বিতি বিরক্তিতে ডাকল – দেখো না বাবা এইটুকু জায়গায় , পা ফেলা যাচ্ছে না তাও কত পিঁপড়ে । তিলতলায় এরা এল কি করে ?
বিতন এসে দেখেই বলল – কাল সন্ধ্যের বেলা কে সন্দেশ খেয়েছিল ? ওরা তো এসেছে সেগুলো ঝাড়পোচ করে দিতে ।
বিতির রাগ কমে না – তুমি কথা ঘোরাতে পারো বেশ । দু একটা কামড়ে দিল সে খেয়াল আছে ।
ব্যাস দৌড়ে চলে এল বিহীনা – তুমি কি গো ঝুঁকে পিঁপড়ে দেখছো আর ছেলেটার পায়ে একটু হাত বুলিয়ে দিলে না ।
বিতনের সে খেয়াল নেই । দেখছে পিঁপড়ে কিভাবে কত বড় সন্দেশের টুকরোটা অনায়াসে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । বিতির দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে বিতন বলল – এরা একটুও দাঁড়ায় না চলতেই আছে চলতেই আছে । কাজ পেল তো ভাল না পেলো তো কাজ খুঁজতেই আছে । বেশ কর্মঠ ।
বিহীনা রেগে যায় – এমন ভাবে বলছো যেন ওরাই দেশ দশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । ওরা না থাকলে আমরা পিছিয়ে পড়তাম । আর ছেলেটার দিকে খেয়ালই নেই ।
এবার বিতন উঠে দাঁড়াল – আচ্ছা বুতু তোমার এখন বারান্দায় কি শুনি ? সকাল আটটা বাজল মুখ হাত ধুয়ে পড়তে বসার নাম নেই কেন শুনি ?
- ছেলেটার পা টা ফুলে গেছে । আহারে ! সে খেয়াল নেই শুধু পড়া আর পড়া ।
- তা না । আসলে ঘরোয়া পিঁপড়ের কামড়ে কিছু হয় না । আমরা ছোটবেলা দু একটা পিঁপড়ে খেতাম যাতে কর্মকুশলী আর সাঁতারু হতে পারি । পিঁপড়ে ডিম দিয়ে মাছ ধরতাম ।
বিতির নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাই আরো বিরক্তিতে বলল – বাপি , পিঁপড়ের আর পিঁপুড়ি বাজাতে হবে না। আমি পড়তে বসছি।
বিতি চলে গেল পড়তে। বিহীনা রান্নাঘরে আর বিতন ডেচকিতে ভরা খাবার নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল – আসছি । আজ ফিরতে একটু দেরি হবে ।
ঘরের ভেতর থেকে মা ছেলের আওয়াজ এল – ঠিক আছে । সাবধানে যাবে ।
বিতন সবে রাজমিস্ত্রীর কাজ ধরেছে । সিমেন্ট মেশানো মশলা ছাদে তুলতে তুলতে পাশের মদন প্রশ্ন করে – কি বিতুদা ? রাতদিন কাজ করছ যে । কত কাজ ধরলে ছাড়লে শেষে এখানে যে ভাবে শুরু করেছো তাতে মনে হয় তোমার শরীর ভেঙে পড়বে ।
বিতনের সত্যি আজকাল একটু বেশি কষ্ট হচ্ছে। বলে – কি আর করা যাবে ? ছেলেটা বড় হচ্ছে মানুষ করতেই হবে ।
পাশে জিতেন ছিল। রসিকতা করল – কেন ? তোমার ছেলে গরু না গাধা ?
সবাই হো হো করে হেসে উঠে । বিতন জবাব দেয় – না রে ভাই । বয়স কম ছিল অনেক বাঁদর নাচ নেচেছি । বলতে নেই ছেলেটা আমার পড়াশুনায় দারুণ । তাকে আরো উপরে তুলতে আমাদের শ্রমের কোন বিকল্প নেই। আমরা অনেকেরই ডিগ্রী আছে। চাকরী নেই। কিন্তু এই শ্রমের কাজ তো আছে। তাকে ভালোবাসলে কত কি না হয় !
পিছনে লেবার কন্ট্রাক্টর মোহিতবাবু দাঁড়িয়েছিল। হাততালি দিয়ে এগিয়ে এল – এই হল শিক্ষিত আর মূর্খের তফাৎ। কিছু পড়াশুনা আছে বলেই না বিতন খুব কাজের। কোন কাজই যে ছোট নয় বিতনকে দেখে আমিও বুঝতে পারি। ওই দেখুন চারিদিকে লাখো লাখো ইমারত। বিতনের মত মানুষ না থাকলে এসব কবেই ভেঙে পড়ত। আর সবাই শুনুন আজকে পেমেন্ট নিয়ে যাবেন।
রাতে ফিরে এই ক’টা টাকাতেই বিতন বিহীনা আর বিতির মুখে শ্রমের উজ্জ্বল হাসি কতটা চওড়া হয় তা মাঝে মাঝে আমাদেরও চোখে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:২১