সকালে বারিধারা মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম । সুনসান নীরবতা ।গিঞ্জি পরিবেশে শুয়ে বসে আছে কয়েকশ ছাত্র ।পা ফেলার জায়গা নেই ।কারো মাথায় ব্যান্ডেজ, কারো হাতে, কারো বা পায়ে। কেউ অর্ধাহারে কেউবা অনাহারে সময় কাটাচ্ছে । তাদের কোনো সুচিকিৎসা নেই, নেই কোনো সেবা শুশ্রূষা । তাদের একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন গিয়েছিলে , কেনইবা শহীদ না হয়ে ফিরে আসলে? অপরাধীর মত অবনত চোখে বলল “হুজুরের নির্দেশ”।?
আমি বললাম “ দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ফিরে না আসা” সেটাও তো নির্দেশের মধ্যে ছিল! তো চলে আসলে কেন?
সে বলল এমন যে হবে সেটা ভাবিনি ।
আমি বললাম কেন ভাবনাই ?তোমরাই তো বল, এই সরকার নাস্তিক মুরদাদের সরকার, এই সরকার তোমাদের শত্রু । তো, তোমরা শত্রুদের কাছ থেকে এর থেকে ভালো কিছু কী আশা করতে পার ?
জী না ।
আর কথা না বাড়ালাম না ।ছোট ভাইয়ের কাছে গেলাম। নোংরা ব্যান্ডেজ করা পা নিয়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে আছে। তার এই অবস্থা থেকে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল।
বাবার ইচ্ছে ছিল দুই ছেলে হলে এক ছেলেকে ইসলামিক স্কলার বানাবেন। ফলশ্রুতিতে মাদ্রাসায় ভর্তি করা, মাত্র দেড় বছরেই পবিত্র কোরআনে হেফজ লাভ করে। এখন মাওলানা চতুর্থ বর্ষে ( আরবিতে কী হবে মনে নাই)পড়ছে ।মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেও রবীন্দ্র, নজরুল, হুমায়ুন থেকে শুরু করে হুমায়ূন আযাদ এবং সর্বশেষ জিকো ভাইয়ের” বেকায়দা” বইও তার পঠিত । আমার বাসায় আসলে সারাক্ষণ মগ্ন থাকে ব্লগ আর ফেইসবুক নিয়ে।হুমায়ূন আযাদের বই পড়ার কারন জিজ্ঞাসা করাতে বলছিল “আমি সাহিত্যের স্বাদ নেই” , আস্তিকতা - নাস্তিকতা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়।
ওদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও হুজুররা বাধ্য করেছিল সেখানে যাওয়ার জন্য । আমি তাকে না যেতে বলাতে সে বলেছিল, না গেলে মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে ।
ঘুম থেকে জাগিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে আসতে গিয়ে পড়লাম হুজুরদের বাধার মুখে, মেজাজ তখন চরমে । তাকিয়ে দেখলাম একেকটা নাদুশ নুদুশ হুজুর দিব্যি হাঁটাচলা করছে , স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছে । তাদের শরীরে কোনো ক্ষত নেই , নেই কোন ব্যান্ডেজ । কই একটা হেফাজতি নেতা কিংবা হুজুরও তো মারা যায়নি, নিদেনপক্ষে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার খবরও শুনিনি। সাধারন ছাত্রদের মাঝে ঈমান-বেঈমানের প্রশ্ন তুলে এনে তাদের লেলিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে চেয়েছিল হুজুররূপি একদল জানোয়ার ।আল্লাহ । আল্লাহ তাদের আশা পূরণ করেননি।
ওখানে প্রায় ৬০০ ছাত্র পড়াশুনা করে, এর মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই ফ্রি খায়, তাদের খাওয়ার খরচ আসে দান খয়রাত থেকে । আর খাওয়ার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। ।। আর ঘুম !! কোনো রাতেই চার ঘণ্টার বেশী ঘুমাতে দেওয়া হয় না।এত কঠোর পরিশ্রম করে এই খাওয়া-দাওয়া আর অপর্যাপ্ত ঘুমিয়ে টিকে থাকা কঠিনই বটে।
সমাবেশে বড় বড় কথা বলে যখন নেতারা ইসলাম উদ্ধার করে ফেলছিল, তখনই বুঝতে পারছিলাম, যত গর্জে তত বর্ষে না । এই সাধারন ছাত্রদের মাঠে নামিয়েছিল হুজুররা , তাদের নিরাপত্তার বিষয়টাও তাদের ভাবার কথা ।কিন্তু যারা নিজের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ তারা কি করে অন্যের নিরাপত্তা দিবে । লালবাগ মাদ্রাসায় এসির নিচে বসে বসে যারা শহীদ হওয়ার বাসনা পোষণ করেন নিরাপত্তার ভয়ে সমাবেশস্তলে আসতে পারেননা, তারা কীভাবে শহীদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে ।
শিক্ষক নাকি পিতার সমতুল্য । কোনো পিতা কী পারত তার সন্তানদের জীবনকে এইরকম অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে । পারত না । এই শিক্ষকরূপি শয়তানরা তার সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত করে তাদের প্রভুদের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল।
তাদের প্রতি ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার নেই ।
আজ কেউ ব্যাথার যন্ত্রনায় কাতরাবে, কেউবা ভালোভাবে হাটতে পারবেনা। তাদের পাশে বাবা-মা নেই ,অসহায় ভাবলেশহীন নির্বাক চোখে তারা তাকিয়ে থাকবে পরম করুনাময়ের দিকে।
এই লেখা যখন লিখছি ভাই আমার ঘুমিয়ে আছে পাশে । তার অপলক নিষ্পাপ চাহনি আমাকে ভাবিয়ে তুলে তার অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে।তার একেকটা নিঃশ্বাস অনেক দীর্ঘ মনে হয়। সময় এসেছে নতুন কিছু ভাবার।
।
তাড়াহুড়া করে লিখা, বাক্য গঠনে অনেক অসংগতি হতে পারে ।।