শোয়ার সময় তাকবীর ও তাসবীহ পাঠ করাঃ
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি চাকর চাইলে তিনি বললেন: ‘আমি কি তোমাদের দু’জনকে এমন জিনিস বলে দেব না, যা তোমাদের জন্য চাকরের চেয়েও উত্তম? তোমরা যখন বিছানায় শুতে যাবে অথবা শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার সুবহান আল্লাহ্ এবং ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য চাকরের চেয়েও উত্তম।
[বুখারী: ৬৩১৮, মুসলিম: ৬৯১৫]
ঘুমের পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়াঃ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, “নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে শয্যা গ্রহণের সময় তালুদ্বয় একত্রিত করে তাতে ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা আল-ইখলাস) এবং ‘ক্বুল ‘আউযুবি রব্বিল ফালাক্ব’ (সূরা আল-ফালাক) এবং ‘ক্বুল আ’উযু বিরব্বিন্ নাস’ (সূরা আন-নাস) পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর হাতদ্বয় দ্বারা শরীরের যতদূর পর্যন্ত বুলানো সম্ভব হত, ততদূর পর্যন্ত বুলিয়ে নিতেন। স্বীয় মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের দিক থেকে আরম্ভ করতেন। এভাবে তিনি তিন বার করতেন।” [বুখারী: ৫০১৭]
অযূ অবস্থায় শয্যা গ্রহণ করাঃ
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন: “যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন সালাতের ন্যায় অযূ করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে।”
[বুখারী: ৬৩১১, মুসলিম: ৬৮৮২]
=========================================
দান-সদকা সম্পর্কে:
১৮৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! আল্লাহর জন্য তুমি ব্যয় কর, তোমার জন্য ব্যয় করা হবে। কারণ আল্লাহর দণি হাত পরিপূর্ণ ও দানশীল, দিনরাতের দান ওর কিছুই হ্রাস করতে পারে না।”
দারুকুতনী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
১৮৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন, “মোবারক ও মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই এটা এরূপ একটি ধর্ম, যা আমি আমার নিজের জন্য পছন্দ করি, আর কিছু কখনও এর শুদ্ধি করতে পারবে না। এতএব যত দিন তোমরা ওর সাথে সংশ্লিষ্ট থাক ততদিন ওকে দানশীলতা ও সচ্চরিত্রতা দ্বারা সম্মান দাও।”
ইবনু আসাকির এ হাদীসটি হযরত জাবির (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৮৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার উদ্দেশ্যে ব্যয়কারী আমাকে ঋণ দিয়ে থাকে। আর নামায আদায়কারী আমার সাথে গোপনে বাক্যালাপ করে।”
এ হাদীসটি দায়লামী সংগ্রহ করেছেন।
১৮৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তোমার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে ফেলা কল্যানকর। আর তা সঞ্চিত রাখা তোমার জন্য অমঙ্গলজনক। তোমরা জীবিকার সমপরিমাণ (তোমার হাতে) রাখার জন্য তুমি নিন্দনীয় নও। নিজ পরিবারের লোকজন থেকে ব্যয় করা শুরু কর। নিচের হাত থেকে উপরের হাত উত্তম।”
বায়হাকী এ হাদিসটি হযরত আবূ উমামা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৮৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেছেন, “তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, তোমার জন্য ব্যয় করা হবে।”
বুখারী ও মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- অতঃপর হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের জন্য আগে ভাগে কিছু পাঠাও। অতঃপর তার প্রতিপালক নিশ্চয় তাকে বলবেন, “তার কোন মধ্যস্থ ব্যক্তি থাকবে না, যে তার সম্মুখে মধ্যস্থতা করবে। তোমার কাছে কি কোন রাসূল আসে নি, যে তোমার কাছে আমার বার্তা পৌছে দিয়েছে? আর তোমাকে আমি কি কোন সম্পদ দেইনি এবং তোমার উপর অনুগ্রহ করিনি? অতঃপর তুমি তোমার নিজের জন্য কি অগ্রিম পাঠিয়েছি? তখন সে নিজের ডানে ও বামে তাকাতে থাকবে, কিন্তু কিছুই দেখতে পাবে না। অতঃপর সে তার সামনের দিকে তাকাবে কিন্তু তখন সে দোযখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। অতএব যে পারে সে যেন নিজেকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করে, যদিও তা এক টুকরো খেজুরের বিনিময়ে হোক, সে যেন নিশ্চয় তা করে, আর যার কাছে তাও নেই, সে মধুর কথা ধারা তা করুক। কারণ তা দিয়েও পূণ্যের প্রতিদান দশগুন থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত দেয়া হবে। আর আল্লাহর রাসূলের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”
হান্নাদ এ হাদীসটি হযরত আবূ সালমার ইবনে আবদুর ইবনে আওফ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “দানকারী আমার (বন্ধু) এবং আমি তার (বন্ধু)”।
এ হাদীসটি দায়লামী সংগ্রহ করেছেন।
১৯২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ নিজে হাতে চিরস্থায়ী জান্নাত ‘আদন’ সৃষ্টি করলেন। তাতে এমন বস্তু সৃষ্টি করলেন, যা কোন চোখ দেখেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে যার কল্পনা জাগ্রত হয়নি। অতঃপর তিনি ওটাকে বললেন, “কথা বল” অনন্তর তা বলল, “নিশ্চয়ই বিশ্বাসীগণ সফলকাম হয়েছে।” অনন্তর তিনি বললেন, “তোমার নিকটে কোন বখীল (কৃপণ) আমার প্রতিবেশী হতে পারবে না।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ্ চির নিবাস বেহেশতে নিজ হাতে এক এক বৃক্ষ রোপন করলেন এবং তা সুসজ্জিত করলেন এবং ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন। সে মতে তারা তাতে নির্ঝরণী প্রবাহিত করল এবং গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ফলাদী ধরল। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তার উজ্জ্বল্য ও সৌন্দর্য্যের প্রতি তাকিয়ে বললেন, “আমার মর্যাদা ও আরশের উপরে প্রতিষ্ঠিত আমার উচ্চ অবস্থানের কসম! তোমার নিকটে কোন বখীল(কৃপণ) লোক আমার প্রতিবেশী হতে পারবে না।”
ইবনু নাজ্জার এ হাদীসটি হযরত আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯৪. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- জান্নাত বলল, “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি সৌন্দর্যমন্ডিত করেছ এবং আমার ভিত্তিস্তম্ভ গুলো সুন্দর করেছ।” অতঃপর আল্লাহ্ তার প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “আমি তোমার ভিত্তিসমূহকে হাসান, হুসাইন ও পূণ্যবান আনসারদের দ্বারা সুশোভিত করেছি। আমার ইযযত ও মহত্বের কসম! তোমার মধ্যে কোন রিয়াকার ও বখীল প্রবেশ করবে না।”
আবূ মূসা মুদায়নী এ হাদীসটি হযরত আব্বাস ইবনে বুযাই আযদীরী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:২৯