আমি ছোট কিছু ছেলে মেয়েকে রাজাকারদের পোস্টার আঁকার জন্য উৎসাহিত করছিলাম। একটা মেয়ে ক্লাস ৭ম শ্রেণীতে পরে। জানতে চাই টিভি দেখেছে কিনা,ঢাকা শাহবাগে যে লক্ষ মানুষ একত্র হয়ে আন্দোলন করছে জানে কিনা। তাকে বিকালে একটা পোস্টার নিয়ে শহিদ মিনারে আসতে বলি।সবাই স্লোগান দিবে রাজাকারের ফাঁসি চাই। মেয়াটা হঠাৎ বললে ফেলল মাকে নিয়ে আসব , বাবা তো বিএনপি করে তাই আসবে না। মেয়েটার বাবা সামনেই দাঁড়ানো ছিল।এই কথা শুনার পর লজ্জায় তার মুখটা লাল হয়ে যায়। এই রকম লজ্জা নিশ্চয় বিএনপির অনেক লোকের ই হচ্ছে।
কিছু ব্লগ এবং ফেসবুকে কিছু কথা চোখে পড়ল। শপথে আওয়ামীলীগের নাম কেন নেয়া হয়েছে । কেন বিএনপিকে রাজাকারদের সমর্থক বলে বাতিল করা হয়েছে।আন্দোলনে বামরা কেন আসছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এরা যে সবাই ভাল রাজনীতি বুঝে কমেন্ট করছে এমন নয়। একটা কিছু বলা দরকার তাই বলছে বলেই মনে করি। আর এক বান্দর তো এই আন্দোলনের শুরু থেকেই লাফালাফি করে বিরোধিতা করছে। কেন কারনে যদি আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায় তখন বান্দর তিনগুন জোরে লাফিয়ে বলতে থাকবে " আমি আগেই কইছিলাম....'
এই সব বাল ছাল আজ নতুন নয়। যত আন্দোলন হয়েছে, যত সংগ্রাম হয়েছে,যত বিপ্লব হয়েছে এমন শ্রেণির মানুষ ছিল, আছে এবং থাকবে। তাদের সমালোচনা অগ্রাহ্য করেই আন্দোলন করতে হয়। সকল বাধা উপেক্ষা করেই সংগ্রাম চালিয়ে নিতে হয়। আর যে লক্ষ তরুন এই আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেছে তাদের এই মনোবল আছে বলেই মনে করি। কিছু কুট কথা,ছিদ্রান্বেষী উস্কানি এসব দিয়ে তাদের এই দৃঢ় মনোবল টলাতে পারবে না।
প্রসঙ্গে আসি। বিএনপি নিয়ে কথা বললে এখন কারো গা জ্বলে। কিন্তু স্পষ্ট করে কোন বিএনপি সমর্থকই বলতে পারে না, এই আন্দোলনে বিএনপির অবস্থান কি? তারা কি এই আন্দোলনের পক্ষে নাকি বিপক্ষে? আওয়ামীলীগ যেমন যুদ্ধপরাধীদের নিয়ে পলিটিক্স করে ধরা হয়েছে, আর বিএনপি নতুন নিরপেক্ষ পলিটিক্স করে জনগন থেকে যে বিচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে এটা তাদের খেয়াল হয় না। কেন এই নিরবতা? বিএনপি একটা বড় দল তাদের দেশ জুড়ে এত সমর্থক,এত ভোট থাকার পরেও তারা নিরব কেন? সাহস করে বলুক যে তারা যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায়। একটা অন্তত মানব বন্ধন করুক যে বিএনপি বিচার চায়? তাহলে আমরা কি ভাবে বুঝব যে তারা বিচারের পক্ষে? মুখে কুলুপ আটার মানে কি? মাঝে মাঝে বলতে শুনা যায় তারাও বিচার চায়। কিন্তু তারা ক্ষমতায় গেলে বিচার করবে এমন কোন প্রতিশ্রুতি কখনো দেয় না। বিএনপির নেতা , সমর্থকদের বোকা বানাতে পারলেও দেশের মানুষকে তো আর বোকা বানাতে পারবেনা।
শাহবাগের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অনেক দল,অনেক মতবাদকেই নতুন করে দেখতে হচ্ছে। আমি আগে মনে করতাম বিএনপির মাঝেও একটি প্রগতিশীল অংশ আছে যারা যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায়। জামাতের সাথে বিএনপি জোট করার সময় ছাত্রদলের বিরোধিতার মুখে পড়েছিল। আমি মনে করেছিলাম ছাত্রদল এই আন্দোলনে সমর্থন দেবে। কিন্তু আশা হত হলাম এই ইস্যুটা নিয়েও বিএনপি পুরনো অবস্থান ফেলে একটা শক্ত অবস্থান তৈরী করতে পারতো। এই প্রজন্মকে সমর্থন দিয়ে তার অতীত পাপের কিছু প্রায়শ্চিত্ত করতে পারতো। কিন্তু বিএনপি এত বেশি মাথা মোটা মানুষ নেতৃত্বে আছে যে এই কাজটি তারা পারেনি।
আওয়ামীলীগ এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে,সমর্থন না দিয়ে তার আর কিছু করার ছিলনা। কারন বিএনপি নিরব থাকতে পারে কিন্তু আওয়ামীলীগের পক্ষে নিরব থাকা কোন ভাবেই সম্ভব ছিলনা। তার অস্তিত্ব বাঁচাতেই সে সরব হয়েছে। তারাও সূক্ষ ভাবে এই আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থকতা হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করেছিল। সফল হয় নাই,হানিফ,মহিউদ্দিন লাঞ্চিত হবার পরেও ব্যপারটা নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না। আর যুদ্ধপরাধী ইস্যুতে আওয়ামীলীগ সমর্থন দিলেই একটা আন্দোলন তার আসল চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবে এমন ভাবার কোন কারন নাই। এক ব্লগার লিখেছেন " আজকে যে শপথ পাট করানো হলো সে যদি আওয়ামীলীগের হয়, হতে পারে, কিন্তু বিএনপি যদি এখানে আসত তবে তো এই শপথ বিএনপিও পাঠ করতে পারতো...। " আমিও মনে করি তা পারতো। কিন্তু তারা সামনে আসবে না, সমর্থন দিবে না, আবার সমালোচনা করার বেলায় জোর গলায় বলবে।
এই যে লক্ষ তরুন শাহবাগে এবং দেশের প্রতিটা অঞ্চলে জড়ো হয়েছে, এখানে কি বিএনপির ভোটার নাই? এখানে কি ছাত্রদলের কোন সমর্থক নাই? যদি থেকে থাকে তবে তারা দলের আচরণের জন্য আজ কি লজ্জা বোধ করবে না? বিএনপি তো জামাতের মতো ঐতিহাসিক স্বাধীনতা বিরোধী কোন দল নয়। তাদের দলেও মুক্তিযোদ্ধারা আছে তারা কি করে মুখ দেখাবে? বিএনপি এখন মুখ খুলেছে এবং বুঝতে পারলাম তারা জামাতের কাছে কেবল নেতৃত্বই বন্ধক দেয় নাই বিবেকও বন্ধক দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৮