somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন যেমন : দুটি ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা

১৯ শে মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের জীবনে চলার পথে কত ঘটনাই না ঘটে ৷ কোনোটা ভাল, কোনোটা মন্দ আবার কোনোটা শুধুই ঘটনা ৷ গত সপ্তাহের দুটি ঘটনা কেন জানিনা আমার ভেতরটা সামান্য ছুঁয়ে গেছে ৷ সেইটাই ব্লগের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে চাই ৷ আমি থাকি ব্যাঙ্গালোর শহরের উত্তর প্রান্তে বড় রাস্তা থেকে অনেকটা ভেতর দিকে ৷ বাড়ী ফিরতে আমাকে নামতে হয় ভেটেনারি কলেজ বলে একটা বাসস্টপে ৷ জায়গাটা পান্ডব বর্জিত ও নির্জন কারন আসেপাশে কোনো জনবসতি বা দোকানপাট কিছুই নেই ৷ স্থানীয় সব জমি ওই ভেটেনারি কলেজের ৷ ভেতরদিকে কিছুটা হেঁটে গেলে আমাদের পাড়ার দিকে জমজমাট জনবসতি মেলে ৷ সেদিন অফিস থেকে ফিরতে কিছুটা রাত হয়েছিল ৷ আসলে জায়গাটা ফাঁকা বলেই হয়ত রাত ৯টাতেই নির্ঝুম লাগে ৷ আমি বাটপাড় ও ছিনতাইবাজদের না দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত হই ৷ হ্ঠাৎ দেখি এক মেয়েকে দেখে একটা হিঁজড়া লাঠি হাতে তেড়ে যাচ্ছে ৷ মেয়েটাকে দেখে দেহপোজীবিনী বলেই মনে হয় ৷ অত্যন্ত দারিদ্রের ছাপ চেহারায় ৷ মুখে চোখে সস্তা রঙ মেখেছে বলে মনে হল ৷ কাছেই আরো দুটো লোক ছিল ৷ তারা মেয়েটার সাথে কথা বলতেই এই বিপত্তি ৷ মার খেয়ে মেয়েটা দৌড়ে পালিয়ে গেল ৷ আমি নির্বাক দর্শক ৷ মনটা খারাপ হয়ে গেল ৷ আগে অনেকদিন পুলিস দেখে এদের সবাইকে দৌড়তে দেখেছি ৷ যে মানুষ নিজের সম্ভ্রমের শেষ সীমানাটাও পেরোতে বাধ্য হয়েছে পেটের রুটির জন্য তাতেও তার শান্তি নেই ৷ হিঁজড়াদের আনেক জোর জুলুম তোলাবাজী দেখেছি নানা জায়গায় ৷ তবে এটা অন্যরকম ৷ মনটা বিষাদে ভরে গেল ৷


পরেরদিন অফিসে আসছি ৷ পথ সেই একই ৷ এবার আমাদের অফিসের কাছের বাস্স্টপে নামলাম ৷ এটা অবশ্য বেশ জমজমাট জায়গা ৷ ভেটেনারি কলেজের মতো নির্জন নয় ৷ ছয় লেনের রড়রাস্তা পার হয়ে যেতে হবে ৷ হঠাৎ দেখি এক স্যুট বুট পরা অন্ধ মানুষ রাস্তা পার হবার জন্য সাহায্য করতে অনুরোধ করছেন লোকদের ৷ ইউরোপ আমেরিকার কথা জানিনা তবে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে এই ধরনের মানবিক সাহায্যের হাতের কোনো কমতি নেই ৷ আমি গিয়ে তার হাতটা ধরলাম ৷ স্থানীয় কন্নড় ভাষায় বললাম "সিগনাল কেম্পা ইল্লা ৷ স্বল্পা ওয়েট মাড়বেকো" ৷ (গাড়ী চলাচলের সঙ্কেত এখনো লাল হয়নি ৷ একটু অপেক্ষা করতে হবে) ৷" মানুষটির মুখে সবসময়ই এক প্রসন্ন আমিতাভ হাসি ৷ যেন অন্ধত্বের বিপর্যয়কে কাচকলা দেখিয়ে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দের ছাপ তার মুখে ৷ তারপর গাড়ী চলাচল বন্ধ হতে উনাকে পার করিয়ে দিলাম ৷ একটা ইন্দ্রিয় নেই বলেই হয়ত অন্ধ মানুষদের অন্য ইন্দ্রিয়গুলি একটু বেশী সজাগ থাকে ৷ কোনদিকে কতদূর দিয়ে কী রকম মোটরগাড়ী যাচ্ছে বেশ আন্দাজ করে নিচ্ছিলেন সেটা ওর কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল ৷ আমি বেশ অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম ৷ লাল সিগন্যালে যেমন গাড়ী থামার পরেও শুধু আওয়াজ দিয়ে বলে দিলেন যে ওই হেভিমোটর বাইকটা থার্ড লেন দিয়ে সিগন্যাল না মেনেই বেরিয়ে গেলো তাই না? এই রকম সব কথা শুনে আমারতো মনে হচ্ছিল যে ভগবান বোধহয় এই হাসিখুসি মানুষটির অপর প্রসন্ন হয়েই তাকে ইনটিউশানটা বেশী দিয়েছেন ৷ রাস্তা পার হবার পর জিজ্ঞাসা করলাম "নিভু ইয়েল্লিগে হোগাত্তে?" মানে আপনি কোথায় যাবেন? অন্ধ ভদ্রলোকটি বললেন "বাঁদিকে ২৫০ পা গেলেই কলম্বিয়া এশিয়া হসপিটাল পড়বে ৷ আমি ওখানে চাকরী করি" ৷ বললাম চলুন এগিয়ে দিয়ে আসি আপনাকে ৷ কথা বলে জানলাম ভদ্রলোক থাকেন ব্যাঙ্গালোর থেকে ৫০ কি.মি. দূরে ৷ মানে শুধু অন্ধের ছড়ি সম্বল করে রোজ ১০০ কি.মি যাতায়াত করেন ৩ টে বাস বদলে ৷ তাও মুখে সর্বদা হাসিটি লেগে রয়েছে ৷ ভগবানের কাছে কোনো অভিযোগ নেই ৷ জীবনে হেরে গিয়েও যেন জিতে গেছেন ৷ রবীন্দ্রনাথের ভাষায় "আমি আছি সুখে হাস্যমুখে দুঃখ আমার নাই" ৷ মনটা এক অদ্ভুত আনন্দে ভরে গেল ৷
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×