আকাশ এমন ব্যাকুল ছিল সন্ধ্যারেখার আগে
বৃষ্টিনীলে ভাসিয়ে নিল রাত্রি যখন জাগে
রতনপুরের ডাকপিয়নের বাড়ি ফেরার পথে
আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়ে রতনপুরে – রাতে
প্যাডেল জোরে চাপে হারান কোথায় পড়ে বাজ
রতনপুরের হারান করে ডাকপিয়নের কাজ।
এক মেয়ে তার নামটি খুকি, মা মরা সেই মেয়ে
সাত বৈশাখ ঠিক করেছে হারান মেয়ের বিয়ে।
বৃষ্টি ঝরে আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরে মনে
কন্যা দায়ে পিতা তবু আঙ্গুলে দিন গোনে
বেনারসী কিনেছে সে আজকে শহর থেকে
এমন দিনে বৃষ্টি এত এলো কোথা থেকে?
শেফালী তার বউটি যখন মরেই গেল হায়
ছোট্ট খুকি তখনো যে মাতৃদুগ্ধ খায়
মায়ের আদর পায়নি খুকি বাবা সে তার জানে
আগলে ধরে বুকের ভেতর মেয়ের জীবন বোনে
খুকি যে তার জীবন-মরণ খুকি যে তার আলো
খুকি যে তার আঁধার মানিক, মায়ের মত এলো
আজ বৃষ্টি, খুব বৃষ্টি আকাশে ও চোখে
প্যাডেল জোরে চাপে হারান পিছন ফিরে দেখে
আঙ্গুল ধরে প্রথম যেদিন পাঠশালা সে গেল
পৌঁছে দিয়ে ফেরার বেলা কান্না জুড়ে দিল
বাবারও যে চোখ ছল ছল বিকেল বেলায় ফিরে
হাতে চুড়ি, ডাকে ‘খুকি, কোথায় গেলি মা রে’---
খুকি এসে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘বাবা এলে?
চুড়ি আমার চাই না; বল কেন চলে এলে?’
চলে যাওয়াই সত্যি কেবল চলে যাওয়াই রীতি
ডাকপিয়নের বুকে আছে চলে যাওয়ার স্মৃতি
প্যাডেল চাপে পথের কাদায় কান্না বুকে বাজে
শাড়ির প্যাকেট চাপে বুকে না যেন তা ভেজে
সুখ গুলোকে এমনি হারান আগলে ধরেছিল
ঝোলায় ভরা ডাকের মত পৌঁছে দিয়েছিল
পৌঁছে দিতে হবে আরো, আরোকিছু বাকী
বুকের মায়া পৌঁছে দিতেই বৃষ্টি এলো নাকি?
বাড়ি ফিরেই ডাকে হারান,- ‘কোথায় গেলি মা রে’---
ভেজা শরীর চোখে হাসি খুকি’র জন্য ঝরে
মেয়ে আসে লাজুক মুখে গামছা নিয়ে হাতে
দেখল বাবা ভিজে গেছে কালবোশেখি রাতে
গলায় এসে থমকে গেল অসহ্য সে ব্যথা
শরীর ভেজা কাদায় মাখা বাবা যে তার একা !
এমনি ভাবেই পথের পাড়ি অতিক্রমের রাতে
হেসেছিল বেনারসী, জল লাগেনি তাতে !!