অনেক বছর আগের দুই দেশ। হাজার মাইল দূরে দুরে। কত হাজার সেটা জানার উপায় নেই। প্রথম দেশটিতে কয় বিঘত মাটি। হিসাবে দরিদ্র। তেমন শস্য নেই, মাটির তলায় সোনার মুদ্রা নেই। গীর্জা আছে, কড়া আইন আছে, কিন্তু গায়ে পরার জামাটা নোংরা। সেই দ্বীপ সমুদ্রের পারে বসে দশ বারো জন একটা কাঠের নৌকা বানানোর চেষ্টা করছে। একটা বজ্রা নৌকার মত। সঞ্চিত যা আছে তা দিয়ে কাল রঙ কেনা হল। নিজেরাই কাঠ চিরেছে। নিজেরাই মিলে লোহার পাত গরম করে লাগাচ্ছে নৌকার তলায়। ডানে ও বামে পেরেক হাতুড়ি দিয়ে পোক্ত করার চেষ্টা। এই নৌকায় মাস্তুল বসানোর চেষ্টা করছে। ওটা বানিয়ে হাতে লেখা মানচিত্র ধরে ধরে দুর দেশে যাবে ব্যবসা করতে। মাইকেল কিন্তু প্রথম না। মার্কোসও না। এরকম আরো অনেকগুলো নৌকা বের হয়েছে। চার সমুদ্রে বেরিয়ে পড়েছে। এদের চোখে হতভাগা দরিদ্র মানুষ হওয়া সত্তেও অনেক স্বপ্ন। সমুদ্রের সাদা ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। কঙ্কাল আর পাথর শুয়ে আছে ক্ষুধা এবং প্লেগের আশঙ্কাতে।
দ্বিতীয় দেশটিতে উর্বর সবুজ মাটি। রাজার জন্য নহবত সানাই বাজছে। বাঈজীর নূপুর বাজছে মিঠে সুরে। মার্বেল পাথর কেটে সমাধী বানানো হচ্ছে রাণীর কবরে। ইট পাথরে দালান উঠছে। পুকুরে যে মাছ তা শুধু ধরতে বাকি। নদীর ভিতর নদী। একজন ছিল সে বলল,
"অলকেশ আয় সমুদ্রে যাই। ঐ পারের দেশে যাবো।
"আমাদের জাহাজ নাই। আমরা চাষা"
"আয় সবাই মিলে কাঠ কাটি। মিস্ত্রি ডাকি"
অলকেশ হাসে আর বলে, "আমরা কি করবো ঐ সমুদ্রে গিয়ে? দেশ আছে দেশেই থাকি। মাটিতে শস্য বুনে দিয়ে আকাশে তাকিয়ে থাকি।ঘুমাই খাই দাই। চান্নি পসর রাত দেখি"।
"কিন্তু এই আয় উপার্জনে চলে না। যদি একটা জাহাজ বানায়ে যাই অন্য দেশে.."
"অন্যদেশে কি হবে", অলকেশ বিদ্রুপ করে। জাহাজের কথা বিদ্রুপ করে রহিমুদ্দিন, কলিম শেখ। বলে আদার চাষীর জাহাজ লাগে না। অলকেশেরা বোকা সে মানুষের কথা বলে দেয় সবাইকে। অঞ্চলের সবে বলা বলি করে, হাসা হাসি করে।
তার কয় মাস পরেই হাজার মাইল দূরের দেশ থেকে জন মার্কোস এসেছিল দ্বিতীয় দেশে ব্যবসা করতে। তাদের মত আরো আরো অনেক মাঝি জাহাজের নোঙর ফেলেছিল। তারপর জাহাজীর একটা দল উপমহাদেশই দখল করে ফেলল। একাউন্টিং এর সূত্র অনুসারে অর্থ চলে গেল। অভাব আসলো। দরিদ্র দেশটির লোক হয়ে গেল ধনী। সফলা অলকেশের দেশ হয়ে গেল ভুখানাঙ্গা।
এখনো এখানে বড় কিছু করতে গেলে অলকেশেরা বলে, কি লাভ। যদি নতুন করে একটা জাহাজ বানানোর কথা ভাবা হয়। যেটা দিয়ে বিশ্ব জয় করা যাবে। কলিম শেখ চায়ের ছাপড়ায় আলাপ করে তাদের গ্রামের অন্যদের সাথে। হাসির ব্যাপার। বামুন হয়ে বিশ্ব জয় করতে চায়! তারচেয়ে চাঁদের আলোয় কঙ্কাল হয়ে শুয়ে থাকো পাটিতে। গীর্জার বদলে মসজিদ উঠেছে হাজারো। মহিলারা ঢুকে পড়ছে অন্দরে ফের। আর অলকেশ কলিম শেখেরা বলে জন্মেছি মরে যাবার জন্য। খাদ্যগ্রহণ, রেচন আর প্রস্বেদনের জন্য। কি লাভ এই জীবনে তার চেয়ে বেশি ভেবে।
-
ড্রাফট ১.২