আকাশে তারাদের লগে মেগ দেখতে থাকা ব্রাত্য রাইসু গতকাল দুইটা পোস্ট ঝাড়সেন। একটা ইনকিলাবের চোর ও সাংবাদিক মেহেদী হাসান পলাশকে মুজিব মেহদীর থুথু মারা বিষয়ে, আর আরেকটা কাবামুখী হয়ে নামাজ পড়াটা যে পৌত্তলিকতা, সেই বিষয়ে। তো, দুইটা পোস্টেই মন্তব্য করতে গিয়া দেখি মন্তব্য করতে হইবে আরেক জায়গায়। ফেইসবুকে। আমি কই, পোস্ট একখানে, আর মন্তব্য আরেকখানে- এইটা কি ব্লগারদের লগে এক ধরনের ফাইজলামি না? কিছুটা হইলেও ভণ্ডামি না?
আরো কথা কওনের আগে একটা অপ্রাসঙ্গিক কথা কইয়া নেই। ফেইসবুকে আমার আসল নামের স্ট্যাটাসে কোনো এক সময় রাইসুর বইয়ের নাম 'আকাশে তারাদের লগে মেগ দেখতেছি' লেখা ছিল। সেইটা দেইখা আরেক কবি সেলিনা শিরিন শিকদার আমারে জিগাইসিলেন, তোমার সাথে কি রাইসুর পরিচয় আসে? আমি কইসিলাম, না। আমি তারে চিনি, তিনি আমারে চিনেন না। তবে তার কবিতা আমি ভালা পাই। সেলিনা আপা আমারে কইসিলেন, তোমার কবিতাগুলান নিয়া রাইসুর সাথে যোগাযোগ কর।
এইটা সত্য যে, এই ব্লগে এবং অন্য ব্লগে (যেইখানে আমি আসল নামে লিখি) দুই চাইরটা কবিতা লিখসিলাম। কিন্তু সেইগুলান কোনো জাতের না। অনেক সময় হাবিজিবি অনেক কিছুই লিখি। সেইটারে কোনো ক্যাটাগরিতে না ফেলতে পারলে কবিতা নাম দিয়া দিই। আর ডরে কাউরে কিছু কই না। কারণ এই কথা জানতে পারলে কবিরা আমারে দৌড়াইবো শিওর। যেই কারণে কোনো কবির সামনে বলি না যে আমি কবিতা লিখি। সেলিনা আপারেও কইসিলাম, না আপা। আমার কবিতা কিসু হয় না। যদিও আমার মনের মইধ্যে অনেক লোভ সিলো দুই একটা ছাপলে তো ভালই। নামধাম হইবো। কিন্তু রাইসুর কাসে যাই নাই।
যাই হোক, তার বেশ কিসু কবিতা আমার ভালো লাগসিলো। ব্লগের লেখাও কয়েকটা বেশ ভালো লাগসিলো। যেই কারণে তিনি লেখলে আমি তার লেখা আগ্রহ লইয়া পড়ি। গতকালকের লেখা পইড়া আমার কিসু কথা কওনের সিলো। কিন্তু যখন দেখলাম মন্তব্য করতে হইবে আরেক জায়গায়, তখন মেজাজটা বহুত খারাপ হইসিলো।
রোকেয়া কবীর ও মুজিব মেহদীর বই চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করেসে ইনকিলাবের সাংবাদিক ও বর্তমানে চোর মেহেদী হাসান পলাশ। ফলে মুজিব মেহদী তারে থুথু দেওয়ার আহ্বান জানাইসিলেন ফেইসবুকে। এই আহ্বানের লেখায় রাইসু প্রতিক্রিয়া জানাইসিলেন ফেইসবুকেই। গতকালকে ব্লগে যে লেখাটা দিসিলেন, সেইটা আসলে ফেইসবুকে করা মন্তব্যটাই। নতুন কিসু সেখানে নাই। আমার কথা হইলো, এই জিনিস দুইবার দেওয়ার উদ্দেশ্য কী? নতুন কোনো কথা থাকলে তাও মানা যাইতো যে রাইসু নতুন কিসু কইতাসেন। তার চাইতেও বড় কথা, রাইসুর কথার জবাবে মুজিব মেহদী কইসিলেন, ওইটা তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। ভাবনাচিন্তা কইরা তিনি এইটা লেখেন নাই। তো, এরপর তো রাইসুর উত্তর পাওয়ার কথা। না, রাইসু দেখলাম বিষয়টা লইয়া প্যাচাইতেসেন। তিনি এতো বড় কবি, এতো বড় পণ্ডিত, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মানুষ কতো কী-ই না করে- এইটুকু বুঝার মতো বুদ্ধিশুদ্ধি তার নাই বললে আমি বিশ্বাস করমু না। যেই কারণে আমি মনে করি, রাইসু জাইনা-বুইঝা ওই একই জিনিস আবার সামুতে ঢালসেন।
তা সেইটা ঢালতেই পারেন। তাতেও আপত্তি করার হয়তো কিসু থাকে না। কিন্তু আমার কথা হইল, আরেক জায়গায় মন্তব্য করার অপশন দিসেন ক্যান? বুঝলাম, সামুতে আসার সময় আপনের নাই, তাইলে মন্তব্য না করার অপশন না দিলেই তো হইত! আর ফেইসবুকে যে সমস্ত মন্তব্য অলরেডি চইল্যা আইসে, তাইতে তো পরিষ্কার থুথু দেওনের পেছনের ঘটনাটা কী?
আমার মনে হয়, রাইসু উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিষয়টা প্যাচাইতে চাইতেসেন। এই স্বভাবটা তার মধ্যে কিসুটা হইলেও আসে। কিন্তু সব বিষয়ে প্যাচানোটা যে ঠিক না, সেইটা তারে কে বুঝাইবে? তাছাড়া তিনি বোধহয় কিছুটা প্রচারণাও চাইতেসেন এই সময়ে। নাইলে ফেইসবুক, সামু- সবখানেই তিনি এক বিষয় লইয়া মাতামাতি করবেন ক্যান? এইরম বিষয় লইয়া সময় নষ্ট করার মানুষ রাইসু না, অন্তত আমি যদ্দুর জানি। তার মানে হইলো, রাইসুর কোনো কারণে এখন প্রচারণা দরকার, এবং সেইটার কারণেই তিনি এই কাজটা করতেসেন। যদি তাই হয়, তাইলে কইতে হইবো এইটা এক ধরনের ভণ্ডামি, যেইটা আমি আর যাই হোক, রাইসুর কাছ থাইকা আশা করি নাই।
সবশেষে আসি ফাইজলামির বিষয়ে। আপনি যেইখানে পোস্ট দিবেন, সেইখানকার পাঠকরা সেইখানেই মন্তব্য করবে- এইটাই সাধারণ নিয়ম। ব্যতিক্রম যে হইতে পারে না তা না। তবে ব্যতিক্রমের জন্য বিষয় লাগবে। এখন একখানে পোস্ট দিবেন, পাঠক সেইখানে পইড়া তারপর আরেকখানে গিয়া মন্তব্য দিবো- পাঠকদের এইরম বিড়ম্বনার মইধ্যে ফেলানোর কোনো অধিকার তো রাইসুর নাই। তিনি মন্তব্য না চাইলে না চাইতে পারেন, সেইটা অন্য কথা।
ধরলাম, রাইসু অখন ফেইসবুকে সময় দেন, সামুতে আসার সময় তার নাই। তাইলে পুরা লেখা ফেইসবুকেই দিতেন? ব্লগে দিলেন ক্যান? ব্লগ তো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং টুল না। দুইটার দুই কাম, দুই উদ্দেশ্য। একটার পাঠকরে আরেকটার সাথে মেশানোর তো কোনো দরকার নাই! আর সব পাঠকেরই যে ফেইসবুকে অ্যাকাউন্ট আসে, বা সবাই যে ওই গ্রুপের সদস্য, তাও না। তাইলে ওইরকম যারা মন্তব্য করতে চাইবে, তাদের মন্তব্যগুলান কোন জায়গায় নিবেন?
আমার কাসে মনে হইসে রাইসু পাঠকদের সাথে এক ধরনের ফাইজলামি করসেন। মুরুব্বীরা কয়, মানুষের নামধাম হইলে নাকি আমপাবলিকের সাথে মশকরা করে। রাইসু বোধহয় সেই কামটাই করলেন? কিন্তুক এইটার কি দরকার সিলো? পাবলিকরে বিড়ম্বনায় না ফেলাটা কিন্তু লেখকেরই দায়িত্ব। আর এক বিষয় লইয়া সারা দুনিয়ায় ত্যানা প্যাচানোটা ভালা কিসু না।
তাই রাইসুরে কই, রাগ হইয়েন না আবার, আপনের লেখা পসন্দ করি বইলাই কইতেসি, এই ধরনের ফাইজলামি বাদ দেন। হয় মন্তব্য নিবেন, নাইলে নিবেন না। কিন্তু মানুষরে নিজের বাড়িত দাওয়াত দিয়া গল্পগুজব কইরা যদি খাওনের সময় কন যে, দশ মাইল দূরের খুড়তুতো ভাইয়ের বাড়িত গিয়া খাওন লাগবো, তাইলে কিন্তু যে কেউর মাথাত রক্ত চইরা যাইবো। সব বিষয়ে তো আর ফাইজলামি করা যায় না!