মুভিঃ অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ - নৃশংসতার শৈলী ও সেক্স এন্ড লুসিয়া - যৌনতা এবং মৌনতার হাঁ এর গল্প!
অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ
মুভিটি দেখার পর সচরাসচর দর্শকরা দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়ঃ একদল এই মুভিকে সর্বকালের সেরা মুভির একটি ভাবেন, আরেকদলের কাছে সবচেয়ে বাজে মুভির গুলোর একটা।
আমার অবস্থান প্রথম দলের, এ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ মুভিটি এলেক্স ডি লার্জ নামের এক কিশোর তরুন যে বেথোভেন আসক্ত, চরম মাত্রায় ভায়োলেন্ট এবং তার গ্যাং এর গল্প। যাদের কাজ রাতের বেলায় অনর্থক মারামারি কিংবা নির্জন কোন বাসায় গিয়ে কোন নারীর উপর হামলে পড়া - ওদের ভাষায় ওল্ড আল্ট্রা ভায়োলেন্স।
গ্যাং মেম্বারদের বিশ্বাসঘাতকার জন্য এলেক্স যখন জেলে নিক্ষিপ্ত হন, তখন তাকে লুডোভিকো 'চিকিৎসা'র মাধ্যমে স্রেফ করুণাযোগ্য চরিত্রে পরিণত করা হয় যার ফলে পুরো মুভিটি সফল মানবিক কমেডির রুপ পেয়েছে।
রাষ্ট্র মনস্তাত্ত্বিক শর্তারোপের মাধ্যমে কয়েদীদেরকে সংশোধন করার যে নৃশংস সুবিধাবাদী প্রকল্প হাতে নেয় তা প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের অমানবিক এবং ধান্দাবাজির আরেক রুপ যা প্রকাশ পায় শেষ দৃশ্যে যেখান এলেক্স বলেন - 'I was cured all right যা এলেক্স ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সন্ধির ঘটনার দিকে ইংগিত করে।
রাষ্ট্র নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থেই সমাজের সবচেয়ে হিংস্র এবং সহিংস মানুষদের উপর অন্য সবাইকে নিয়ন্ত্রণের ভার ন্যস্ত করে এমন মেসেজও পাই আমরা। সমাজ ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সুবিধাবাদী মুখোশের দিকে এমন রুপক ব্যাঙ্গাত্মক ইংগিত কুবরিকের পক্ষেই দেখানো সম্ভব।
রঙ এর ব্যবহার, রুপকার্থে ব্যবহার করা বিভিন্ন অনুষজ্ঞ - দৃশ্যায়ন যেভাবে করেছেন স্ট্যানলি কুবরিক তা মুভিটিকে কবিতায় রুপান্তর করেছে। লাল এবং নীল রঙ এর যে আধিক্য পর্দা জুড়ে - সেই লাল রঙ হচ্ছে ভায়োলেন্ট এর প্রতীক আর নীল রঙ এলেক্স চরিত্রের সুগভীর বিষণ্ণতার চিহ্ন।
মুভিতে এলেক্স চরিত্রের দুটো ভাগঃ প্রথমে হিংস্রতার নান্দনিক শৈলী , সবশেষে বিকারহীন সুস্থতা! দুটো রুপকেই কি অনবদ্য দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন কুবরিক। সর্বকালের সেরা পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিক এবং তাঁর মাস্টারপিস সর্বকালের সেরা পলিটিক্যাল স্যাট্যায়ার মুভি অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ। আর কিছু বলার নেই।
আইএমডিবি রেটিং: ৮.৪
ব্যক্তিগত রেটিং: ৯.৫
-------
সেক্স এন্ড লুসিয়া
মুভিটি হালকা মেজাজে দেখলে উপভোগ্য এডাল্ট মুভি অথবা আপনি চাইলেই ঢুকে যেতে পারেন মুভির চরিত্র এবং দ্বীপের শূণ্যতার হা এর ভেতর। মুভির পরিচালক জুলিও মোডেম - তার মুভির প্রিয় বিষয় যৌনতা। রুম ইন রোম যারা দেখেছেন তাদের মোডেমের পার্লস ভালো বুঝার কথা। যৌনতা - মৌনতা, সুর, দৃশ্যের বুনন এমনভাবে গ্রাস করে নেয় মনে হবে পুরো মুভি জুড়ে না বলা একাকীত্ব, নির্জনতা হাতছানি দিচ্ছে।
প্রধান চরিত্র লুসিয়াকে অনেকদিন মনে থাকবে, যৌন দৃশ্যে তার এক্সপ্রেশন কিংবা A ray of sunshine, brought your love to me এই সংলাপের ভেতর দিয়ে তার অনুভুতি স্রেফ যৌননির্ভর না হয়ে অ্যাবসার্ড হয়ে উঠে যেন শরীর থেকে অশরীরী অনুভুতি টের পাওয়া যায়।
আরেকটি চরিত্র এলেনার সাথে একদম অপরিচিত লরেঞ্জের যৌনতা, কিংবা তাঁর ছয় বছর পরে লুসিয়ার সাথে লরেঞ্জের পরিচয়, একই সাথে এলেনার গর্ভে জন্মগ্রহণ করা বাচ্চার বেবি সিটার ভ্যালেনার সাথে লরেঞ্জের সিডিউসিং কথোপকথন এবং পরবর্বীতে ডেটে রাজি হওয়া। সেই রাতে সন্তানের চেয়ে যৌনতা বড় হয়ে উঠে লরেঞ্জের কাছে এবং ঐ রাতেই ভ্যালেনার কুকুর লরেঞ্জের কন্যা লুনাকে মেরে ফেলার দৃশ্যায়ন নিয়ে ভাবলে লরেঞ্জের চরিত্রের বিরাট শূণ্যতা বুঝা যায়। পুরো মুভিতে এস্কেইপিজম এর খোলা সমুদ্র টের পাওয়া যায় [এলানার মেয়ের মৃত্যুর দৃশ্যতে সমুদ্রের তলদেশে মারমেইডের কাছে চলে যাওয়ার সিম্বলিক দৃশ্য এই ধারণাকে স্পষ্ট করে তুলে] পুরুষ উপন্যাসিক লরেঞ্জ চরিত্রের বৈশিষ্ট্যও এরকম।
এইসব ঘটনা উপন্যাস আকারে লিখতে থাকে লরেঞ্জ। উপন্যাস লিখা শেষ করতে গিয়ে ব্যক্তি এবং লেখকস্বত্ত্বার টানাপোড়ন চরিত্রের ভেতরে এস্কেইপিজম নির্দেশ করে। পুরো মুভিতে চরিত্রগুলোর বাইরে তেমন কাউকে দেখা যায় না।
মোডেম মুভি সম্পর্কে বলেছেন - সিনেমার প্লটে গর্ত আছে, "it has a hole in the middle and then starts over again". অর্থ্যাৎ মুভি একটি সমাপ্তিতে শেষ হলেও চরিত্রগুলোর কাছে অনেকগুলো বিকল্প সমাপ্তি থাকে। আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে পুরো দ্বীপে দেখা যায় এলেনা একা, রাস্তাঘাট নির্জন, দ্বীপের লাইটহাউজ একা - দ্বীপে অন্য কারো অস্তিত্ব তেমন চোখে পড়ে না। যেন যথেচ্ছা যৌনতার ভেতরেও প্রতিটা চরিত্র নিজেদের কাছে একা এবং শূন্য হতে থাকে। এইরকম চুড়ান্ত নৈরাজ্যকর অনুভুতি ছুড়ে দেয় এই মুভি দর্শকদের দিকে।
ছন্দপতন আবারও - সমাপ্তিতে যে হ্যাপি ইন্ডিং দেখানো হয় সেক্ষেত্রে দর্শক ভাবতে পারে মুভি অন্যভাবেও সমাপ্তি হতে পারতো। মোডেমের ডায়লগটাই বিভ্রমিক মনোলগ হয়ে ফিরে আসে "it has a hole in the middle and then starts over again"।
যারা দেখেননি দেখে ফেলুন মুভিটি।
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৪
আমার রেটিং: ৮.২
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন