আমার ঘরের ঠিক মাঝখানটায় গতো দুদিন ধরে একটা কালো গোলাপ ফুটে আছে। গোলাপের সুঘ্রাণে আমার চারপাশে তৈরি হচ্ছে এক অদৃশ্য বলয়। আমি এখন আর স্টোর রুম থেকে জোর করে তৈরি করা দশ বাই দশ শোবার, কাম কাজের, কাম পড়ার, কাম "পারলে এখানেই মরে পড়ে থাকার মতো" বদ্ধ স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটায় থাকি না। আমার সামনে, পেছনে, দুদিকের দেয়াল গুলো সেই সুঘ্রাণের এক দমকায় চিনে কাগজের মতো পতপত করে উড়ে সরে যায়।
কালো গোলাপের ঘ্রাণ আমাকে ভাসায়, বসরার কোন এক রাজকীয় গোলাপ বাগানে পারস্যের শেহজাদা তখন আমার সাথে স্থান বদলায়। আমি মখমল আর পাহাড়ি মকরের বুকের নরোম ছালে বুটি তোলা নাগরা শিশিরে ভিজিয়ে পায়চারি করি, আর বারবার মুখ তুলে তাকাই দারিউস এর মহলের ঝরোকায়। একবার, একবার যদি সেই চকিতে দেখা দীঘল কুন্তলের শেহজাদী আসে? একবার সেই সুগন্ধী ধূপের সুবাস দেয়া কেশরাজী ঢেলে দেয় যদি রোদে? যদি গোলাপ দেখতে একবার এসে ঝরোকায় দাঁড়ায় ?
আমার বুকের কাছটায় মনে হয় প্রজাপতি ছুঁয়ে যায়, অথবা গোলাপের আঁচড়, আমি সবর রাখতে ভুলে যাই, আমি পলক ফেলতে ভুলে যাই। আমার আঙুল কালো গোলাপ ছোঁয়, না কালো একরাশ স্বপ্ন, নাকি কালো চুলের নহরে আমি ভেসে যাই, আমি জানি না। আমার দিগন্ত জোড়া কালো গোলাপের সমুদ্র, মোহতারমার কালো কেশ আর কালো গোলাপের ঘ্রাণ মিশে একাকার হয়ে যায়, বসরার এক কুন্তলা শেহজাদীর ইশকে আমি তখত ছেড়ে কয়েস হয়ে যাই।
মাঝে মধ্যে আমি হাতের তালুতে বসাই ওটাকে। ফুলস্কেপ কাগজে পেন্সিল চালাতে চালাতে আড় চোখে তাকাই, আমার কব্জির পাশেই বইয়ের তাকের ওপরে বসে আছে একটা রাজকীয় কালো গোলাপ। ধীরে ধীরে টলে উঠছে পাঁপড়ি গুলো, সুঘ্রাণ ক্ষয়ে গেছে অনেকটাই। একটা একটা মুহূর্তকে আমার দুশমন মনে হয়, প্রতি পল কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে আমার শেহজাদীর সুবাস...
আরও কয়েক দিন পর, ঘ্রাণশুন্য কালো রঙের একটা চুলবিনুনীর ফিতেকে আমার বইয়ের তাকের উপরে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।