
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, লুটপাট, ভাংচুর এবং বিভিন্ন ধরণের সহিংস অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে বিপন্ন, ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা হারাচ্ছে জনগণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এসব অপরাধের পেছনে কারা দায়ী? গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসব অপরাধের সিংহভাগই সংঘটিত হচ্ছে পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের দ্বারা, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
অপরাধের পেছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র
বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি চক্র বারবার অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। হরতাল, অবরোধ, সরকারি সম্পদ ধ্বংস, নিরীহ মানুষের ওপর হামলা—এসব তাদের পুরনো কৌশল। এখন তারা নতুন কৌশল হিসেবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে হাতিয়ার বানিয়েছে।
লুটপাট ও ভাংচুরের মদদদাতা:
সম্প্রতি কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের আউটলেটে হামলা, দোকান লুটপাট এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পদ ধ্বংসের ঘটনায় জড়িতদের তদন্তে দেখা গেছে, এদের অনেকেই পলাতক স্বৈরাচারের সমর্থক। তারা ইসলামী লেবাস পোষাক ধারণ করে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে এদেশের ইসলামপন্থীদের দোষী সাব্যস্ত করার হীন উদ্দেশ্যে। এই জন্যই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করে জনমনে ভয় ও ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়।
অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেট:
এই গোষ্ঠী শুধু সশস্ত্র অপরাধেই নয়, অর্থ পাচার, মাদক ব্যবসা এবং অবৈধ অস্ত্র কারবার এদের পুরাতন জাতিগত ব্যবসা। এরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচারের সাথে জড়িত। তাদের লক্ষ্য হলো দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেওয়া, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ তৈরি হয়।
ইসলামের শিক্ষা vs. তাদের অপকর্ম
ইসলাম কখনওই অরাজকতা, লুটপাট বা নিরীহ মানুষের ক্ষতি করার অনুমতি দেয় না। হজরত ওমর (রা.)-এর সময়ে অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। অথচ আজ পলাতক ফ্যাসিবাদের দোসর কিছু লোক ধর্মের নামে সহিংসতা চালাচ্ছে, যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত।
প্রতিবেশীর হক:
রাসূল (সা.) বলেছেন, প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হতে, তাদের বিপদে পাশে দাঁড়াতে। অথচ এই অপরাধীরা প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়, বিদেশি বিনিয়োগকে ভীত করে তোলে।
ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরোধিতা:
ইসলামে অমুসলিমদের উপাসনালয় রক্ষার নির্দেশ আছে। অথচ এই গোষ্ঠী ধর্মের নামে বিদেশি প্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যকে টার্গেট করে, যা কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
এই গোষ্ঠীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নতুন কিছু নয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়:
সচিবালয় হামলা: আনসার বাহিনীর ছদ্মবেশে সচিবালয়ে হামলা চালিয়ে সরকারি কাজকর্ম ব্যাহত করা।
অটোচালক সেজে অবরোধ: রাজধানীজুড়ে অটোরিকশাচালকের ভূমিকায় অবরোধ সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ানো।
ফিলিস্তিন ইস্যুর অপব্যবহার: গতকাল ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে মিছিলের নামে বিভিন্ন দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাংচুর করা।
এসব ঘটনা প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা কোনো ইস্যুকেই সামনে এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দ্বিধা করে না।
এই অপশক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো:
সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা: উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করে জনমনে হতাশা ছড়ানো।
বিদেশি ষড়যন্ত্রে অংশ নেওয়া: আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে অস্থির দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগ ঠেকানো।
সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা: গণতান্ত্রিক পথে ব্যর্থ হয়ে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টা।
আমাদের করণীয়
সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে, এই অপরাধগুলোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে।
আইনের শাসন জোরদার: আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে, যেন অপরাধীরা বিচার এড়াতে না পারে।
সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা: স্থানীয় পর্যায়ে সচেতন নাগরিকদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে অপরাধ প্রতিরোধ করতে হবে।
উপসংহার
দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তি ও তাদের দোসররা যেভাবে অপরাধের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হলো শান্তি, সম্প্রীতি ও ন্যায়বিচার—অরাজকতা নয়। তাই আসুন, আমরা সকলেই সচেতন হই, ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করি এবং দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



