somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপমহাদেশে ধর্মান্ধতার ইতিবৃত্তঃ একটি পর্যালোচনা

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দূর্নীতির প্রাদুর্ভাব ইত্যাদি সব মিলিয়ে এক সাগর সমস্যায় নিমজ্জিত। এসবের মধ্যেই মরার উপর খড়ার ঘা এর মত আঘাত করেছে আরেকটি ইস্যু ধর্ম ও অধর্মের অন্ধতার আগ্রাসন।
পিছন অতীত থেকে আমরা একটু ঘুরে আসলে সাপ্রতিক বিষয়গুলো আমাদের কাছে অন্য এক চিত্র তুলে ধরবে। সুদূর অতীতে এই অঞ্চলের প্রধান ধর্ম হিসেবে পৌত্তলিকতা বা মূর্তিপূজাকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। সেখান থেকে পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্ম এবং এরপর ইসলাম ধর্মের বিকাশ ঘটে। তারও পরে ব্রিটিশ রাজত্বে এসে খ্রিস্টান ধর্মের বিকাশ ঘটে। উপমহাদেশে আরব রাজত্বের সূচনার মধ্য দিয়ে ইসলামের বিকাশ শুরু হয়। ইসলাম ধর্মের এই বিস্তারের ধারাবাহিকতায় মুসলমান ও অত্র এলাকার প্রধান ধর্ম (সনাতন ধর্ম, বিশেষত হিন্দু) পালনকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি স্থায়ী বিভেদ গড়ে ওঠে যা আজও চরম আকার ধারন করে আছে। মধ্যযুগের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, শিশু ধর্ম ইসলামের বিস্তার এই এলাকার সনাতন ধর্ম পালনকারী শাসকদের হিংসাত্বক করে তোলে। আমাদের দেশে বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের রাজা গোবিন্দের ঘটনা আমরা কম বেশি সবাই জানি। তিনি মুসলমানদের উপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। মুঘল আমলে আমরা তেমন কোন ধর্মীয় নিপীড়ন বা ধর্মান্ধতার ঘটনা না পেলেও, প্রায় সব যুদ্ধেই ধর্মীয় উত্তেজনা দেখতে পাওয়া যায়। বস্তুত তা এই অঞ্চলের সনাতন ধর্মের শাসকদের মাঝেই বেশি ছিল। কেননা, আরব বংশোদ্ভূত মুসলমানরা এসে তাঁদের শাসন ক্ষমতা দখল করেছিল যা তাঁদের চরমভাবে ক্ষিপ্ত করেছিল এবং তাঁরা এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বধ্য পরিকর ছিল। রাজপুত , শিখ সহ আরো কিছু সম্প্রদায় এসময় খুবই উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী ছিল। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসময় মুসলমান শাসকরা খুবই দয়ালু ছিল এবং তাঁরা এই দেশকে তাঁদের স্থায়ী বাসস্থান হিসেবে গ্রহন করেছিল। আস্তে আস্তে তাঁরা এই এলাকার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে যা ইসলাম ধর্মের বিস্তারে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। সাথে সাথে অনেক আধ্যাত্মিক নেতা ধর্ম বিস্তারে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। যদিও অনেকেই সমালোচনা করেন যে ইসলাম ধর্মের বিস্তারে শাসক গোষ্ঠী তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, কিন্তু ইতিহাসে আদৌ এর কোন প্রমান পাওয়া যায় না। বরঞ্চ ঐ সময়কে ইতিহাসবেত্তারা উপমহাদেশের স্বর্নালী যুগ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে সেই সময়ের উপমহাদেশ ছিল পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধশালী অঞ্চল।

উপমহাদেশে ব্রিটিশদের রাস্ট্র ক্ষমতা দখল ধর্মান্ধতার প্রধান বীজ বপন করে। যেহেতু ঐ সময়ে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ততায় ভরপুর ছিল, সেহেতু খ্রিস্টান ইংরেজরা এই সুযোগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাঁদের হিংসার ষোলকলা পূর্ন করার সুযোগ পেয়ে যায়। খ্রিস্টানরা তাঁদের ধর্মান্ধ ধর্মযুদ্ধকে এই অঞ্চলে আভ্যন্তরীণ ভাবে উসকে দেয়। অন্যদিকে মুসলমানরাও ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদেরকে শত্রু হিসেবেই বিবেচনা করতে থাকে। এর সাথে ছিল তাঁদের মাত্রই ক্ষমতা হারানোর ক্ষোভ। অন্যদিকে হিন্দুরা তাঁদের সাদরে গ্রহন করেছিল। তাঁরা একে মুসলমানদের উপর তাঁদের বিজয় হিসেবে বিবেচনা করে(কিন্তু এটা সকল হিন্দু জনগোষ্ঠীর জন্য প্রজোয্য নয়)। তাঁরা ইংরেজদের পূর্ন মাত্রায় সহযোগীতা করে এবং তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সহজভাবে গ্রহন করে। অন্যদিকে মুসলমানরা ব্রিটিশদের পরিহার করে। ফলে সমাজে স্পষ্ট দুটি বিভাজন তৈরী হয়- হিন্দু পক্ষ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে মুসলমানদের থেকে অনেক এগিয়ে যায়। এর জন্য প্রধানত মুসলমানদের ধর্মান্ধতাই দায়ী। তাঁরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ব্রিটিশদের থেকে দূরে সরে গিয়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা ও পড়াশুনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর হিন্দুরা এর পূর্ন সদব্যবহার করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানদের উপর হিংসাত্বক আধিপত্য বিস্তার করে। ব্রিটিশ ও হিন্দুদের সূক্ষ্ম নির্যাতনে মুসলমানরা চরম গোড়ামী ও অর্থনৈতিক গ্লানিতে নিমজ্জিত হয়ে পরে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক দূরাবস্তাকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশরা খ্রিস্টান পাদ্রীদের খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারে লাগিয়ে দেয়। এই এলাকায় ইসলামের দ্রুত বিস্তার ঘটার সাথে সাথে ইসলামী মূল্যবোধ সেভাবে বিকাশ লাভ করেনি, এর অন্যতম কারন ছিল ভাষা ও পর্যাপ্ত ইসলামী পৃষ্ঠপোষকদের অভাব। এক্ষেত্রে বলা যায়, তাঁরা নাম মাত্র ইসলাম পালন করত কিন্তু তাঁদের আচার আচরন ছিল আগের মতই এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁরা খুব কমই জানত। কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান তাঁদের মাঝে খুব কম মাত্রায় ছিল। তাঁরা একে গড়পড়তা ধর্ম হিসেবেই পালন করত । কিন্তু একে তাঁরা তাঁদের জীবন বিধান হিসেবে গ্রহন করতে পারেনি যার কারন ছিল কুরআন ও হাদিসের প্রকৃত জ্ঞানের অভাব। যার ফল স্বরূপ তাঁদের মাঝে জ্ঞানের স্বল্পতা থেকে ধর্ময়ান্ধতা দানা বাঁধে। তাঁরা নানা প্রকার ধর্মীয় কুসংস্কার গড়ে তোলে। এর মাঝে অন্যতম হল নারীর প্রতি অবহেলা এবং তাদেরকে অনেকটা পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞান থেকে দূরে সরে থাকা এতে আরও জ্বালানির যোগান দেয়। এখানে অবশ্য একটা বিষয় বলে রাখা ভালো, ব্রিটিশরা খ্রিস্টানদের ধর্মযুদ্ধের ধর্মান্ধতা এখানে তেমন একটা প্রয়োগ করেনি। বরঞ্চ তাঁদের মাঝে ব্রিটিশ জাতীয়তাবোধটাই বেশি কাজ করেছে। তথাপি ছলে-বলে গরিব জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করার ইতিহাসও উজ্জ্বল্ভাবে জলজল করছে। যদিও স্বাভাবিকভাবেও খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহন করার উদাহরন রয়েছে। কিন্তু তা খুবই নগন্য।

এবার আসা যাক আরেকটি ধাপে, এই ধাপের সূচনা হয় মুসলমানদের পশ্চাদপদতা থেকে। আধুনিক যুগের ভারতীয় উপমহাদেশ রাজনৈতিক সচেতনায় নতুন দিগন্তে পা রাখে। হিন্দুরা(ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, হিন্দু নামটি আসলে সিন্ধু নদীর তীরবর্তী জনগোষ্ঠীদের ডাকা হত এবং এই নামে আগে কোন ধর্ম ছিল না। পরে ব্রিটিশ আমলে এই জনগোষ্ঠীর সনাতন ধর্ম হিন্দু নামে পরিচিতি নাভ করে) এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে ছিল। তবে মুসলমানদের মধ্যে এরেই মধ্যে সচেতনতা জেগে ওঠে এবং তাঁরা স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারায় যুক্ত হয়। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে তাঁরা দেখতে পায় যে, হিন্দুরা তাঁদের উন্নয়নে তেমনভাবে আগ্রহী না(মুসলমানরা তখন হিন্দুদের থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল)। এই চিন্তা থেকে তাঁরা মুসলিম লীগ গঠন করে। আস্তে আস্তে তা হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে চরম পার্থক্য গড়ে তোলে। ক্রমেই মুসলমানরা ধর্মান্ধ হয়ে পরে। এতে হিন্দুদের দোষ ছিল ব্যাপক। বঙ্গ ভঙ্গ রদে হিন্দুদের জীবন পন লড়াই এই অঞ্চলের মুসলমানদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করে যে হিন্দুরা তাঁদের শত্রু। হিন্দুরা নিজেরা সুবিধা লাভের আশায় এই অঞ্চলের মুসলমানদের প্রানের দাবী বঙ্গভঙ্গ কে রদ করে। যদিও হিন্দুরা বাংলা ভাগের দোহাই দিয়েছে, কিন্তু আসলে তা ছিল অনেকটা হাস্যকর বিষয়। এই ধর্মান্ধতায় যোগ দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। আমাদের জাতীয় সঙ্গিত এই প্রেক্ষাপটেই লেখা হয়েছিল। অথচ বঙ্গভঙ্গ রদ এই অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে অনেক পিছনে নিয়ে গেছে। এজন্যই অনেকেই এই গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহন করার বিরোধিতা করে। তবে এতে ধর্মান্ধতাও থাকতে পারে। বঙ্গভঙ্গের রদের ফলে এই অঞ্চলের অধিবাসীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে যার প্রশমনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা হয়। যেই হিন্দুরা বাংলাভাগের দোহাই দিয়ে এই অঞ্চল মানে বাংলাদেশকে তাঁদের দাস করে রেখেছিল(কারন তখন শিক্ষা বানিজ্য সব কিছুই কলকাতা কেন্দ্রিক ছিল যা হিন্দুরা কুক্ষিগত করে রেখেছিল)। মজার বিষয় হল, যে হিন্দুরা বাংলাভাগের তথাকথিত মিথ্যা দোহাই দিয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ করেছিল সেই হিন্দুরাই ভারতভাগের সময় অবলীলায় এই অঞ্চলের সাথে পশ্চিম বাংলাকে যুক্ত করতে অস্বীকার করে। অথচ তখন বাংলাকে অখন্ড রাখতে পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা অনেক চেষ্টা করেছে। এমনকি তিনটি রাষ্ট্রের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল যার তৃতীয় দেশ দাবি করা হয়েছিল বৃহত বঙ্গদেশকে নিয়ে। কিন্তু হিন্দুরা মানে পশ্চিম পাকিস্তান ভারতের সাথেই থাকতে বদ্ধ পরিকর ছিল । আর এর মূল রসদ ছিল ধর্ম ও ধর্মান্ধতা। বঙ্গভঙ্গ থেকে জন্মলাভ করে মুসলিম ধর্মান্ধতা। তখন থেকেই তাঁর ভাবতে থাকে হিন্দুরা তাঁদের সবসময়ই বঞ্চিত করে রাখবে। এর বর্হিপ্রকাশ ঘটে ৪৭ এর দেশ বিভাজনে। যদিও এর মাঝে হিন্দুদের কিছু মহান নেতার আবির্ভাব ঘটে যারা জাতীয় চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু মুসলিম নেতাদের ধর্মান্ধতা ৪৭ এর মর্মান্তিক বাস্তবতার সৃষ্টি করে।

(কিছুদিন আগে শ্রদ্ধাভাজন স্যার ও লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের একটি কলামে ফুটে উঠেছে সেই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি বলেছিলেন যে এই জামাত ৪৭ এর দেশ ভাগের বিরোধি ছিল। তাঁর মানে কি সে ৪৭ এর দেশ ভাগের পক্ষে ছিল। যদি তাই হয় তবে তা তাঁর সাপ্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। কারন, এটা ইতিহাস থেকে প্রমানিত যে তখন ভারতে জাতীয়তাবাদ ছিল প্রখর এবং ধর্মীয় আগ্রাসন বা বৈষম্য তখন ছিল না। ওটা ছিল কেবল মুসলিম নেতাদের সৃষ্টি। তখন গান্ধীজীর মত নেতা আপ্রান চেষ্টা করেছে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ধরে রাখতে। কিন্তু মুসলিম ধর্মান্ধতা সেই সুন্দর দেসাত্ববোধকে ধ্বংস করেছিল।)

সেই ধর্মান্ধতা বহু যুগের ভারতীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছিল এবং হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটেছিল। যা আজ পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মুসলিম- হিন্দু সংঘাতের স্থায়ী রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে।

এরপর আসে আর একটি মর্মান্তিক বাস্তবতা, পশ্চিম পাকিস্তান স্পষ্টভাবে পূর্ব পাকিস্তানীদের তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাঁদের দাস বানিয়ে রেখেছিল। যদিও শেষের দিকে তাঁরা চেষ্টা করেছিল এর পরিবর্তন করতে কিন্তু এখানেও মূল খলনায়ক ছিল ধর্মান্ধতা। পশ্চিম পাকিস্তানিরা এই অঞ্চলের মুসলমানদেরকে প্রকৃত মুসলমান মনে করত না, এই অঞ্চলের মুসলমানরা ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে ইসলামী রীতিনীতি শিথিলভাবে পালন করত। যা দিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য করা যায় না।যার ফলে পশ্চিমারা সন্দেহ করে যে এরা ভারতীয় সমর্থনপুষ্ট। সাথে যুক্ত হয় তাঁদের অগনতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং গোড়ামী। যার ফলে শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই। তখনি এদেশের একটি পক্ষ ধর্মান্ধতায় মেতে ওঠে। তাঁরা এদেশের মানুষের যৌক্তিক লড়াইকে ধর্মান্ধতায় বেঁধে দেয়। অথচ পাকিস্তান কখনোই ইসলামী মতাদর্শে চালিত হত না। কেবল জনসংখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকেই একে মুসলিম রাষ্ট্র বলা যেত। অথচ সেই ইসলামী রাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে তাঁরা প্রকৃত অবস্থা ভুলে গিয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাজার বৈষম্যকে তাঁরা ধর্মের দোহাই দিয়ে অস্বীকার করেছিল। ভারতও তাঁর স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এই সমস্যার সমাধান চেয়েছিল বিভাজনের মাধ্যমে।

সেই সময়ের একটি পক্ষের সেই ধর্মান্ধতা আজ ইসলামকে খলানায়কের ভূমিকায় অবতির্ন করতে এই পক্ষের বিরোধীদের রসদ যোগাচ্ছে। যারা ইসলামকে সাম্পদায়িক আখ্যা দিয়ে তাঁদের নিজের মতের উগ্রপন্থাকে উসকে দিচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সেই ধর্মান্ধতা ও অগনতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আজকের যুদ্ধ কবলিত পাকিস্তানের সৃষ্টি করেছে।

আজকের বাংলাদেশে এই ধর্মান্ধতার চিত্রটি অন্যরকম। সংখ্যালঘু কিছু হিন্দু, ধর্মের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তার বাহিরে গিয়ে ভারতীয় সখ্যতাকে বিনা ভাবনায় গ্রহন করে। অন্যদিকে, একই ভাবে কিছু মুসলিম মনে করে কিছু হিন্দুরা ভারতীয়দের সাথে যোগাযোগ রেখে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে গিয়ে কাজ করে বা সাপোর্ট করে। এই দুই ধারনাই সঠিক। এর মূল কারন হল, উভয়পক্ষের ধর্মান্ধতা। জাতীয় চেতনাবোধ সৃষ্টির ব্যর্থতা ও এর জন্য দায়ী। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে সাপ্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু এখানে ধর্মের চেয়ে পলিটিকাল ভন্ডামীই এর প্রধান অন্তরায়, যা জাতীয় স্বার্থকে পদদলিত করছে।
এর বাহিরে জামাত ইসলামী বাংলাদেশ ধর্মের দোহাই দিয়ে তাঁদের পুরনো রাজনৈতিক দল ধ্বংস না করে সেই নামই ধরে রেখেছে। আবার ধর্মের দোহাই দিয়ে সেই সময়ের স্বাধীনতা বিরোধীদের আজও তাঁদের দলে উচ্চ আসনে বসিয়ে রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে তাঁদের ধর্মান্ধতা ইসলামকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে। আর অন্য উগ্রপন্থী ভিন্নমতাবলম্বীরা ইসলামকে তাঁদের আক্রমনের লক্ষ্যবস্তুতে সহজেই দাড় করাতে পারছে। ফলশ্রুতিতে ঘটে যাচ্ছে গতকালকে থাবা বাবার সৃষ্টি ও হত্যার ঘটনা আর এতে ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার মত ইস্যু।
আজকের এই ঘটনা হল কিছু জনগোষ্ঠীর ধর্মান্ধতার ফল। আমি নাস্তিকতাকেও একটি ধর্ম মনে করি। কারন তাদেরও একটি বিশ্বাস আছে আর তা হল সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বহীনতার বিশ্বাস। তাদেরকে আমি আলাদাভাবে মূল্যায়ন করি না। আর বর্তমানে ধর্মের অন্ধতার সাথে সাথে অধর্মের অন্ধতাও ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এই নতুন ধর্মের অন্ধতার প্রধান কারন হল অন্য ধর্মের অন্ধতা বা আগ্রাসী মনোভাব। সামজিকভাবে নাস্তিকদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা এর প্রধান রসদ।

বর্তমান পৃথিবীতে একটি দেশের দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে জাতীয়তা কেন্দ্রিক। ফলে প্রথমত দেশের মানুষের মধ্যে একটি কমন মিল বন্ধন তৈরি হবে। এরপর দূর করতে হবে ধর্ম ও অধর্মের উগ্রতা। এর জন্যে, ধর্মীয়দেরকে তাঁদের ধর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান আহরন করতে হবে। কারন, প্রকৃতপক্ষে কোন ধর্মই ধর্ময়ান্ধতার পক্ষে নয়। বরঞ্চ, ধর্মীয় শিক্ষা হ্রাস ধর্মান্ধতাকে উসকে দিতে পারে। সাথে সাথে নাস্তিকতাকে ও একটি ধর্ম বিবেচনা করে তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। অন্যদিকে, অধর্মের জনগোষ্ঠীকে মানবিক দৃষ্টভঙ্গি বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষ একটি মানবিক স্বত্বা, কোন যন্ত্র নয়। তাঁর মন এমন এক জগত যা তাকে আলাদা একটা স্বত্বা দেয় যা স্বাধীন ও অনুভূতি প্রবন। আর বিশ্বাসের জায়গা সবসময়ই যুক্তিহীন। আর নিশ্চিত করে কেউ মৃত্যুর পরবর্তি জীবন সম্পর্কে জানে না, বিজ্ঞান ও নয়। যুক্তি দিয়ে এক পাল্লা থেকে অন্য পাল্লা ভারী করা যায় কিন্তু সত্যিকার ফলাফলটা বিশ্বাসে এসেই পাওয়া যায়। যার অর্থ যার যার বিশ্বাস তাঁর তাঁর।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×