ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।
আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন চার কি পাঁচ বছর বয়সের ছোট্ট ছেলে। ঈদের আগের দিন নানা অফিস থেকে ফিরতেন একগুচ্ছ চকচকে নতুন টাকা নিয়ে। সেই টাকার গন্ধে ঈদের আনন্দ যেন আরও বেড়ে যেত। যত্ন করে নতুন টাকা আমাদের হাতে তুলে দিতেন, যেন ওগুলো শুধু কাগজের নোট নয়—ভালোবাসার এক বিশেষ স্মারক।
নতুন পাঞ্জাবি পরে নানার হাত ধরে ঈদের জামাতে যেতাম। ঈদের নামাজ শেষে নানা বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি করতেন, আমিও ছোট্ট হাত বাড়িয়ে পরিচিত-অপরিচিত সবার সাথে হাত মেলাতাম। সেই কোমল সকালটা ছিল আলাদা এক অনুভূতি—শান্ত, নির্মল আর প্রশান্তিতে ভরা।
জামাত শেষে আমাদের গন্তব্য ছিল মেলা। রঙিন বেলুন, কাঠের খেলনা, টিনের গাড়ি—সবকিছুই চোখে পড়লেই চাইতাম, আর নানা হাসিমুখে কিনে দিতেন। সারাদিন কাটত সেই খেলনাগুলোর রাজ্যে ডুবে থেকে। ঈদের দিনটুকু যেন স্বপ্নের মতো কাটত, যেখানে নানা ছিলেন আমাদের আনন্দের মূল চরিত্র।
সময়ের স্রোতে সবকিছু বদলে যায়। নানা যখন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন, তখনও ঈদের সকালে তাঁর স্মৃতির ছোঁয়া রয়ে গেল। এরপর মামা নতুন টাকা আনতেন আমাদের জন্য, যেন নানার ভালোবাসা অন্য রূপে ফিরে আসত। কখনো কখনো আমিও গুলিস্থান থেকে নতুন টাকা এনে ছোটদের হাতে তুলে দিতাম, এক সময় যে আনন্দ পেয়েছি, তা অন্যদের দিতেও যেন এক অনন্য তৃপ্তি অনুভব করতাম।
কিন্তু সময়ের আবর্তনে এখন আর গুলিস্থান থেকে নতুন টাকা আনা হয়ে ওঠে না। তবু ঈদের সকালে সেই চকচকে নোটের স্মৃতি, নতুন জামার গন্ধ আর নানার মমতার স্পর্শ রয়ে গেছে হৃদয়ের গহীনে, চিরকালীন উজ্জ্বল হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৭