছিমছাম, শান্ত ঘর তাদের। মানস'দা দারুন আন্তরিক। সিলেটের নানান পদ রান্না করেছিলেন দিদি। কিছু কিছু পরিচিতের মাঝে একেবারে নতুন ছিলো "লাই পাতা"। শাকটা'র স্বাদ অন্যরকম, পাওয়া যায় শুধু সিলেটেই।

ফিরে আসার দিন মেঘের কি দারুন খেলা দেখলাম। একই স্হানে দুই তিন স্তরে নানান রঙের মেঘের ভেলা।
আমাদের সবচেয়ে পিচ্চি যেটা ছিলো ওর অভ্যাস হলে যা কিছুই হাতের নাগালে পায় দু'তিনটা চাপড় দেয়া। আমরা বলি কি রে বাসের হেলপার হবি নাকি? ফিরে আসার সময় বাসে ওর সামনের সিটে বসেছিলেন যে ভদ্রলোক উনি যেই না রিলাক্স করার জন্য আধশোয়া হলেন, ও পেয়ে গেলো সুদৃশ্য টাক নাগালে, আর যায় কই ...... হেলপারি শুরু

ভাইয়া সরি বলে সামলায় সেসময়টা, পরে আমরা আর খেয়াল করিনি কি হয়েছিলো। ঢাকা পৌছে বাস থেকে নামার সময় শুনি লোকটা ওকে বলছে - "বরোই সাতাইছো তুমি আমারে"। পরে জেনেছি ওর যন্ত্রনায় বেচারা রুমাল দিয়ে টাক ঢেকেছিলেন, তাতে পিচ্চি ক্ষেপে গিয়ে দু'হাতে সজোরে হেলপারি শুরু করেছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৯:১০